E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ

২০২৪ নভেম্বর ১৪ ১৭:২৮:২৭
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ

মারুফ হাসান ভূঞা


চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে পথে হাঁটছে সে পথ খুবই অপরিকল্পিত পথ। এই পথে এক ঝাঁক নতুন নতুন বেশ কিছু বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। কিছু প্রাথমিক সংস্কার আপাদমস্তক হলেও বৃহৎ বিতর্ক দিয়ে ঢাকা পড়ে আছে। অর্থাৎ সংস্কারের বিষয়গুলো গ্রহণযোগ্য হয়ে সংস্কার হচ্ছে না। কেবল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একক সিদ্ধান্তে কিছু সংস্কার দৃশ্যমান হচ্ছে। যার কোনো ভিত্তি নেয়। কারণ এসব সিদ্ধান্ত আকারের সংস্কার পরবর্তী যে কোনো সরকার চেঞ্জ করতে পারে। সে পরিবর্তন বা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছাত্র জনতা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিল। সে পরিবর্তন বা আকাঙ্ক্ষা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব করে ব্যর্থ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যে ঊর্ধ্বগতি জনমনে এখন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনো বাজার নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অপ্রস্তুত। এখানে বড় বড় সিন্ডিকেট, যেগুলো জমাট বেঁধে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল। সে সিন্ডিকেট গুলো ভাঙতে অক্ষম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্যদিকে সবচেয়ে বড় যে অন্যায় ঘটনা ঘটেছে গার্মেন্টস শ্রমিকসহ, শ্রমিকদের মনে দুঃখ দেওয়া। যে দুঃখ তারা বহুবছর দরে দাপিয়ে বেড়িয়েছি, সে দুঃখ যেন আরো শক্তিশালী ভাবে আক্রান্ত করেছে শ্রমিক মনে। শ্রমিকদের আন্দোলনে গুলি, অথবা সমঝোতার নামে ব্যর্থ আসা। সবকিছু ব্যাপকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। 

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সম্পর্কের টানাপোড়ন, যা এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, সংস্কার প্রশ্নেও রাজনৈতিক দলগুলোর মন জয় করতে ব্যর্থ হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মন জয় অথবা সমন্বয়ের কথা উঠছে এই জন্য যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ শেষে এখানে জনগণের প্রতিনিধি হয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতা গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে এখনকার পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাষায় যেটি সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মন জয় কিংবা অংশ করা উচিত ছিল। কেননা রাজনৈতিক দল গুলো যদি অংশ নিতো তাহলে সে পরবর্তীতে যে কোনো কিছু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনগণের নিকট জবাবদিহি ছিল। কিন্তু সে সুযোগটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বন্ধ করে দিচ্ছে। সংবিধান সংশোধন অথবা সংবিধান পরিবর্তন। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছেন সংবিধান পরিবর্তন করার কথা।

একটি সংবিধান পরিবর্তন তো কেবল মুখের উচ্চারিত ভাষায় পরিবর্তন হতে পারে না। যদি এটি একটি বিপ্লবী সরকার হতো সেক্ষেত্রে অন্য আলোচনা ছিল। সংবিধান বিধান অনুযায়ী শপথ গ্রহণ করে, সংবিধানকে ভিত্তি করে দেশ পরিচালনা করে আবার সেই সংবিধানকে পরিবর্তনের আলোচনা কেবল নিরর্থকেই নয় বরং অনিরাপদ। শপথ গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যা যা করছেন, অথবা যে সংস্কার করছেনেই কোনো কিছুর ব্যাপার স্পষ্টত ব্যাখ্যা জনসম্মুখে প্রকাশ করেনি। রাজনৈতিক দল গুলোও বলছে যে কোনো প্রকার আলাপ, আলোচনা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও করা হয়নি। যে আশা আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে জনগণ মনে করেছিল এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ন্যূনতম দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করবে। অন্তত মানুষ কথা বলবার অধিকার পাবে। কিন্তু সে আশাগুলো মোটামুটি নিরাশাজনক হয়ে উঠেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধান সংস্কারের যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া সেটি খুবই একটা বিতর্কিত মাধ্যম বলে মনে করছেন দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক সচেতন মানুষ ও বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলো। কারণ নির্দিষ্ট মানুষের আকাঙ্ক্ষার আবেগ, অনুভূতির প্রতিক্রিয়ায় কখনো সংবিধান সংস্কার হতে পারেনা। যেটি করবার এক ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। বরং সব মানুষের আবেগ, অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। যেটি কেবল বক্তব্যে প্রদর্শিত হচ্ছে, কিন্তু বস্তুত সংস্কারে কোনো ধাপে কি সব মানুষের আবেগ, অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে? নাকি নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ হচ্ছে?

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সমস্ত মতের মানুষের সংযুক্ততা ছিল, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ব্যতীত। কিন্তু সে মত এগুলোকে মব দিয়ে ঢাকার যে আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে সেটাকে কি সংস্কারের কেন্দ্র করা হচ্ছে? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মব জাস্টিস দিয়ে ঢাকার যে আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে সেটা নিয়ে কিন্তু স্পষ্ট জনসচেতনতা মূলক পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো মব জাস্টিসের অনুভূতিকে প্রাধান্য দেওয়ার মানবিক বাস্তবতা তৈরি করেছেন। কিন্তু মানবিক বাস্তবতা দিয়ে কি একটা আইন নির্ধারিত হতে পারে? না হতে পারে না, প্রয়োজন সব মতের প্রকাশের অধিকার সে অধিকার নিশ্চিত করার পূর্বে কোনো আইন জারি করা যেতে পারে না।

যেহেতু সংস্কার গুলো সাময়িক বা প্রস্তাবনা আকারে, মূলত এসব কার্যকর করবে আগামীতে নির্বাচিত কোনো একটি রাজনৈতিক সরকার। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের খোলামনে আলোচনা যুক্তি ও বিচার, বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেটি করতে পারছেন না, এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করা উচিত। ব্যাপকভাবে করা উচিত। এছাড়াও বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে তাদের সাথেও নিয়ে মিত অন্তত সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবে যুক্ত করে পরামর্শ, আলোচনা করা উচিত।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটা বড় দুর্বলতা জনগণের সামনে উপস্থাপন হতে পারেননি। জনগণের সামনে একটা পথের সন্ধান কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাবনা, স্বপ্ন কোনোকিছুই উপস্থাপন হয়নি। কতগুলো খণ্ড খণ্ড আলাপের চিত্র দেখা যায়, কিন্তু সেসব জনগণ নির্ভর নয়। জনগণ সে চিত্র গুলোকে গ্রহণ করার আস্থা পাচ্ছে না। সুতরাং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের নিকট উন্মোচিত হতে হবে ভাবনা, স্বপ্নের কথা জানাতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, অর্থাৎ যে বিষয়টি এখন বেশি বেশি ঘটছে ভিন্ন মত প্রকাশে মব জাস্টিস করে বাঁধা প্রধান করা। পূর্বে মত প্রকাশে বাঁধা দেওয়া হতো এখন মত প্রকাশে মব জাস্টিস করে বাঁধা প্রধান করা হয়। কোথাও কোথাও আক্রান্ত করা হয়, প্রশাসন কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি ।বরং প্রশাসন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এড়িয়ে যাওয়ার সক্ষমতা বেশি প্রদর্শিত হয়েছে।

লেখক : লেখক ও কলামিস্ট।

পাঠকের মতামত:

১৫ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test