সাংবিধানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা লিপিবদ্ধ করতে হবে
আবীর আহাদ
ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় সংবিধান সংস্কারের একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সেটা নিয়ে জাতি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে বলে মনে হয়। কেউ কেউ বলছেন, সংবিধান সংস্কার বা পুনর্লিখন, পরিবর্তন বা সংশোধনের কোনো এখতিয়ার এ ধরনের সরকারের নেই। জনগণের নির্বাচিত সরকারই সে এখতিয়ার রাখে। অপরদিকে কেউ কেউ বলছেন, জাতীয় প্রয়োজনে এ ধরনের সরকারও সংবিধান সংস্কার করার এখতিয়ার রাখে। এটা রড়োই জটিল বিষয়। আমরা সেদিকে যাবো না। সংবিধানে সংস্কার বা পরিবর্তন যা-ই ঘটুক,আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এদেশ স্বাধীন করেছি, আমাদের সেই ঐতিহাসিক রক্তাক্ত বীরত্বের কথা অরশ্যই জাতীয় সংবিধানে থাকতে হবে। এ নিরীখে নিন্মে বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা মহোদয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোচরে নেয়ার জন্যে।উত্থাপন করছি।
আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : "আমরা বাংলাদেশের জনগণ উনিশশো একাত্তর খ্রীস্টাব্দের মার্চ মাসের ছাব্বিশ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া 'জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে' স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি"-সেখানে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের কথা নেই! মুক্তিসংগ্রাম একটি নিরন্তর চলমান প্রক্রিয়া, কিন্তু একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশটি স্বাধীনতাপ্রাপ্ত হয়েছে, এটাই বাস্তবতা ও ঐতিহাসিক সত্য। ফলে বিভ্রান্তির ধুম্রজাল নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীন বাংলাদেশ চলতে পারে না।
আমরা বলতে চাই যে, এই অনুচ্ছেদের 'জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক মুক্তিসংগ্রামে'র পরে যদি 'জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক মুক্তিসংগ্রামের পথ বেয়ে একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে' কথাটি লেখা হতো তাহলে 'মুক্তিযুদ্ধ' শব্দটি মহিমান্বিত ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হতো। আমরা বলবো না যে, সংবিধান রচয়িতারা ইচ্ছেকৃতভাবে 'মুক্তিযুদ্ধ' শব্দটি এড়িয়ে গেছেন। মানুষ মাত্রই ভুল করে। হয়তো তাৎক্ষণিক চিন্তায় ভুল করে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে মুক্তিসংগ্রামের মধ্যে গলিয়ে ফেলেছিলেন- যদিও মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ পৃথক দু'টি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ । ইংরেজি ভাষায়ও এ শব্দ দু'টিও পৃথকভাবে বর্ণিত আছে, যেমন Liberation Struggle = মুক্তিসংগ্রাম, Liberation War = মুক্তিযুদ্ধ। তখনকার সংবিধান রচয়িতা ও বর্তমানে সংবিধান রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গেরও নিশ্চয়ই এসব অজানা নয়।
এ প্রসঙ্গে বেশ কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশের সাবেক মাননীয় প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সাথে তাঁর আইন কমিশন অফিসে আমার একটা সৌজন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট লেখক কবি ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খানের মাধ্যমে তিনি আমার রচিত "বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে" গ্রন্থ নিয়ে আসাসহ আমাকে চায়ের নিমন্ত্রণ দেন। সেই সৌজন্য বৈঠকে আমি 'সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা শব্দদ্বয় নেই- বলাতে তিনি 'না-না, তা হবে কেনো' বলে ওঠেন। আমি জোর দিয়ে আবার বলাতে তিনি নিজে উঠে গিয়ে বুকসেল্ফ থেকে সংবিধানটি এনে আমার দেখিয়ে দেয়া সংবিধানের Preamble-প্রস্তাবনা পড়েই বলে ওঠেন : Strange-আশ্চর্য! পরক্ষণে তিনি বলেন, সরকার সংবিধানে এ-শব্দদ্বয় সংযোজন করতে পারেন। এবং এটা করা উচিত।
অপরদিকে প্রস্তাবনার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে : "যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল" বলে উল্লেখ রয়েছে, সেখানেও মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র-যোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব ও অবদানের কথা নেই! যেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঐতিহাসিক অবদানের স্বীকৃতি নেই সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের জনগণের একটি বিরাট অংশ যে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সশস্ত্র সহযোগী হয়ে, পৈশাচিক গণহত্যা ধর্ষণ লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছিলো-তাদেরকেও স্বাধীনতা পক্ষের জনগণের সমপর্যায়ে একীভূত করে মহিমান্বিত করা হয়েছে যা আর একটি ঐতিহাসিক ভুল।
এ-অবস্থায় সংবিধানের প্রস্তাবনা মোতাবেক প্রতিভাত হয় যে, এ-দেশে কোনো সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ হয়নি বা মুক্তিযোদ্ধা বলতে কোনোকিছু নেই! দেশটি বোধহয় আকাশ থেকে হাওয়ায় ভেসে এসেছে ! সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ শব্দটি না থাকায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ঘটছে। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ, ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ, গণ্ডগোলের বছর, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ইত্যাদি ধরনের শব্দে মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করার দু:সাহস দেখায়। আর এ-কারণেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানান বিকৃতিসহ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধর অনুপ্রবেশ ঘটে চলেছে। অথচ মুখে মুখে সবাই গাল ফুলিয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ' ও 'মুক্তিযোদ্ধা' শব্দদ্বয় উচ্চারণ করে আসছেন- যদিও এ-শব্দদ্বয়ের কোনোই সাংবিধানিক ভিত্তি দেয়া হয়নি! এই ঐতিহাসিক ভুল তথা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন ও অবমাননা করে কি বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি চলতেই থাকবে?
অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত সংজ্ঞা যা উনিশশো বাহাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু সরকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন- "তিনিই মুক্তিযোদ্ধা যিনি যেকোনো একটি সশস্ত্র বাহিনীর সাথে জড়িত থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন"। সেই যথাযথ সংজ্ঞাটি এড়িয়ে নানান গোঁজামিলের সংজ্ঞায় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় প্রতারণার আশ্রয়ে 'মুক্তিযুদ্ধে'র সাথে সম্পর্কহীন অ-মুক্তিযোদ্ধা, এমনকি রাজাকারদেরও 'মুক্তিযোদ্ধা' বানিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে জাতির সামনে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে! কোনো অবস্থায়ই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দেড়লাখের বেশি হবে না । অথচ বর্তমানে সরকারি তালিকায় এ-সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দু'লাখ পঁয়ত্রিশ হাজারের মতো, যার আশি/ পঁচাশি হাজারই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা! কিন্তু আমাদের জানা মতে বেশকিছু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এখনো মুক্তিযোদ্ধা হিশেবে স্বীকৃতি পায়নি।
লেখক :মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও গবেষক, চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
পাঠকের মতামত:
- ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে রাজবাড়ীর ১১ ইউপি চেয়ারম্যান
- ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে জেএসপিএসের সেমিনার
- শ্রীপুরে আ.লীগ নেতার বাড়িতে বিষ্ফোরণ, দগ্ধ ২
- গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ
- পলাতক ১৯ নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
- ফের বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছেন ফারিয়া
- সোনারগাঁয়ে বোনের কাছে টাকা পাঠিয়ে প্রতারিত হলেন শিউলি আক্তার
- পাংশা উপজেলা প্রেস ক্লাবের অস্থায়ী কার্যলয়ে মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
- এমিরেটস ফ্লাইট ট্রেনিং একাডেমীতে গ্রাজুয়েট হলেন ৮৫ পাইলট
- ঈশ্বরদীতে লেবু চাষ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন
- পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
- কুষ্টিয়ায় ট্রাক-নছিমনের সংঘর্ষে গরু ব্যবসায়ী নিহত
- গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান কারগারে
- ইজতেমা ময়দানে হামলা ও হত্যার বিচার দাবি জামালপুরে
- শিশু কল্পনা হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ১
- নাটোরে আগুনে পুড়ে সাংবাদিকের ৯ মাসের শিশু কন্যার মৃত্যু
- সুপ্রিম কোর্টে হাসান আরিফের জানাজা সম্পন্ন
- গৌরনদীতে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
- বিসিসির ৩০ ওয়ার্ডের দায়িত্বে ১৮ কর্মকর্তা
- সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জরুরী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত
- টঙ্গীতে ব্রীজ ভেঙে নদীতে ট্রাক
- নগরকান্দায় শীতবস্ত্র বিতরণ
- মঞ্চে গিটার বাজাতে বাজাতেই মারা গেলেন পিকলু
- চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি, দুদিনের মধ্যে অভিযান
- দেশের তিন খাতের উন্নয়নে ১১৬ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
- রাত পোহালেই পাংশা পৌর ভোট
- আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে দুই বোনের স্ট্রিট ফুডের ব্যবসা
- সীতাকুণ্ডে ছাত্রলীগ সভাপতি শিহাবের নেতৃত্বে হরতাল বিরোধী মিছিল
- বিজয় দিবসে দেশবাসীকে টাইগারদের জয় উপহার
- প্রার্থনা
- টাঙ্গাইলে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত
- শতাধিক ভাঙা সেতু দিয়ে ‘বিপজ্জনক’ যাতায়াত
- জরাজীর্ণ ভবনে ‘আতঙ্ক’ নিয়ে পাঠদান
- শরীয়তপুরের তিনটি আসনে মোট ২২ প্রার্থী
- হেলাল হাফিজের কবিতা
- কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস আজ
- সংহিত দিবস উপলক্ষে কাপাসিয়া বিএনপির র্যালী
- দেশবাসীকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান তারেক রহমানের
- জেনে নিন অ্যালোভেরার উপকারিতা
- প্লাস্টিকের ভীড়ে হারাতে বসেছে বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র
- তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে সড়ক-রেলপথ অবরোধ
- ‘মওলানা ভাসানী পা থেকে মাথা পর্যন্ত রাজনীতিবিদ ছিলেন’
- জাতিসংঘে আইসিএসসি'র নির্বাচনে সদস্যপদ পেল বাংলাদেশ
- হাসপাতালের টেন্ডারে কোটি টাকার অনিয়ম
- ‘মমতার বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি’