E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

‘ছোট ছড়ায় বড় কথা’ শেখ হাসিনার ছড়া

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২৭ ১৭:৩১:০৪
‘ছোট ছড়ায় বড় কথা’ শেখ হাসিনার ছড়া

আবদুল হামিদ মাহবুব


আমার নতুন বই ‘ছোট ছড়ায় বড় কথা’ অমর একুশের বাংলা একাডেমির গ্রন্থমেলায় এসেছে। আমার এই বই নিয়েই কয়েক কথা এখানে বলছি। বইখানা প্রকাশ করেছে কোরাস প্রকাশনী।

বইয়ের সকল ছড়া লিখেছি একজনকে উদ্দেশ্য করে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। এখন তাকে এদেশের সকল মানুষ বলে ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা’। তিনি একটানা প্রায় ষোল বছর এই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশ শাসন করেছেন। তার আগেও পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এবার একটানা প্রায় ষোল বছর। বার বার নির্বাচনের নামে কলাকৌশল করে ক্ষমতা ধরে বসে ছিলেন। তার এই শাসনকালে দেশের মানুষ এতোটাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো যে, তার নামের আগে ‘ফ্যাসিস্ট’ বিশেষণ বসে গেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে ভিনদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আমি বলি তার কাছ থেকে ছাত্র-জনতা ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। এই অভ্যুত্থান বাংলাদেশে নাম পেয়েছে ‘দুই হাজার চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান’ হিসাবে। ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট’ ২০২৪) ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটে, তিনি পলায়ন করেন।

অভ্যুত্থানের আন্দোলন যখন শুরু হয়েছিলো, তখন থেকেই আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’-এ গদ্যে পদ্যে ছড়ায় লিখতে থাকি। আন্দোলনকারীদের একাংশ যোগাযোগ করে আমার পরামর্শের কিছু গ্রহণ করেছে, কিছু করেনি।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পলায়নের পরও আমি লেখা অব্যাহত রাখি। এক সময় আমি ফেসবুকে ‘ছোট ছড়ায় বড় কথা’ শিরোনামে ছড়া শুরু করলে দুটি ছড়া প্রচার করার পর আমার ঘনিষ্ঠ একজন (তিনি আওয়ামী লীগ করেন না, শেখ হাসিনাকেও ভালো পান না, তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালো পান বলে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানও মেনে নিতে পারছেন না) বলেন, ‘তুমি তো ছোট ছড়া লিখছো না। তুমি ছোট মুখে বড়ো বড়ো কথা বলছো। তার পরদিন থেকে আমি ছোট শব্দের পর ‘মুখে’ শব্দটি বসিয়ে সেটা কেটে ছড়া পোস্ট দিতে শুরু করলাম।

এখন দেখলাম ছড়াগুলোর বক্তব্য আমার ঘনিষ্ঠ মহলের আরো অনেকের গায়ে লাগছে। তাদের গা জ্বলায় আমি মজা পাচ্ছিলাম। কিন্তু নানা ভাবে তারা চেষ্টা করছিলেন আমার এই ‘বারোমাসী’ (তাদের ভাষায়) বন্ধ হোক। এর মধ্যে ছেলে ও বউমাকে দেখতে আমাকে কয়েক দিনের জন্য আমেরিকা যেতে হয়। দেশের বাইরে যাবার আগে একই শিরোনামে আমার অর্ধশত ছড়া লেখা হয়ে গেছে। এই অর্ধশত ছড়া দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিলাম। সব ক’টি একসাথে পেয়ে হিমু আহমদ (সায়েক আহমদ) এই ছড়াগুলো মূল্যায়ন করেই বিশাল এক প্রবন্ধ লিখে, সেটা আবার ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ছেপে আমার কাছে পাঠালো। লেখার মাধ্যমে দাবী জানালো, ছড়াগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশের জন্য।

কিছুদিন পর আহমদ সিরাজ (যাকে আমরা সমাজ চিন্তক হিসাবে গণ্য করি) এই ছড়াগুলো নিয়ে আরেকটি বেশ বড় লেখা লিখে ফেললেন। আমি এই দুই লেখকের দুটো লেখাই এই গ্রন্থে আত্তীকরণ করে নিয়েছি। সেটা অবশ্য তাদের অনুমতি নিয়ে করেছি। আমারও মনে হলো সময়কে ধরে রাখার জন্য ছড়াগুলো গ্রন্থভূক্ত হয়ে থাকা প্রয়োজন। সেকারণে এই গ্রন্থের প্রকাশ। কোরাস প্রকাশনীর প্রকাশক মুজাহিদ আহমদের কপালে কি আছে আমি সেটা জানি না! সে সাহস নিয়ে এই গ্রন্থ প্রকাশে এগিয়ে আসায় তার প্রতি আমার ভালোবাসা ও আগাম সহমর্মিতা রাখলাম!

আগামী একশত বছর পর পৃথিবীতে এই সময়ের মানুষ হাতে গোনা কয়েকজন থাকলেও থাকতে পারেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমার এই ছড়াগ্রন্থ কোথাও না কোথাও এক দু কপি থেকে যাবে। তখন কেউ যদি উল্টেপাল্টে দেখে সে যেনো বুঝতে পারে কি জন্য এই ছড়াগুলো লেখা হয়েছিলো। গ্রন্থভূক্ত দুটি আলোচনাও (প্রবন্ধ) শতবছর পরের পাঠকে লেখা বুঝায় সহায়তা করবে।

হ্যাঁ পাঠক, আপনারা যারা এইসময়ে বইখানা পড়বেন, ‘পড়ার পরে’ আপনারা আনন্দ পাবেন। আর যারা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে এখনও ফিরে চাচ্ছেন, তারা আমার উপর বিরক্ত হবেন, আমাকে চিনে রাখবেন। সুযোগ আসলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মতো আমাকেও গুম কিংবা খুনও করতে পারেন। আমি সব জেনেও ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিপক্ষে, তবে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে নিয়ে আছি। থাকবোও। কারণ আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যারা অস্বীকার করে তারা বাংলাদেশকেই অস্বীকার করে বলে আমি মনে করি।

লেখক: লেখক ও ছড়াকার।

পাঠকের মতামত:

০৬ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test