E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

বাংলাদেশের শান্তি পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম 

সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন

২০২৫ জানুয়ারি ১৪ ১৭:২০:০৭
সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন

মীর আব্দুল আলীম


বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থা বর্তমানে গভীর সংকটে পতিত হয়েছে। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আজ বিপন্ন। বর্তমান সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ শত্রুতা, অস্থিরতা এবং অরাজকতা এমন একটি স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে সাধারণ মানুষ নিজের ছায়া দেখলেও ভয় পেয়ে উঠছে। সরকারের বিরুদ্ধে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তার অভাব দেশকে এক বিভীষিকাময় অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমরা এমন একটি সময় অতিবাহিত করছি, যেখানে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, ছিনতাই, এবং রাহাজানি প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে যেসব সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তা উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অপরাধ এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার বর্তমান পরিস্থিতি শুধু সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকেই বিপন্ন করছে না, বরং দেশের ভবিষ্যত এবং রাজনৈতিক অগ্রগতিকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। বর্তমানে, এমন এক অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, একদিকে দেশের নিরাপত্তা সংকট, অপরদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা – এই দুটি বিষয় একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়াকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সাধারণ জনগণ তথা ভোটারদের মধ্যে ভয় ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনের পথকে কঠিন করে তুলছে। বিশেষ করে ইউনুস সরকারের ভাবমূর্তির ওপর সন্ত্রাসীদের এসব কর্মকাণ্ড প্রভাব ফেলছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সরকারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য থেকে মুক্তি না পেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন জনগণ নিরাপত্তা ও শান্তির শ্বাস নিতে পারে, তখন বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অপহরণ, হত্যা, নির্যাতন এবং অন্যান্য আইনবিরোধী কার্যকলাপ বেড়ে গেছে। এসব ঘটনার সংখ্যা এবং প্রকৃতি বিচার করলে বোঝা যায় যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতা এবং মনোবল অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। একদিকে যেমন রাজনৈতিক বিভাজন দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে, তেমনি অপরদিকে পুলিশ ও র‌্যাবের মতো বাহিনীর মধ্যে নেতৃত্বের অভাব এবং মনোবলের সংকট এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার উপায় কী? যদি এগুলোর সুষ্ঠু সমাধান না করা যায়, তাহলে আগামীদিনে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা আরো কমে যাবে।

৫ আগস্টের পর থেকে খুন, ছিনতাই, রাহাজানী, ধর্ষণ এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তীব্র বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকায় এসব ঘটনার হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায়ই এসব ঘটনার মোকাবিলায় ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে মনোবলের সংকট, বাহিনীর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিগত কয়েক মাসে বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং সংবাদ মাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সংঘটিত খুনের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই প্রতিদিন গড়ে কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটছে। রাহাজানি এবং ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ বাসাবাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। দেশে যে হারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে, তা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

স্থানীয় নেতৃত্বের সংকট

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হল স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্বের সংকট। দেশে রাজনৈতিক বিভাজন এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছে যে, একে অপরের প্রতি আস্থার অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা একে অপরকে বিশ্বাস না করার কারণে স্থানীয় নেতৃত্বে বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা। একদিকে সরকারি দলের নেতা, অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতার মধ্যে পারস্পরিক আস্থা সংকট, যার ফলশ্রুতিতে রাজনীতির তিক্ততার কারণে সমাজে অস্থিতিশীলতা বেড়ে যাচ্ছে। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐক্যের অভাব এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একে অপরকে খাটো করার প্রবণতা বেড়েছে। এর ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি আসছে না, এবং দুর্বৃত্তরা নির্বিঘ্নে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, তাহলে দেশের ভবিষ্যত অন্ধকারে চলে যাবে।

পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবলের সংকট

বাংলাদেশের পুলিশ, র‌্যাব এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমে এক ধরনের দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে মনোবলের অভাব এবং শৃঙ্খলার অনুপ্রবেশ সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে উৎসাহিত করছে। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথভাবে কাজ না করলে এই অরাজকতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। পুলিশের সক্ষমতা ও দক্ষতার উন্নতি ছাড়া দেশের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য পরিস্থিতি শান্ত করা সম্ভব হবে না। র‌্যাব এবং পুলিশকে আরও সজ্জিত এবং প্রশিক্ষিত করার পাশাপাশি তাদের মনোবল পুনর্গঠন করতে হবে। পাশাপাশি, তাদের মধ্যকার যোগাযোগ এবং সমন্বয় শক্তিশালী করতে হবে যাতে তারা একত্রে কাজ করতে পারে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমন করতে পারে।

সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। দেশের রাজনীতিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সুশীল সমাজ, এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ঐক্য গঠন করতে হবে। সরকারের উচিত একটি জাতীয় সন্ত্রাস বিরোধী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা, যা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ না হয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন পাবে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং স্থানীয় পর্যায়ে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয়, জনগণকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, এবং আইন-অবমাননাকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার চেয়ে দেশপ্রেম ও জনগণের কল্যাণকেই প্রাধান্য দিতে হবে। দেশীয় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সকল পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে।

রাজনৈতিক সরকারের প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সরকারের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা আজকাল আর কারও অজানা নয়। দেশে একটি কার্যকর রাজনৈতিক সরকার না থাকলে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বর্তমান পরিস্থিতি দেখলে বোঝা যায়, যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে চলেছে, সেখানে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকারের ভূমিকা অপরিহার্য। শুধু প্রশাসনিক নেতৃত্ব নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতা, সমন্বয় এবং আস্থার সম্পর্ক স্থাপনও অত্যন্ত জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত ও অন্তর্দ্বন্দ্ব বাংলাদেশে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, যা দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। একটি রাজনৈতিক সরকারের অবর্তমানে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, কারণ কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক দল যদি জনগণের আস্থা অর্জন করতে না পারে, তবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়বে। সরকারের ভূমিকা হবে জনগণের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করা, যা কেবল একটি রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব। যখন রাজনৈতিক দলগুলি দেশ পরিচালনায় আস্থাশীল এবং নিরপেক্ষ হয়, তখনই দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। আজকের বাংলাদেশে, যেখানে প্রতিদিনই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে চলেছে, সেখানে একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক সরকার সব ধরনের অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলাকে নিরসন করতে পারবে। এই সরকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং এমন একটি পরিবেশ তৈরি করবে যেখানে জনগণ ভয়ের পরিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে ভোট দিতে সক্ষম হবে।

সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন

যখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন জনগণের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এই আতঙ্ক ভোটারদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনীতি, প্রশাসন এবং জনগণের মধ্যে আস্থা কমে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তীব্র বিভাজন এবং একে অপরকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রবণতা দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিশেষভাবে, সন্ত্রাসীদের সহিংস কার্যক্রম এবং রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এসব ঘটনার সমর্থন ঘটছে, যা দেশের নির্বাচনী পরিবেশকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। যদি সন্ত্রাসীরা নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে, তাহলে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। ভোটকেন্দ্রে ভোটদানের পরিবেশকে নিরাপদ করা এবং জনগণের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করা, দুটি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি একটি রাজনৈতিক সরকার এসব বিষয় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে সন্ত্রাসীরা তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে। এছাড়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, যা নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান, তবে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয় এবং একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকারের সহায়তা অপরিহার্য। সন্ত্রাসী কার্যক্রম যদি অব্যাহত থাকে, তবে মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ভয় পাবে, এবং একসময় সেই ভোটের অধিকারও সংকুচিত হয়ে যাবে।

ইউনুস সরকারের ভাবমূর্তির প্রতি সন্ত্রাসীদের হামলা রূখতে হবে

বর্তমান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপ এবং এসব কর্মকাণ্ডের প্রভাব। ইউনুস সরকারের ভাবমূর্তিতে সন্ত্রাসীদের এসব কর্মকাণ্ড গভীর প্রভাব ফেলছে। দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তায় এসব ঘটনা ঘটে, যা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। জনগণ মনে করছে, সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং তাদের নিরাপত্তা এখনো সংকটাপন্ন। সরকারের বিরুদ্ধে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ অব্যাহত থাকলে, তা শুধু দেশের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে না, বরং জনগণের মধ্যে এক ধরনের অশান্তি এবং দুর্বৃত্তদের প্রতি সহযোগিতার ধারণা তৈরি করবে। যেহেতু সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কার্যক্রম চালাচ্ছে, সেহেতু সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। এক্ষেত্রে, রাজনৈতিক দলের নেতাদের উচিত নিজেদের কর্মীদের বিরুদ্ধে এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করা এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে সন্ত্রাসীদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, নতুবা রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হবে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতিপূর্ববর্তী সরকারের মতো হলে কি করে চলে?

বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডের দিকে তাকালে, অনেকেই বলছেন যে দেশ পূর্ববর্তী সরকারের মতোই বিশৃঙ্খলার মধ্যে যাচ্ছে। যদি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা অব্যাহত থাকে, তবে একসময় দেশে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে যেখানে সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। এই ধরনের পরিস্থিতি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এই অবস্থায়, জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছানোর জন্য এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য, সরকারের উচিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সুশীল সমাজের সমন্বয়ে একটি কার্যকর সমাধান বের করা। যতদিন না সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসে, ততদিন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ পরিবেশ প্রয়োজন, যা রাজনৈতিক সরকারের শক্তিশালী ভূমিকা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমের মাধ্যমেই সম্ভব। তাই, সরকারের উচিত রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করা এবং জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা, যাতে তারা নির্বাচন সম্পর্কে সচেতন এবং নিরাপদ বোধ করতে পারে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যত এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভর করছে রাজনৈতিক সরকারের কার্যকর ভূমিকার ওপর। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অপরাধ এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত না হয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করাও সম্ভব নয়। নির্বাচনী পরিবেশে শান্তি এবং নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হলে, একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে, এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের উচিত নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। তবেই বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন জনগণ নিরাপত্তা ও শান্তির শ্বাস নিতে পারে, তখন বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অপহরণ, হত্যা, নির্যাতন এবং অন্যান্য আইনবিরোধী কার্যকলাপ বেড়ে গেছে। এসব ঘটনার সংখ্যা এবং প্রকৃতি বিচার করলে বোঝা যায় যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতা এবং মনোবল অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। একদিকে যেমন রাজনৈতিক বিভাজন দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে, তেমনি অপরদিকে পুলিশ ও র‌্যাবের মতো বাহিনীর মধ্যে নেতৃত্বের অভাব এবং মনোবলের সংকট এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার উপায় কী? যদি এগুলোর সুষ্ঠু সমাধান না করা যায়, তাহলে আগামীদিনে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা আরো কমে যাবে।

বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটি সমন্বিত এবং পরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্তিশালী উপস্থিতি, এবং জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এখন সময় এসেছে দেশের সকল নাগরিককে একত্রিত হওয়ার, যাতে দেশের এই অস্থিরতা দূর করে উন্নতির পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়। বাংলাদেশের মূল আদর্শ ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য একসাথে কাজ করতে হবে সকলকে, সম্মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের এই সন্ত্রাসী ও অরাজক পরিবেশ দূর করতে হবে। যদি সরকার এবং জনগণ একযোগে কাজ করে, তবে বাংলাদেশ এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

লেখক : সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।

পাঠকের মতামত:

১৫ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test