দেশের মানুষ শান্তি চায়, নির্বিঘ্নে ঘুমাতে চায়
-1.jpg)
মীর আব্দুল আলীম
বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ জনগণের উদ্বেগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতিদিনের সংবাদপত্র, টেলিভিশন, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবরে খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, অপহরণ, সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা ও দুর্নীতির ঘটনা উঠে আসছে, যা নাগরিকদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক প্রভাব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসহযোগিতা, এবং বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এর ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি গভীরতর হচ্ছে এবং সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অপরাধীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে নানাভাবে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের অনুগত কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অপরাধীদের রক্ষা করছে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্বাধীনভাবে কাজ করা কঠিন করে তুলছে। প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের সঙ্গে আঁতাত করছে, ফলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। পুলিশের মধ্যে ঘুষ ও দুর্নীতির সংস্কৃতি বহুদিন ধরেই প্রচলিত, যার ফলে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেবল সাধারণ জনগণের উপর কঠোর হচ্ছে, কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা দুর্বৃত্তরা অবাধে অপরাধ চালিয়ে যেতে পারছে।
বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা এবং দুর্বল প্রসিকিউশন ব্যবস্থা অপরাধীদের বিচার থেকে রেহাই পাওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা, দুর্বল তদন্ত, স্বাক্ষীদের নিরাপত্তাহীনতা, এবং প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের কারণে অপরাধীরা সহজেই জামিন পেয়ে যাচ্ছে অথবা মামলা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। অনেক ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার না পেয়ে হতোদ্যম হয়ে যাচ্ছেন, ফলে অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে চলেছে। এমন পরিস্থিতি জনমনে প্রচণ্ড হতাশা তৈরি করছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতি জনগণের আস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, প্রশাসনিক দুর্বলতা দূর করা, পুলিশ বাহিনীকে দুর্নীতিমুক্ত করা, এবং বিচার ব্যবস্থার সংস্কার করা জরুরি। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, স্বাধীন ও কার্যকর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা নিরপেক্ষভাবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। একইসঙ্গে প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমন কৌশল, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, স্বচ্ছ ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সরকারের উচিত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় মনোভাব নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে জনগণের আস্থা ফিরে আসে এবং সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
১. মুখ চিনে নয়, সর্বদলীয় অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা জরুরি: অপরাধ দমন করতে হলে অপরাধীর পরিচয় বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নয়, অপরাধকেই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসেবে দেখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হলো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাত দেখানো নয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, অনেক সময় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা কিংবা বিরোধী দলের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। এটি বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় এবং অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বাড়িয়ে তোলে।
রাজনৈতিক প্রভাব যখন অপরাধীদের রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়, তখন সাধারণ জনগণের মধ্যে বিচারব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হয়। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তারা আরও বেশি সাহসী হয়ে ওঠে এবং সমাজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। শুধু সাধারণ জনগণ নয়, অনেক সময় সৎ ও নীতিবান প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা পুলিশ সদস্যরাও চাপে পড়ে যান এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। ফলে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, খুন-গুমসহ নানা অপরাধ দিন দিন বেড়ে যায়। অপরাধ দমনে দলীয় পরিচয় যেন অন্তরায় না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আইন সবার জন্য সমান-এ নীতি কার্যকর করতে হলে অপরাধী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয় পাবে না, ফলে অপরাধ কমবে এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও আন্তরিক হতে হবে এবং নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই একটি সুশৃঙ্খল ও অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
২. রাজনৈতিক তদবির বন্ধ করতে হবে: বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ একটি গুরুতর সমস্যা, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষতা নষ্ট করে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যখন অপরাধীদের পক্ষে রাজনৈতিক তদবির করা হয়, তখন তারা সহজেই শাস্তি এড়ানোর সুযোগ পায়। এটি আইনের শাসনের পরিপন্থী এবং সমাজে অপরাধপ্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। আইনের চোখে সবাই সমান হওয়া উচিত, কিন্তু রাজনৈতিক চাপ ও তদবিরের কারণে অনেক অপরাধী বিচারের বাইরে থেকে যায়, যা বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করে।
রাজনৈতিক তদবিরের কারণে অনেক সময় প্রশাসন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হয়, ফলে তারা অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেন না। এতে অপরাধীরা আরও সাহসী হয়ে ওঠে এবং সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়। বিশেষ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশ্রয়ে থাকা দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীরা অপরাধ করেও আইনের আওতার বাইরে থেকে যায়, যা আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ কমিয়ে দেয়। সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা। অপরাধীদের রক্ষার জন্য রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করলে তা সামগ্রিকভাবে সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অপরাধীদের আশ্রয় না দেওয়া। বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত রাখলেই একটি সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
৩. ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে হবে : দেশে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যা সমাজ ও দেশের জন্য একটি বড় হুমকি। অপরাধীরা ধরা না পড়লে তারা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং নতুন নতুন অপরাধের জন্ম দেয়। বিশেষ করে মাদক ব্যবসা সমাজকে ভেতর থেকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, কারণ মাদকের কবলে পড়ে তরুণ সমাজ বিপথগামী হচ্ছে। অথচ অনেক সময় দেখা যায়, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রভাবশালী অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা অপরাধীরা আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে যায়, যা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কঠোর অভিযান চালানো জরুরি, যাতে আমাদের যুবসমাজ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়।
সন্ত্রাসীদের দমন করতে হলে পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে এবং অপরাধীদের রক্ষার জন্য কোনো ধরনের রাজনৈতিক তদবির করা যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরতে সক্রিয় নয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিচারব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হয় এবং অপরাধীরা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সন্ত্রাস, মাদক ও অপরাধ দমনে নিরপেক্ষ ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে অন্যরা ভয় পায় এবং এই অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হয়। একইভাবে, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে, যাতে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপমুক্ত রেখে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। কঠোর অভিযান ও সুষ্ঠু বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমেই একটি নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
৪. পুলিশ প্রশাসনের ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে: পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পুলিশের ভেতরে ঘুষ ও দুর্নীতির চক্র গড়ে উঠেছে, যা বিচারব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলছে। অপরাধীরা টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে যায়, আবার অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি পুলিশের ঘুষ-বাণিজ্যের শিকার হয়ে মামলায় জড়িয়ে পড়েন। এতে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ বাধাগ্রস্ত হয় এবং আইনের প্রতি জনগণের আস্থা কমে যায়। বিশেষত, অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতে দেখা যায় কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যকে। তারা বড় মাফিয়া চক্র, ভূমিদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, এমনকি সন্ত্রাসীদের রক্ষা করতে ঘুষ গ্রহণ করে। ফলে প্রকৃত অপরাধীরা সহজেই আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়, আর অপরাধ সমাজে আরও বৃদ্ধি পায়। একদিকে পুলিশ প্রশাসনের দুর্নীতি অপরাধীদের আশ্রয় দেয়, অন্যদিকে নিরপরাধ মানুষ মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হলে পুলিশ বাহিনীর ভেতর থেকে ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ সদস্যদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, যেন ক্ষমতার অপব্যবহার কমে আসে।
ঘুষ গ্রহণকারী ও অপরাধীদের রক্ষাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা জরুরি, যাতে কোনো ধরনের প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ ছাড়া প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দেওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো দরকার। থানাগুলোতে ক্যামেরা স্থাপন, অনলাইন এফআইআর ব্যবস্থা চালু করা এবং পুলিশের আর্থিক লেনদেনের ওপর কঠোর নজরদারি রাখা যেতে পারে। পাশাপাশি জনগণের অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি নিরপেক্ষ ও কার্যকর অভিযোগ ব্যবস্থাপনা চালু করতে হবে, যেখানে যে কোনো নাগরিক পুলিশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারবেন। যদি পুলিশ প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত হয়, তাহলে অপরাধ দমন করা সহজ হবে, বিচারব্যবস্থা আরও কার্যকর হবে, এবং সাধারণ মানুষ পুলিশের প্রতি আস্থা ফিরে পাবে। তাই এখনই সময় পুলিশের অভ্যন্তরীণ ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার, যাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা স্বচ্ছ ও কার্যকর হয়ে উঠে।
৫. মামলা বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে: বর্তমানে মামলাকে একটি ব্যবসার মতো ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে অর্থের বিনিময়ে মামলা দায়ের, নাম অন্তর্ভুক্তি বা বাদ দেওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটে। ফলে বিচারব্যবস্থা ন্যায়ের পরিবর্তে প্রভাবশালীদের হাতিয়ার হয়ে উঠছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি করা, আবার প্রকৃত অপরাধীদের টাকা খাইয়ে মামলা থেকে রেহাই দেওয়া—এই দুই ধরনের দুর্নীতি সমাজের ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
অনেক সময় প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলতে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়, যা ব্যক্তিগত শত্রুতা বা প্রতিশোধ গ্রহণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিছু অসাধু ব্যক্তি, এমনকি কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও আইনজীবী এই ধরনের মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ফলে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হয়, আর প্রকৃত অপরাধীরা অর্থের বিনিময়ে দায়মুক্তি পেয়ে যায়। অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও দেখা যায়, টাকা দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মামলাটি দুর্বল করে দেওয়া হয় বা একেবারেই নিষ্পত্তি করে ফেলা হয়। এতে প্রকৃত অপরাধীরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় এবং তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিচারব্যবস্থায় এই ধরনের দুর্নীতি সমাজে অন্যায় ও অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মামলাবাণিজ্য বন্ধ করতে হলে প্রথমেই পুলিশ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। মামলা গ্রহণের প্রতিটি ধাপ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা, থানায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা এবং অনলাইন অভিযোগ ব্যবস্থার প্রচলন করা জরুরি। কোনো মামলা গ্রহণ বা বাতিলের ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের পর্যবেক্ষণ থাকতে হবে, যাতে অর্থ বা প্রভাবের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করা না যায়।
এছাড়া, মিথ্যা মামলা দায়েরকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে, যাতে কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে বা প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা দায়ের করতে না পারে। একই সঙ্গে, যারা অর্থের বিনিময়ে প্রকৃত অপরাধীদের মামলা থেকে রেহাই দেয়, তাদের বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যদি মামলার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায় এবং বিচারব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, এবং অপরাধীরা শাস্তি এড়ানোর পথ খুঁজে পাবে না। তাই এখনই সময় মামলাবাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার, যাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা কার্যকর হয় এবং সাধারণ মানুষ নিরাপদ বোধ করে।
৬. নিরপেক্ষভাবে সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করা: দেশের প্রতিটি এলাকা থেকে সন্ত্রাসীদের তথ্য সংগ্রহ করে নিরপেক্ষভাবে তালিকা তৈরি করতে হবে। কোনো নিরীহ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়, আবার প্রকৃত অপরাধীরা যেন ছাড় না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া: বিভিন্ন স্থানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট বেড়ে চলেছে। এসব অপরাধের পেছনে বেশিরভাগ সময় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা অপরাধীরা জড়িত থাকে। পুলিশকে এসব অপরাধ দমনে আরও সক্রিয় ও কঠোর হতে হবে।
৮. ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করা: মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে পারলে অপরাধীরা ভয় পাবে এবং অপরাধ প্রবণতা কমবে।
৯. পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কার্যক্রম জোরদার করা: দেশে কিছু অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো যেতে পারে। সন্ত্রাসীদের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা দরকার।
১০. আদালতে ঘুষ বন্ধ করতে হবে: বিচারব্যবস্থায় ঘুষ বন্ধ করা না গেলে প্রকৃত অপরাধীরা জামিন নিয়ে পুনরায় অপরাধে জড়িত হবে। এজন্য বিচারকদেরও সতর্ক থাকতে হবে এবং আইন মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে আদালতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় না দেওয়া: প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব রয়েছে সমাজে শান্তি বজায় রাখা। কোনো দল যদি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, তবে তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলবে। দলগুলোকে এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
দেশের মানুষ শান্তি চায়, নির্বিঘ্নে ঘুমাতে চায়। জনগণের প্রধান চাহিদা হলো নিরাপদ জীবনযাপন, যেখানে তারা নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারবে এবং ভয়ভীতিহীনভাবে জীবন যাপন করতে পারবে। কিন্তু যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যায়, তাহলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, এবং তারা মানসিকভাবে চরম উদ্বেগের মধ্যে পড়ে যায়। মানুষ রাতের বেলা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চায়, পরিবার নিয়ে স্বস্তিতে থাকতে চায়, কিন্তু যদি অপরাধ বৃদ্ধি পায়, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অপরাধ বেড়ে যায়, তাহলে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়। এজন্য সরকারকে জননিরাপত্তার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, বরং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করাও জরুরি। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ আস্থার সঙ্গে তাদের জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে পারে। একমাত্র তখনই জনগণ শান্তি পাবে, নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে এবং একটি সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে উঠবে।
বর্তমান অন্তবতিকালনি সরকারের করণীয়: বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত। প্রশাসন, বিশেষ করে পুলিশ ও বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি, যাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সাধারণ জনগণ সুবিচার পায়। সরকারকে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে এবং সন্ত্রাস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অপরাধ দমন করতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারের উচিত স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গঠন করা, যাতে সাধারণ মানুষ সরকারের কার্যক্রমের প্রতি আস্থাশীল হয়। পাশাপাশি, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর দ্রুত ও কার্যকর তদন্ত করা উচিত। শুধুমাত্র আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করলেই একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা শুধু সরকারের নয়, পুরো সমাজের দায়িত্ব। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচারব্যবস্থা, পুলিশের নিরপেক্ষতা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করলে অপরাধ কমানো সম্ভব। সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলাদেশ একটি নিরাপদ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
লেখক : সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।
পাঠকের মতামত:
- ভেড়ামারায় পাঁচটি ইটভাটা বন্ধ করলো উপজেলা প্রশাসন
- কুষ্টিয়ায় ট্রেন থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকার এলএসডি ও জুয়েলারি উদ্ধার
- বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সকল বেতার কেন্দ্র থেকে রিলে করার দাবি
- দিনাজপুরে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
- ‘সরকারি গাড়ি উল্টোপথে গেলেই মামলা’
- ধামরাইয়ে শতাধিক ইটভাটা মালিক-শ্রমিকদের মানববন্ধন
- মাদারীপুরে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
- কুষ্টিয়া সীমান্তে আটক ২ ভারতীয় নাগরিককে ফেরত দিল বিজিবি
- পিঠ বাঁচাতে মানববন্ধন করেছে হত্যা, অস্ত্র ও ডাকাতি মামলার পলাতক আসামিরা
- বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণ না করেই ফিরে গেলেন এসিল্যান্ড
- যুুবদল নেতার বিরুদ্ধে টিসিবি পণ্য ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
- বাজার মনিটরিং ও ফুটপাত নিয়ন্ত্রণে ডিএমপির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযান
- নগরকান্দায় প্রতি ডজন ডিমের দাম ১১৫ টাকা
- মিয়ানমারে ক্ষুদ্র মডিউলার রিয়্যাক্টর স্থাপনে রসাটমের সঙ্গে চুক্তি
- ঈশ্বরদীতে বসতবাড়িতে অগ্নিকাণ্ড, আগুনে পুড়ে গৃহবধূর মৃত্যু
- স্ত্রীকে আনতে গিয়ে পিটুনির শিকার স্বামী, খেলনা পিস্তলসহ উদ্ধার করলো পুলিশ
- মানিক লাল ঘোষ’র কবিতা
- দেশে কন্ট্যাক্টলেস পেমেন্ট বেড়েছে দ্বিগুণ
- বাগেরহাটে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি গ্রেফতার
- ‘শেখ হাসিনার বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই’
- ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে মিলিয়নিয়ার হলেন ফরিদপুরের কলেজ শিক্ষার্থী রাসেল ফকির
- নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আনিসুল-শাজাহানসহ ১৬ জন
- রমজানে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখার নতুন নির্দেশনা
- সালথায় আলু চাষ করে লাভবান কলেজ শিক্ষার্থী
- ফল চুরির অপবাদে মাদরাসা ছাত্রকে নির্যাতন
- ‘এত বড় দায়িত্বের আমানতকে যেন খেয়ানত না করি’
- জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা
- মহা শিবরাত্রির ইতিহাস ও জগতের মঙ্গল কামনা
- ‘ছ্যাঁকা কেবল তো শুরু, সারাজীবনই দেব’
- ভারতের ৪০ বছরের রেকর্ড ভাঙলো যুক্তরাষ্ট্র
- ঝালকাঠিতে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালিত
- ‘কমিউনিস্ট পার্টিকে বেআইনী রাখা চলবে না’
- ড. ইউনূস কি জনগণকে পাশে পাবেন না?
- বাংলাদেশের সামনে এখন অনেক কাজ
- খালের টেকসই উন্নয়নে সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক
- নির্ভার, তবুও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ইকবাল হোসেন অপু
- তুমি যে সেনা কর্মকর্তার ভাঙা ঘর জোড়া লাগিয়েছিলে, সেই তোমাকে সপরিবারে খুনের উস্কানিদাতা! কী কঠিন হৃদয় তার! এই জন্যই বুঝি তিনি সানগ্লাসে চোখ ঢেকে রাখতেন; চোখ দেখলেও নাকি খুনী চেনা যায়!
- ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদনে রসাটমের নতুন প্রযুক্তি
- পর্দা নামলো বইমেলার
- রমজানে অফিসের নতুন সময়সূচি
- আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের মঞ্চে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা
- স্যামসাং নিয়ে এলো দেশের প্রথম ওএলইডি টিভি এস৯৫ডি
- গুণে ভরা ডাল, কমাবে ওজনও
- নিরাপত্তার স্বার্থে সচিবালয়ের সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ
- ভক্ত সমাগমে আনন্দ মুখর মজলিশপুর সেবাশ্রম