বিদেশে কষ্ট আর দেশে অবহেলা, প্রবাসীদের নির্মম বাস্তবতা
![বিদেশে কষ্ট আর দেশে অবহেলা, প্রবাসীদের নির্মম বাস্তবতা](https://www.u71news.com/article_images/2025/02/11/ALIM--sk-(1)-1.jpg)
মীর আব্দুল আলীম
“যে হাতগুলো দেশের অর্থনীতি বাঁচায়, সে হাতগুলো অবহেলায় কেন ভেঙে পড়ে?” প্রবাসীরা কি শুধুই টাকার মেশিন? তাঁরা দেশের জন্য কি কেবল রেমিট্যান্স পাঠানোর যন্ত্র? কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত তাঁদের অর্থে পরিবার বাঁচে, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে, অথচ নিজেরাই অবহেলিত। কেন? দেশের বাইরে দিনের পর দিন গাধার মতো খেটে অর্থ উপার্জন করেন, কিন্তু শেষ বয়সে ফিরে এসে অনেকে পান না মাথা গোঁজার ঠাঁই, পান না পরিবার-সমাজের সম্মান। এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও তারা বৈষম্যের শিকার হন।
প্রবাসীদের পরিশ্রম, ত্যাগ ও বঞ্চনার গল্পগুলো আমাদের ভাবিয়ে তোলে। আমাদের সচেতন হতে হবে, যাতে তারা শুধু রেমিট্যান্সের যন্ত্র হয়ে না থাকেন, বরং যথাযথ সম্মান পান। প্রবাসীরা উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছাড়েন, কিন্তু তাদের বাস্তবতা ভয়াবহ। প্রতিদিন ১২-১৬ ঘণ্টা খেটে মাটির সঙ্গে মিশে থাকেন। নির্মাণশ্রমিক, কারখানা শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ড্রাইভার কিংবা অফিস সহকারী—যে কাজই হোক না কেন, অধিকাংশই শারীরিক শ্রমের কাজ করেন। আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র—যেখানেই থাকুন না কেন, প্রবাসীদের জীবন সংগ্রামের এক ভয়ানক চিত্র।অনেকেই কর্মস্থলে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন। শ্রম আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা, দূতাবাসগুলোর উদাসীনতা এবং বিদেশি নিয়োগদাতাদের শোষণের কারণে ন্যায্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত হন। তবুও তারা সব সহ্য করেন, কারণ পরিবার বাঁচাতে হবে, স্বজনদের মুখে হাসি ফোটাতে হবে।
পরিবারের সুখের জন্যই তারা সর্বস্ব ত্যাগ করেন। একজন প্রবাসী বিদেশে যান পরিবারের জন্য। তিনি সংসারের প্রধান চালিকা শক্তি হয়ে ওঠেন। বাবার চিকিৎসা, ভাই-বোনের পড়াশোনা, ঘরবাড়ির উন্নয়ন—সব খরচ একাই বহন করেন। ঈদ, পূজা কিংবা বিশেষ দিনে দেশে দান-অনুদান পাঠিয়ে সবাইকে খুশি রাখেন। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো, তাদের আত্মত্যাগকে পরিবার অনেক সময় স্বাভাবিকভাবে নেয়। একজন প্রবাসী যতই অর্থ পাঠান, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা খুব কমই দেখানো হয়। অনেকে শেষ বয়সে এসে দেখেন, তার নিজের জন্য কিছুই নেই। সন্তানরা বড় হয়ে তাকে ভুলে যায়, স্ত্রী-বাবা-মাও তাকে বোঝা মনে করেন।
দেশে ফিরে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ: প্রবাসীরা যৌবন ও শ্রম বিদেশে ব্যয় করেন। কিন্তু যখন দেশে ফেরেন, তখন আর কাজের উপযুক্ত থাকেন না। চাকরির সুযোগ সীমিত, ব্যবসা করতে গেলে পুঁজি থাকে না, ফলে অনেকে হতাশায় ভোগেন। দেশে ফিরলে পরিবারও আগের মতো যত্নশীল থাকে না। তিনি তখন আর অর্থের যোগানদাতা নন, বরং বোঝা হয়ে যান। সমাজেও তখন তার গুরুত্ব কমে যায়। অথচ বিদেশে থাকাকালে তিনি ছিলেন পরিবারের ‘হিরো’।
রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি প্রবাসীদের অবদান নতুন উচ্চতায় : ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে মোট ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন, যা আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ১০.৬৬ শতাংশ বেশি। বিশেষত, জুন মাসে প্রবাসী আয় রেকর্ড ২৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে, যা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা সমপরিমাণ। ২০২৩ সালের একই মাসে এই অংক ছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ফলে একক মাস হিসেবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৫৯ শতাংশ। অবশ্য এই হিসাব বৈধ পথে পাঠানো অর্ধের পরিমান। অবৈধ পথেও আসছে অনেক অর্থ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর ছিল সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স অর্জনের বছর। ওই সময়ে প্রবাসীরা ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠান। পরবর্তী অর্থবছরে (২০২১-২২) এই অংক ২১.০৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আবার ২.৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।
এরপরও রাষ্ট্রের অবহেলা কূটনীতির দুর্বলতা: এই বিশাল অবদানের স্বীকৃতি তারা পান না কখনই। বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হন। অনেক সময় মালিকরা বেতন দেয় না, শ্রমিকরা প্রতারণার শিকার হন। কিন্তু দূতাবাসগুলো খুব কম ক্ষেত্রেই কার্যকর ভূমিকা রাখে। প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়ন, আইনগত সহায়তা, মৃতদেহ দেশে ফেরানো—এসব ক্ষেত্রেও জটিলতা চরম। সরকারকে এ বিষয়ে আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
বিমানবন্দরে অবমাননা
হৃদয় ভাঙার মুহূর্ত: একজন প্রবাসী দেশের জন্য জীবনের সেরা সময়টা বিদেশে কাটান। কিন্তু দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দরে তার যে অভিজ্ঞতা হয়, তা অপমানজনক। লাগেজ তল্লাশির নামে হয়রানি। কাস্টমস কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহার। ঘুষ না দিলে অতিরিক্ত ফি আরোপ। অপরাধীদের মতো জিজ্ঞাসাবাদ। বিদেশে বছরের পর বছর কষ্ট করে টাকা এনে দেশের ব্যাংকে জমা করেন, অথচ দেশে ফেরার সময় তার সঙ্গে এমন আচরণ করা হয় যেন তিনি অপরাধী! সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে প্রবাসীরা সম্মানজনক অভিজ্ঞতা পান।
প্রবাসীদের জন্য রাষ্ট্রের করণীয়
কূটনৈতিকভাবে প্রবাসীদের অধিকার রক্ষা করা। পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র সহজলভ্য করা। বিদেশে মৃত্যুবরণকারী প্রবাসীদের মরদেহ দেশে আনার সহজ ব্যবস্থা করা। ব্যাংকিং সুবিধা বাড়ানো ও বিনিয়োগে প্রণোদনা দেওয়া। রাষ্ট্র প্রবাসীদের জন্য আর যা করতে পারে।
১. প্রবাসীদের জন্য আইনি সহায়তা : বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যান। তবে অনেকেই আইনি জটিলতায় পড়েন, বিশেষ করে শ্রমিকরা। বিদেশে কাজের পরিবেশ, চুক্তিভঙ্গ, বেতন না পাওয়া, নির্যাতন এবং অবৈধ অভিবাসনের কারণে তারা নানা সমস্যায় পড়েন। তাই দেশে এবং বিদেশে তাদের জন্য শক্তিশালী আইনি সহায়তা ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটি (বাংলাদেশ ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং ব্যুরো) শ্রমিকদের আইনগত সহায়তা দিতে পারে। তবে বাস্তবে অনেক শ্রমিক প্রতারিত হয়, কারণ- ১. মধ্যস্থতাকারী (দালাল) ব্যবস্থার অপব্যবহার ২. স্পষ্ট আইনি পরামর্শের অভাব ৩. শ্রমিকদের আইন বিষয়ে অসচেতনতা। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে প্রবাসী আইন সহায়তা কেন্দ্র তৈরি করা হলে শ্রমিকরা দেশে থাকতেই প্রয়োজনীয় আইনি দিকনির্দেশনা পেতে পারেন।
বিদেশে আইনি সহায়তা ব্যবস্থা: বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর আইনি শাখা থাকলেও অনেক সময় তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। তাই প্রতিটি দূতাবাসে শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে। ২৪/৭ কল সাপোর্ট লাইন চালু করতে হবে, যেখানে শ্রমিকরা যেকোনো সমস্যায় ফোন করতে পারবেন। প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড গঠন করে প্রতিটি দেশে শ্রমিকদের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা দরকার। প্রবাসী শ্রমিকদের আইনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে তাদের শোষণ বন্ধ হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এই শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বৈধ অভিবাসনের সচেতনতা প্রতারণা এড়ানোর উপায়
প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশি ভালো কাজের আশায় বিদেশে যান। কিন্তু বৈধ উপায়ে না গিয়ে অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারান। অবৈধ পথে বিদেশে গেলে চাকরির নিশ্চয়তা থাকে না, আইনগত ঝামেলা হয় এবং অনেক সময় মৃত্যুও ঘটে। বৈধ অভিবাসনের ধাপ-
১. সঠিক এজেন্সি নির্বাচন: শুধুমাত্র বিএমইটি অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে কাজের প্রস্তাব নিতে হবে। পাসপোর্ট, ভিসা, মেডিকেল রিপোর্ট এবং চুক্তিপত্র নিজে যাচাই করতে হবে।
২. চাকরির চুক্তিপত্র যাচাই: চুক্তিপত্রে বেতন, কর্মঘণ্টা, ছুটি, চিকিৎসা সুবিধা ও অন্যান্য শর্ত স্পষ্ট থাকতে হবে। চাকরির কাগজপত্রে কোনো অস্পষ্টতা থাকলে দূতাবাস বা বিএমইটি অফিসে পরামর্শ নিতে হবে।
৩. প্রশিক্ষণ গ্রহণ: বিদেশ যাওয়ার আগে টিটিসি (টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার) থেকে প্রশিক্ষণ নিলে প্রতারণার আশঙ্কা কমে যায়।
৪. দালালদের এড়িয়ে চলা: ভুয়া এজেন্সি ও দালালদের এড়িয়ে সরকারি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত। ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য বেশি টাকা দাবি করা হলে তা প্রতারণার লক্ষণ। সরকারের উচিত জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ক্যাম্পেইন করা, যাতে প্রবাসীরা প্রতারণার শিকার না হন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি অনলাইন যাচাইকরণ পোর্টাল তৈরি করা দরকার, যেখানে যেকোনো ব্যক্তি যাচাই করতে পারবেন তার ভিসা এবং চাকরির তথ্য।
প্রবাসীদের জন্য রাষ্ট্রীয় পেনশন ব্যবস্থা: প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে রেমিট্যান্স পাঠান, যা দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখে। কিন্তু অনেক প্রবাসী কর্মক্ষম সময় শেষে দেশে ফিরে আর্থিক অসুবিধার সম্মুখীন হন, কারণ তাদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট পেনশন ব্যবস্থা নেই।
একটি রাষ্ট্রীয় পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হলে প্রবাসীরা প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরকার-নির্ধারিত তহবিলে জমা রাখতে পারবেন। দীর্ঘমেয়াদি এই সঞ্চয় পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা কর্মক্ষম সময় শেষে নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছালে মাসিক পেনশন সুবিধা পাবেন। এটি তাদের বার্ধক্যে আর্থিক নিশ্চয়তা দেবে এবং পরিবারকে সহায়তা করবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় একটি স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য পেনশন তহবিল গঠন করা দরকার। এ ধরনের একটি ব্যবস্থা চালু হলে অনেক প্রবাসী আগ্রহী হবেন এবং বিদেশে কর্মরতদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন: প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা জরুরি। প্রবাসীরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হন—কখনো অর্থনৈতিক সংকট, কখনো দুর্ঘটনা, কখনো আইনি জটিলতা বা অসুস্থতা। এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় একটি কল্যাণ ট্রাস্ট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রবাসীরা নির্দিষ্ট হারে অর্থ জমা দিতে পারেন, যা পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা হিসেবে বিতরণ করা হবে। যারা আর্থিক সংকটে পড়বেন বা কোনো দুর্ঘটনার শিকার হবেন, তারা এই ট্রাস্ট থেকে অনুদান পেতে পারেন। এছাড়া, দেশে ফেরার পর যদি কোনো প্রবাসী চরম অর্থসংকটে পড়েন, তাহলে এই তহবিল থেকে তাকে সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। এই কল্যাণ ট্রাস্ট সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোগের মাধ্যমে পরিচালনা করা হলে এটি আরও কার্যকর হতে পারে। স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে এটি প্রবাসীদের জন্য এক অনন্য সহায়তা হতে পারে।
পরিবারের দায়িত্ব: প্রবাসীদের পরিশ্রম শুধু পরিবারের জন্যই নয়, দেশের জন্যও। তারা পরিবারকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সার্বিক কল্যাণের দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। পরিবারের সদস্যদের উচিত: ১. অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা: প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহারের জন্য পরিকল্পিত বাজেট তৈরি করা উচিত। শুধু খরচ নয়, কিছু অর্থ সঞ্চয় করা ও বিনিয়োগ করা গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে ভবিষ্যতে তারা দেশে ফিরে টিকে থাকার সুযোগ পাবেন। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া: দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার ফলে অনেকে বিষণ্নতায় ভোগেন। তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া ও পরিবারের সিদ্ধান্তে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন: অনেক সময় দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা শুধু অর্থ পাঠানোর দিকেই মনোযোগ দেন, কিন্তু তাদের আবেগ-অনুভূতিকে তেমন গুরুত্ব দেন না। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরিবারের উচিত তাদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা। দেশে ফেরার পর পাশে থাকা: দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর দেশে ফিরে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হতে পারে। পরিবারকে উচিত তাদের পুনর্বাসনে সাহায্য করা, যাতে তারা আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।
সমাজের দায়িত্ব: প্রবাসীরা দেশের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেন, সমাজের উচিত তা যথাযথভাবে স্বীকার করা এবং তাদের যথোপযুক্ত মর্যাদা দেওয়া। সমাজের সদস্যদের উচিত সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। প্রবাসীরা শুধুমাত্র নিজেদের জন্য নয়, দেশের জন্যও পরিশ্রম করেন। তাদের অবদানকে সম্মান জানানো সমাজের কর্তব্য। প্রবাসীদের কষ্ট উপলব্ধি করা: অনেক সময় প্রবাসীদের জীবনকে আরামদায়ক মনে করা হয়, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তারা পরিবার থেকে দূরে থেকে, প্রতিকূল আবহাওয়া ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেন। এই বিষয়গুলো সমাজের বোঝা উচিত।
দেশে ফেরার পর অবহেলা না করা: অনেক প্রবাসী দেশে ফেরার পর সমাজের অবহেলার শিকার হন। তাদের সামাজিক পুনর্বাসনে সহযোগিতা করা এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। প্রবাসীদের জন্য নীতি-সহায়তা: সরকার ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রবাসীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, বিনিয়োগের সুযোগ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম নিশ্চিত করা উচিত।
প্রবাসীরা শুধু অর্থ উপার্জনের মেশিন নন। তারা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা, দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু এই প্রবাসীরা শুধু অর্থ পাঠানোর মাধ্যম নয়, তারা আমাদের পরিবার ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের কষ্ট, আত্মত্যাগ ও সংগ্রামকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। পরিবার ও সমাজের প্রতি তাদের কিছু প্রত্যাশা থাকে, যা পূরণ করা আমাদেরই কর্তব্য। তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। সরকারকে তাদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে, পরিবারকে তাদের আত্মত্যাগের মূল্য দিতে হবে, সমাজকে তাদের সম্মান জানাতে হবে। একজন প্রবাসী যেন কেবল অর্থের উৎস হয়ে না থাকেন, বরং তিনি যেন স্বীকৃতি, ভালোবাসা ও মর্যাদা পান এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।
পাঠকের মতামত:
- ‘কাশ্মীর, ইসলাম, পাকিস্তান বিপন্ন এইসব সস্তা শ্লোগানে জনগণ আর বিভ্রান্ত হবে না’
- নড়াইল জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটি স্থগিত
- রাজবাড়ীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সেনা সদস্যের মৃত্যু, আহত ২
- ‘আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে’
- সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে করণীয়' শীর্ষক সুধী সমাবেশ
- ইউনূস-মোদির দেখা হচ্ছে এপ্রিলে
- বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম কমল
- ফরিদপুরে ৯ আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
- আদানিকে বিদ্যুতের পুরোটাই দিতে বলেছে বাংলাদেশ
- জুলাই অভ্যুত্থানের নৃশংসতা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন কাল
- চিৎমরম কৃষকদলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত
- শ্যামনগরে রাস্তার জমি নিয়ে ৭ সংখ্যালঘুকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম
- কারামুক্ত বিএনপি নেতাদের সংবর্ধনা সভায় ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি
- ইট ভাটায় ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির মাটি, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ
- কুষ্টিয়ায় ট্রলির ধাক্কায় ভ্যান চালকের মৃত্যু
- সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের সাথে জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির মতবিনিময়
- বারদীতে ঢাক বাদক শত পরিবারের মানবেতর জীবন-যাপন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা
- কমিটি বাতিলের দাবিতে ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল সড়ক অবরোধ
- রি-প্যাকিংয়ের নামে সার-কীটনাশকে ভেজাল
- দায়িত্ব নেওয়ার পর মাদক-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ ও ফুটপাত দখলমুক্ত
- গোপালগঞ্জে রাতের আঁধারে প্রতিমা ভাঙচুর
- ইজ্জাতুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৮তম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
- থানার ভেতর টিকটক, আ.লীগ নেত্রী আটক
- এলাকায় ফিরে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত প্রবাসী বিএনপি নেতা তুহিন মোল্যা
- মহম্মদপুরে তরুণ ভলিবল খেলোয়াড় ইমনের পাশে কৃষিবিদ গ্রুপ
- অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বীর মুক্তিযোদ্ধা কলিমুল্লাহ চৌধুরী
- বাসের ধাক্কায় খাদে লেগুনা, প্রাণ গেলো ৪ জনের
- ভোলার তজুমদ্দিনে আত্নরক্ষায় কারাতে প্রশিক্ষণ
- মোবাইল রোগে আক্রান্ত শিশু কিশোর বয়োজ্যেষ্ঠরা
- আরও ৩৯ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে
- দিনাজপুরে শীতার্ত মানুষের পাশে ট্রাই ফাউন্ডেশন
- ‘ঢাকাকে বহু সাংস্কৃতিক চর্চার লীলাক্ষেত্রে পরিণত করতে চাই’
- ৭৫ দেশের ২২০ সিনেমা, থাকবে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য
- সংবিধান সংস্কারে যা যা থাকছে নাগরিক কমিটির প্রস্তাবে
- এখনো দেশে সাড়ে ৩৩ হাজার অবৈধ বিদেশি, ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যবস্থা
- বাগেরহাটে দুই শতাধিক থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বিনামূল্যে রক্ত প্রদান, খুশি রোগী ও স্বজনরা
- বছরের শুরুতেই মোংলা বন্দরে বেড়েছে জাহাজ আগমন
- বইমেলা শুরু ১ ফেব্রুয়ারি, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
- সিটি ব্যাংকের ডিএমডি হলেন মেসবাউল আসীফ সিদ্দিকী
- শরীয়তপুরের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল
- গাজাবাসীকে সরিয়ে নিতে ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
- আইসিইউতে লালন-সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন
- দেবী সরস্বতী: বিদ্যা, জ্ঞান, ও শুভ্রতার বিশুদ্ধ প্রতীক
- বোয়ালমারীতে এসডিসির উদ্যেগে উন্নতমানের সরিষার বীজ ও কৃষি উপকরণ বিতরণ
- আদরকে বাঁচাতে চায় পরিবার, প্রয়োজন ৫০ লাখ টাকা