গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও রাজনীতিতে গুরুত্ব বেড়েছে শহীদ নূর হোসেনের
মানিক লাল ঘোষ
শহীদ নূর হোসেন সকল অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদের শক্তি আর অনুপ্রেরণার উৎস। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এ সাহসী যোদ্ধা "গণতন্ত্র মুক্তি পাক-স্বৈরাচার নিপাত যাক" বুকে-পিঠে ধারণ করে অমিততেজ আর বুকভরা সাহস নিয়ে মিছিলে নেমে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার পিচঢালা কালো রাজপথকে করেছিল বুকের রক্তে রঞ্জিত। সে আমাদের ’৫২ ’৬৯ ’৭১ এর সাহসী দেশপ্রেমিকদের গর্বিত উত্তরসূরী, আমাদের সংগ্রামী চেতনার আরেক নাম।
সেদিন স্বৈরশাসকের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছিল গণতন্ত্র রক্ষার এই সাহসী বীরকে। তাঁর এই সাহসী আত্মত্যাগ আমাদেরকে আন্দোলিত করে, চেতনাকে জাগ্রত করে প্রতিটি লড়াই-সংগ্রামে। শহীদ নূর হোসেন আজ একটি আন্দোলনের মাইলফলক। গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গকারী নূর হোসেনের সাহসী আত্মদানকে আমরা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি।
১০ নভেম্বর এলেই রাজপথে যাদের ঠিকানা তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায় শহীদ নূর হোসেন, তারা বার বার ফিরে যায় ১৯৮৭ সালে। বিশেষ করে তৎকালীন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা জড়িত ছিলো।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ দল, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল ও ৫ দলের সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি ছিলো। সেই কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর সমর্থনে অবস্থান ধর্মঘট ঘেরাও কর্মসূচিতে রূপ লাভ করেছিল। স্বৈরশাসকের সকল বাধাকে উপেক্ষা করে ১০ নভেম্বর সকাল থেকেই সচিবালয়ের চারদিকে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার মিছিল সমবেত হয়। তখন তোপখানা রোডের মুখে পুলিশ বক্স পেরিয়ে শুরু হয় যুবলীগ কর্মী নূর হোসেনদের সাহসী মিছিল, সাহসী যুবক নুর হোসেন উদাম গায়ে লিখেছিল ‘গণতন্ত্র মুক্তিপাক-স্বৈরাচার নিপাত যাক'। নূর হোসেনের পুরো শরীরটাই যেন প্রতিবাদি পোস্টার।
সেদিন ঐ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সাহসী নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ।আন্দোলনকারীদের সাথে ছাত্র-নেতার শুরু হয় সংঘর্ষ। পল্টন তখন রণক্ষেত্র। এরই মধ্যে খবর আসে পুলিশের গুলিবর্ষণে আহত হয়েছেন হয়েছেন নূর হোসেন। গুলিবিদ্ধ নূর হোসেনকে নিয়ে যখন একটি রিকশায় করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন এক যুবক। গুলিবিদ্ধ নূর হোসেনকে রিকশা থেকে নামিয়ে পুলিশের গাড়ীতে তুলে নেয়া হয়।নূর হোসেন তখন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে ছিলেন।তখনও একজন পুলিশ সদস্য পায়ের বুট তার বুকের উপর চেপে ধরে। স্বৈরাচারী পুলিশ সেদিন নির্মমভাবে নূর হোসেনকে হত্যা করে। পুলিশের গুলিতে সেদিন আহত হয়েছেন অসংখ্য।
নূর হোসেন আত্মদানের মাধ্যমে সেদিন গণতন্ত্রের নতুন সংগ্রাম শুরু হলো, শুরু হলো নূর হোসেনের বুকে পিঠে লেখা সেই স্লোগান নিয়ে আন্দোলনের নতুন যাত্রা। নূর হোসেন উদ্বুদ্ধ করল লাখ লাখ ছাত্র-যুবক। সেই সংগ্রামের ধারায় ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী শাসক হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিল।
নূর হোসেন আত্মদানের তিন যুগপার হয়ে গেলেও মূল্যায়ন হয়নি তাঁর আত্মদানের। আজও পূরণ হয়নি নূর হোসেনের স্বপ্ন, সেদিন নূর হোসেনরা স্বপ্ন দেখেছিলো স্বৈরাচারের ধ্বংসস্তুপের ওপর গণতন্ত্রের পতাকা, কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন আজও স্বপ্নই থেকে গেলো।
দেশে অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকায় অন্যান্য বছরের চেয়ে বিভিন্ন বাস্তবতায় শহীদ নুর হোসেনের এবছরের শাহাদত বার্ষিকী পালনের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। বিএনপি মনে করে গনতন্ত্র আবারও শৃঙ্খলিত। একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন করে জনশাসন প্রতিষ্টিত হলেই শহীদ নুর হোসেনের স্বপ্ন পুরণ হবে। অনদিকে জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করতে শহীদ নুর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগের সমাবেশের ডাক। আওয়ামী লীগের সমাবেশ প্রতিহত করতে বিএনপি, জামাত ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি শহীদ নুর হোসেন দিবসে রাজনৈতিক ময়দানকে উত্তপ্ত করেছে। কারো কাছে গণতন্ত্র সুরক্ষা আবার কারো কাছে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন নিয়ে আমাদের চেতনায় প্রতিবছর ১০ নভেম্বর বার বার ফিরে আসে শহীদ নুর হোসেন। তাই নূর হোসেনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হলে শুধু টিভি বা মিডিয়া কভারেজ নয় বাস্তবিক অর্থে দুর্নীতিমুক্ত, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্রের শত্রু তথা দুর্নীতিবাজ কালো টাকার মালিক, ও দেশ বিরোধী শক্তির বিরূদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গণমানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। গনতন্ত্র সংকট মুক্ত হোক, নূর হোসেনের আত্মা শান্তি পাক- এটাই আমাদের কামনা।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহ সভাপতি।
পাঠকের মতামত:
- ‘মুক্তিযুদ্ধ মানে বাংলাদেশ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান মানে বাংলাদেশ’
- ফের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের
- সমঝোতা হয়নি, বুধবারও বন্ধ থাকতে পারে ট্রেন চলাচল
- জাতীয়করণের আশ্বাস, ইবতেদায়ি শিক্ষকদের কর্মসূচি প্রত্যাহার
- রূপগঞ্জে আড়ৎ দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
- তিন দিনেও সন্ধান মেলেনি অপহৃত ১৫ জেলের
- ‘মানুষের মুক্তির জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে’
- অষ্টম ওয়ালটন কাপ গলফ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত
- ছাত্র আন্দোলনের মুখে সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
- ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ
- ময়মনসিংহে যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতা জনি বহিষ্কার
- সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
- ‘জনগণের বিপক্ষে যাওয়ার পরিণতি ৫ আগস্ট’
- আট কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়ন: জনতার মুখে হাসি
- সালথায় ফসলী জমি থেকে মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
- মোহাম্মদ উল্লাহ'র পাপাচার, উৎকোচ ছাড়া কোন কাজ করেন না তিনি
- নড়াইলে শ্রমিক দলের কর্মি সভা অনুষ্ঠিত
- শ্রীনগরে মন্দিরের একাধিক জায়গা দখলের অভিযোগ
- দপ্তর প্রধানদের সততার সাথে কাজ করার আহ্বান রাজবাড়ীর ডিসির
- সালথায় ৭টি বসতবাড়িতে হামলা ভাঙচুরের অভিযোগ
- বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে নিয়োগ পাওয়া সচিবকে কর্মস্থলে যোগদানে বাধা
- বিএনপির অফিস পোড়ানো মামলায় ছাত্রদল নেতা কারাগারে
- ‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধশালী’
- গৌরনদীর ইউএনও’র সফলতা নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি
- মোহাম্মদপুরে দোকান দখল ও ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় অভিযোগ
- বদরুল হায়দার’র কবিতা
- তোমার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম যে ব্যক্তিটি খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তিনি মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, যাকে তুমি পিতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে
- হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির অনন্য নজির
- নগরকান্দায় রসালো পিঠা উৎসব
- সাভার প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল, সম্পাদক জিয়া
- চেয়ারম্যান এস এম রুহুল আমিনের স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল
- ‘এমার্জেন্সি’র নতুন ট্রেলার, মুক্তির তারিখ জানালেন কঙ্গনা
- গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ছাত্রদলকে সজাগ থাকতে হবে : টুকু
- পঞ্চগড়ে তারুণ্যের উৎসব
- ‘অবাস্তবতার মুখে, নীরবতাই সেরা জবাব’
- জলবিদ্যুতের জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় গ্রিড তৈরির আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের
- সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে বাংলাদেশের বিদায়
- প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব
- দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ফরিদপুরে দুই বিএনপি নেতা বহিষ্কার
- সাতক্ষীরায় চাঁদাবাজির অভিযোগে অস্ত্রসহ আটক ২
- সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
- দেলদুয়ার-নাগরপুরের উন্নয়নে কর্মবীর এমপি টিটু
- ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার প্রায় ১০০০ সেনা নিহত
- বাগেরহাটে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলা শুরু
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি