বাংলাদেশে জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন: বিশ্বব্যাংক ঋণের ভূমিকা ও সম্ভাবনা
মীর আব্দুল আলীম
বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক সহায়ক হিসেবে, দেশে একটি বিশাল ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই ঋণ প্রস্তাবের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চায়। এ ঋণের অর্থায়ন মূলত স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশন খাতের সংস্কার, পরিবেশবান্ধব প্রকল্প এবং জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হবে। এই ঋণ যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে তা বাংলাদেশের উন্নয়নে একটি মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে। তবে, ঋণের অর্থ ব্যবহারের সঠিকতা, স্বচ্ছতা এবং এর যথাযথ কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঋণের উদ্দেশ্য এবং প্রকল্পের খাত নিয়ে শুরুতে আলোচনা করা যাক। বিশ্বব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত ১১৬ কোটি ডলারের ঋণ তিনটি প্রধান খাতে ব্যবহার হবে: স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশন এবং জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন। বাংলাদেশে এই তিনটি খাতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, কারণ দেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে এই খাতগুলোর উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত ছিল। প্রথমত, ঋণের একটি বড় অংশ দেওয়া হয়েছে পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশগত সমস্যা, বিশেষত বায়ু দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বব্যাংক এই খাতে ৫০ কোটি ডলার অর্থায়ন করেছে, যা দেশের পরিবেশ রক্ষা এবং উন্নত পরিবেশ তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে। বাংলাদেশের বায়ু দূষণ এবং অন্যান্য পরিবেশগত সংকট মোকাবিলা করতে এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ৩৮ কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫১ লাখ মানুষের জীবনমান উন্নত হবে এবং মা ও শিশু মৃত্যুহার কমাতে সহায়তা করবে। স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে না, বরং এটি দেশের স্বাস্থ্যখাতের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে।
এই ঋণের অর্থ বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে, তবে এর সঠিক ব্যবহার এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত সময়ের কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যেমন সরকারী তহবিলের অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং লুটপাটের ফলে বড় বড় ঋণ গ্রহণের পরেও দেশের জনগণের কাছে সুফল পৌঁছায়নি। অতীতে অনেকে অভিযোগ করেছেন যে, সরকারী তহবিল সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়নি, ফলে প্রকল্পগুলো স্থগিত হয়ে গেছে বা অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। তাই, এই ঋণকে সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর মনিটরিং এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রথমত, ঋণের অর্থের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে একটি শক্তিশালী এবং স্বচ্ছ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। জনগণের জন্য এই ঋণ প্রস্তাবের বাস্তব সুফল নিশ্চিত করতে হলে, প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন তদারকি করার জন্য একটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা কমিশন প্রতিষ্ঠা করা উচিত। এই কমিশন, সরকারী অফিসিয়াল এবং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে প্রকল্পের অগ্রগতি নিরীক্ষণ করবে, যাতে ভুল ব্যবহারের কোন সুযোগ না থাকে। দ্বিতীয়ত, সঠিক বাস্তবায়ন এবং পরিকল্পনা ছাড়া ঋণ ব্যবহারের ফলাফল মারাত্মক হতে পারে। ঋণের অর্থের সঠিক ব্যবহার এবং প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সুসংগঠিত যোগাযোগ এবং কার্যকর সমন্বয়ের প্রয়োজন। যদি কোনো প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন না হয় বা সময়মত সম্পন্ন না হয়, তবে তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এই ঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হতে পারে। দেশটি বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের কৃষি, উপকূলীয় অঞ্চল এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপরও বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। পৃথিবীজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বাংলাদেশ এর শিকার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিশ্বব্যাংকের এই ঋণ প্রকল্পটি পরিবেশ রক্ষা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এর মাধ্যমে গ্রীন প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি, এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হবে। বিশেষত, জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলির উন্নতি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের ঋণের মাধ্যমে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে যে উন্নয়ন হবে, তা উল্লেখযোগ্যভাবে দেশের জনগণের জীবনমান উন্নত করতে সহায়ক হবে। সিলেট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন শুধুমাত্র এই অঞ্চলের ৫১ লাখ মানুষকে উপকৃত করবে, বরং দেশব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মানও বৃদ্ধি পাবে। মা ও শিশু মৃত্যুহার কমানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের একটি বড় পরিবর্তন আসবে। সঠিকভাবে পরিচালিত হলে, এই ঋণের মাধ্যমে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হতে পারে, বিশেষত দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগণের জন্য। এর ফলে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর সমকক্ষ হতে পারে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে।
বিশ্বব্যাংকের সহায়তার শতভাগ কার্যকর ব্যবহার যেন হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। তবে, এই সহায়তার পূর্ণ সুফল অর্জন করার জন্য সরকারের ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের একত্রিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। যদি ঋণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে এটি দেশের উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং জনগণের জীবনমান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বন্যা, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, জলবায়ু উদ্বাস্তু, উপকূলীয় অঞ্চলের নদী ভাঙ্গন, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল এবং প্রকৃতিক বিপর্যয়গুলি এই দেশকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। এসব সমস্যার কারণে দেশের কৃষি, উপকূলীয় অঞ্চল, জনসংখ্যার স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষত, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের জীবনযাত্রা এবং জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, কারণ এখানে ক্রমবর্ধমান ঘূর্ণিঝড় এবং সুনামির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের ৩৫০টি উপকূলীয় দ্বীপ এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলো ৩৫ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলের ভূমি হারানো, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ভূমিক্ষয় বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করছে। এর ফলে একদিকে যেমন জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে, তেমনি অন্যদিকে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, যারা এই সমস্যার কারণে তাদের বসবাসের জায়গা থেকে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংকের এই ঋণ যথাযথ কাজে লাগিয়ে এ সমস্যা লাঘব জরুরী।
তবে পূর্বে ঋণ নিয়ে দুর্নীতি লুটপালের ইতহাস রয়েছে। তা প্রতিরোধের উপায় কি? বিশ্বব্যাংক কিংবা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ গ্রহণে বাংলাদেশে অতীতে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। এমন কিছু উদাহরণ রয়েছে যেখানে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য নেয়া ঋণের অর্থ ঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়নি, বা দুর্নীতির কারণে প্রকল্পগুলোর সুফল জনগণের কাছে পৌঁছায়নি। এর ফলে জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা কমে গেছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আস্থা ক্ষুণ্ন হয়েছে। অতীতে ঘটে যাওয়া এই ধরনের দুর্নীতির ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন থেকে সেসব সমস্যা এড়াতে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
অতীতে ঋণ ব্যবহারে দুর্নীতির উদাহরণ
বিশ্বব্যাংক বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে যে সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, তাতে প্রায়শই দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। কিছু উল্লেখযোগ্য দুর্নীতির ঘটনা নিচে তুলে ধরা হলো:
ক. প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি : একটি সাধারণ দুর্নীতির ঘটনা হলো প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত ব্যয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন খরচ অনুমান থেকে অনেক বেশি হয়ে গেছে, যার ফলে সরকারের ওপর চাপ পড়ে। উদাহরণ হিসেবে, বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে অতিরিক্ত খরচ বেড়ে গেছে এবং সেই অতিরিক্ত অর্থের ব্যবহার প্রাথমিকভাবে পরিকল্পিত ছিল না। এসব অতিরিক্ত খরচের পেছনে দুর্নীতির শঙ্কা রয়েছে, বিশেষত সরকারের পক্ষ থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশীদারদের সাথে গোপন চুক্তির মাধ্যমে।
খ. প্রকল্পের অপূর্ণতা এবং অকার্যকর বাস্তবায়ন: অনেক প্রকল্প যা বিশ্বের বড় ঋণদাতা সংস্থাগুলোর অর্থায়নে চালানো হয়েছিল, তা ছিল অসম্পূর্ণ বা অকার্যকর। যেমন, বিশেষ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থের অপচয় হয়েছে। এর পেছনে দুর্নীতির একটি বড় কারণ হলো সরকারি কর্মকর্তাদের বা ঠিকাদারদের স্বার্থে প্রকল্পের বাস্তবায়ন সময়মতো বা সঠিকভাবে হয়নি। এই ধরনের প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় অনেক সময় জনগণের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
গ. দুর্নীতির কারণে জনগণের সুফল না পাওয়া: ঋণের অর্থ যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না হয়, তবে প্রকল্পের সুফল সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছায় না। যেমন, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্য প্রকল্পে অনেক সময় ঠিকমতো বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে জনগণ তার প্রকৃত সুবিধা পায় না। দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের সুবিধা নিতে সাধারণ জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হয় না, এবং সেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন শুধু নামমাত্র থাকে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
এখন প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এই দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাবে এবং ঋণের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে? কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা নিচে আলোচনা করা হলো:
ক. স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা: প্রকল্পগুলোর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে আরও শক্তিশালী ও স্বচ্ছ করতে হবে। অর্থায়ন গ্রহণ, প্রকল্পের প্রাথমিক পরিকল্পনা, বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যবহার এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন — এসব সব কিছুর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। এছাড়া, যে সমস্ত সরকারি কর্মকর্তা বা ঠিকাদার প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন, তাদের প্রতি কঠোর জবাবদিহিতা থাকতে হবে। তাদের কর্মকাণ্ড তদারকি করার জন্য শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার।
খ. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তদারকি: অর্থায়ন এবং প্রকল্পের বাস্তবায়নকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তদারকি করা যেতে পারে, যেখানে সব খরচ এবং প্রকল্পের অগ্রগতি পাবলিকভাবে দেখা যাবে। এতে দুর্নীতি করার সুযোগ কমে যাবে এবং জনগণ সহজেই প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারবে। এছাড়া, পাবলিক অডিট ও প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের ভুল বা দুর্নীতির দ্রুত প্রকাশ ঘটানো সম্ভব হবে।
গ. প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন সময়সীমা নির্ধারণ এবং পর্যালোচনা: প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সময়সীমা নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দুর্নীতির সুযোগ অনেকটাই কমে যায়। প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রতিটি ধাপ নিয়মিত পর্যালোচনা এবং মূল্যায়ন করতে হবে। এই পর্যালোচনা প্রক্রিয়াটি স্বতন্ত্র একটি বাহিনী বা কমিশন পরিচালনা করতে পারে, যাতে দুর্নীতির কোনো সুযোগ না থাকে।
ঘ. এন্টি-করাপশন কমিটি এবং স্থানীয় অংশগ্রহণ: প্রকল্পগুলোর জন্য একটি শক্তিশালী এন্টি-করাপশন কমিটি প্রতিষ্ঠা করা উচিত, যার সদস্যরা সরকারের বাইরে থেকে আসবেন এবং প্রকল্পের কার্যক্রম পর্যালোচনা করবেন। এছাড়া, প্রকল্পের বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা প্রকল্পের উন্নতি বা সমস্যা সম্পর্কে অবহিত থাকতে পারেন এবং তদারকি করতে পারেন। জনগণের অংশগ্রহণ প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
ঙ. আইনগত ব্যবস্থা এবং শাস্তি: প্রকল্পের যে কোনো দুর্নীতি সনাক্ত হলে, তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যারা দুর্নীতি বা অর্থের অপব্যবহার করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রদান করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার সাহস না পায়।
পরিবেশ রক্ষা এবং সঠিক খরচ
বিশ্বব্যাংক যে অর্থ পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে, সেখানে সঠিকভাবে খরচ করা না হলে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে। পরিবেশ রক্ষায় প্রতিটি ব্যয়ের জন্য সঠিক অডিট এবং পর্যবেক্ষণ হওয়া উচিত। একইভাবে, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও খরচের যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং তদারকি অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতীতে যে দুর্নীতি ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং স্থানীয় জনগণের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, তদারকি এবং আইনগত ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে, ঋণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হবে এবং প্রকল্পগুলোর সুফল জনগণের কাছে পৌঁছাবে, যার ফলে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে সহনশীল ও স্থিতিশীল রাখতে হলে একটি সমন্বিত, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যা পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সমাজকে সুরক্ষিত রাখবে।
জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন বাংলাদেশে কতটা সম্ভব?
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির জন্য একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত। জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন (Climate-Resilient Development) মূলত এমন ধরনের উন্নয়নকে বোঝায় যা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক বা মানবিক ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত থাকে এবং এতে স্থানীয় পরিবেশ, অর্থনীতি এবং জনগণের জীবনমান দীর্ঘমেয়াদি ভাবে সহনশীল থাকে। বাংলাদেশে জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ, তবে এটি সম্পূর্ণভাবে সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক নীতি, কৌশল এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
বিশ্বব্যাংকের ১১৬ কোটি ডলারের ঋণ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ হতে পারে, তবে তার কার্যকর বাস্তবায়ন এবং সঠিক ব্যবহারের জন্য সরকারের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ঋণ যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে তা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য এক বিশাল পদক্ষেপ হতে পারে এবং দেশের জনগণের জন্য অনেক বড় সুফল বয়ে আনবে।
লেখক: সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।
পাঠকের মতামত:
- ‘নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না’
- টানা তৃতীয় বছরে জনসংখ্যা কমলো চীনে
- ‘প্রশিক্ষণই খেলোয়াড়দের চূড়ান্ত সফলতা আনতে পারে'
- ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন
- ককটেল ফাটিয়ে কোটি টাকার মালামাল লুট, থানায় অভিযোগ
- ‘কুমিল্লায় সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে’
- বাগেরহাটে দিনব্যাপি বসুন্ধরা সিমেন্ট এনডিএফ বিডি বিতর্ক উৎসব
- সাতমেরা ভলিবল টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত
- জিয়া সাইবার ফোর্স সদস্যের ওপর আ.লীগের হামলা, প্রতিবাদে সমাবেশ বিক্ষোভ
- রাজবাড়ীতে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা
- তারেক রহমানের নির্দেশে সালথায় বাবুলের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ
- বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানী আর নেই
- সালথায় গণঅধিকার পরিষদের লিফলেট বিতরণ
- ওয়ালটন প্রথম জাতীয় নারী ও পুরুষ ল্যাক্রোস প্রতিযোগিতা শুরু
- কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কবির শিকদার গ্রেফতার
- রাজবাড়ীতে ব্যবসায়ীকে মারধরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ সড়ক অবরোধ
- সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম ও তার স্ত্রী সন্তানের নামে দুদকে মামলা
- ছেলে দুবাই, পাঁচু মিয়ার ঠাঁই ঝুপড়ি ঘরে
- কুষ্টিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
- গোপালগঞ্জে মামলার ভয় দেখিয়ে বিএনপি নেতার চাঁদা দাবি, থানায় মামলা
- স্মার্টকার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে সেবাকেন্দ্র পরিদর্শনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক
- গোপালগঞ্জে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- ‘মুক্তিযুদ্ধে আ.লীগের অংশগ্রহণ কম ছিল’
- ‘হামলা-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ সব নির্যাতন করেছে আ.লীগ’
- সান্তাহারে এ্যাম্পুলসহ একাধিক মাদক মামলার আসামি গ্রেপ্তার
- মাকে বাঁচাতে জবি শিক্ষার্থীর আকুতি
- খাগড়াছড়িতে বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের সড়ক অবরোধ
- পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা
- নিউ ইয়র্কে সাকিব আল হাসানের নয়া কৌশলে চাঁদাবাজি
- শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে নানা আয়োজন
- বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল : কৃষিমন্ত্রী
- হাইকোর্টে শুনানি কালেই প্রবীরের আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ, অপেক্ষা নতুন বেঞ্চের
- আল জাজিরার প্রতিবেদনে ১৫ বিশিষ্ট নাগরিকের নিন্দা
- ইসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০১ আইনজীবীর আবেদন
- সিটি মিনিস্টার পদ থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ
- ‘গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিএনপিতে কখনই জায়গা হবে না’
- বান্দরবানে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত ২
- তোমার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম যে ব্যক্তিটি খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তিনি মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, যাকে তুমি পিতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে
- জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমির রেজাউল সাতদিনের রিমান্ডে
- গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক ধাপে ভর্তি পরীক্ষা
- জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে ভিসা দেয়া সম্ভব নয় : হোয়াইট হাউজ
- 'আমি নিশ্চিত, পিতা মুজিব যদি রাষ্ট্রপতির প্রটোকল মেনে বঙ্গভবনে থাকতেন, তাহলে বাঙালির এতো বড় মহাসর্বনাশ কেউ করতে পারত না'
- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি পেছাল
- ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ে তুমুল হট্টগোল, সংস্কারের আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসন
- ‘বই উৎসব’ বাতিল, উদ্বোধন অনলাইনে