E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বর্তমান নেতৃত্ব আর নয়, আ-লীগকে নতুন নেতৃত্বে সাজাতে হবে

২০২৪ অক্টোবর ২৯ ১৬:৫০:৫৯
বর্তমান নেতৃত্ব আর নয়, আ-লীগকে নতুন নেতৃত্বে সাজাতে হবে

আবীর আহাদ


আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ২০০৯ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরই তাদের চরিত্রের স্খলন ঘটায়। এ সময় থেকে তারা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ছদ্মবরণে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ লুটেরা হাইব্রিড ও রাজাকারদের সমন্বয়ে দলে ও সরকারে সেক্টরভিত্তিক মাফিয়াগ্রুপ সৃষ্টি করে দেশকে লুটপাট ও স্বেচ্ছাচারিতার অভয়ারণ্যে পরিণত করেন। যেমন কুখ্যাত সালমান এফ রহমান, কর্নেল (অব) ফারুক খান, কাজী জাফরুল্লাহ, লোটাস কামাল, এস আলম, শাহ আলম-আনভীর, নজরুল ইসলাম মজুমদার, আব্দুল হাই বাচ্চু, বেনজীর, মতিউর, বদি, নাফিস শরাফাত প্রমুখ রাজাকার, লুটেরা, রাজাকার শাবক, ব্যাঙ্ক ও শেয়ারবাজার লুটেরা, মাদক চোরাচালক, দুর্নীতিবাজদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে আওয়ামী হাইকমান্ড দেশকে এক ভয়াবহ লুন্ঠনকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন।

লুটেরা রাজাকার ও দুর্নীতিবাজনির্ভর আওয়ামী নেতৃত্বের স্বৈরতান্ত্রিক অপশাসন, বাজার সিন্ডিকেটি ব্যবস্থা সৃষ্টি করে জনগণের ওপর বল্গাহীন শোষণ, উন্নয়নের নামে প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় বিরাট বিরাট প্রকল্প ও কেনাকাটার মধ্যে শতগুণ বাড়তি মূল্য দেখিয়ে শতশত/হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত, দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সৎ, কর্মঠ্য ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের সরিয়ে দুর্নীতিবাজ ও রাজাকার শাবকদের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়োগ, সরকারি চাকরিতে দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা ও আলীগ পরিবারকে দূরে সরিয়ে রেখে বিপুল অর্থের বিনিময়ে ধনিক রাজাকার শাবকদের নিয়োগ, বিপুল অর্থের বিনিময়ে রাজাকার ও অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ভুলুন্ঠনসহ এমন বহু অপকর্ম তারা নির্দ্বিধায় করে দেশের মানুষের মনকে চরমভাবে বিষিয়ে তুলেছিলো। সেসবেরই ফলশ্রুতিতে দেশের সিংহভাগ জনগণ ছাত্রসমাজের সামান্য কোটাসংস্কার আন্দোনকে উপলক্ষ করে আওয়ামী লীগ হঠানোর কার্যক্রমে নেমে পড়ে। আর তারই ফলশ্রুতিতে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের চরম অপমান ও ন্যক্কারজনক পতন ঘটে।

সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার হাত থেকে প্রাণ বাঁচানোর লক্ষ্যে কাউকে কিছু না জানিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তার মন্ত্রী এমপি উপদেষ্টা নেতা কর্মীরাও গর্তে লুকিয়ে যায়, কেউ কেউ আটক হন। বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ এখন আওয়ামী লীগ শূন্য। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের উপরোক্ত নানান অপকর্মের ফলে এ পতন ছিলো অবধারিত, যা অনিবার্যভাবেই সংঘটিত হয়েছে। আর এদলের চলমান নেতৃত্বের অপমানজনক পলায়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের এ করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বীরমুক্তিযোদ্ধা, জয়বাংলা শ্লোগানের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও দেশের স্বাধীনতাবিরোধী মতলববাজচক্র এসব ঐতিহাসিক সত্তাকে আওয়ামী শাসনে মন্ডিত করে দেশের মধ্যে অত্যন্ত সূক্ষ্ণভাবে নেতিবাচক অপপ্রচারণায় বিভ্রান্তির ধুমর্জালে জড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে!

বিভ্রান্তির এ ধুমর্জাল থেকে কবে কখন বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ, বীব মুক্তিযোদ্ধা ও জয়বাংলা শ্লোগান মুক্তি পেয়ে সমহিমায় উদ্ভাসিত হবে কে জানে! তবে এটাই ধ্রুবসত্য আওয়ামী লীগের বর্তমান দুর্নীতিবাজ লুটেরা রাজাকার ও হাইব্রিড নেতৃত্বের দ্বারা দেশের ক্ষমতায় আসা শুধু দূরহ নয়, পুনরায় রাজনীতির মাঠে নামাই দূষ্কর বলে একজন রাজনৈতিক ক্ষুদ্র পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক হিশেবে আমার বদ্ধমূল ধারণা। আওয়ামী লীগ ও ঐসব সত্তাকে ফিরিয়ে আনতে হলে মূল দল ও অঙ্গসংগঠনের পুরাতন নেতৃত্বকে পুরোপুরি ঝেঁটিয়ে বিদায় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সিক্ত নতুন সৎ সাহসী নিষ্ঠবান, পোড়খাওয়া, দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক তরুণ ও বয়োজেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে দলকে সংগঠিত করতে হবে বলেও মনে করি। তারপরই হয়তো বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও জয়বাংলা আগ্নেয়গিরি হয়ে আপন মহিমায় এসবের সম্মিলিত ফল উদগীরণ করতে পারে।

লেখক :মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

০২ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test