E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

‘উৎসব মন্ডল ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য চাই’ 

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৬ ১৬:৪৭:০৫
‘উৎসব মন্ডল ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য চাই’ 

শিতাংশু গুহ


একজন হিন্দু উৎসব মন্ডল-কে পিটিয়েছে শতাধিক মুসলমান। পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেই ফেলেছে, অন্তত: ওরা ভেবেছে, উৎসব মরে গেছে, আস্তে আস্তে ওঁরা চলে যায়। সেনাবাহিনী উৎসবকে বডিব্যাগে ভরে নিয়ে যায়। অবাক কান্ড, উৎসব মরেনি, ও বেঁচে গেছে, এখন হাসপাতালে আছে। ঘটনার বিবরণ শুনলে বা ভিডিও দেখলে যেকোন সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বেন। আমার সাথে একটু আগে (৫ই সেপ্টেম্বর) ফরিদপুরের এক ভদ্রলোক উৎসবের কথা বলে কেঁদে ফেললেন। না, উৎসব তার কেউ নয়, উৎসবের শিশুসুলভ চেহারার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলছিলেন, একজন মানুষকে যারা এভাবে মারে তারা অমানুষ! না, ওরা অমানুষ নয়, ওঁরা মাদ্রাসার ছাত্র এবং খাঁটি মুসলমান। 

উৎসব মন্ডল, বয়স ২২, খুলনার সোনাডাঙ্গায় আজম খান সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্র। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইসলাম ধর্ম ও নবীকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। একদল ছাত্র তাকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে থানায় নিয়ে আসে। কিছুক্ষনের মধ্যে সেখানে আরো ছাত্র আসে। ছাত্ররা উৎসবকে তাদের হাতে দিতে বলে, পুলিশ রাজি হয়না। ইতিমধ্যে থানা চত্বরে অনেক মানুষ জমায়েত হয়। উৎসবকে তারা ছিনিয়ে নেয় বা পুলিশ তাদের হাতে তুলে দেয় তা স্পষ্ট নয়। থানা প্রাঙ্গনেই জনতা তাকে পিটাতে শুরু করে। ইতিমধ্যে মিলিটারি আসে। পুলিশ মিলিটারির সামনেই ‘গণপিটুনি’ চলতে থাকে। এ পর্যায়ে সোনাডাঙ্গা আবাসিক মসজিদ থেকে ঘোষণা আসে, ‘কটূক্তিকারী গণপিটুনিতে নিহত’। ছাত্র-জনতা চলে যায়।

জানা যায়, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যালয়ের সামনে বুধবার গভীর রাতে (১২টার পর, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪) ইসলামের নবীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে উৎসব মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি গণপিটুনির শিকার হয়েছে। গণপিটুনিতে ঐ কিশোর মারা গেছে বলা হলেও সেনাবাহিনীর মুখপত্র আইএসপিআর জানায়, উৎসব জীবিত আছে। তারা জানায় উৎসবের বয়স ২২। পুলিশ জানিয়েছিলো, তার বয়স ১৫। খুলনার সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ঐ কিশোরকে সেনাবাহিনী সাথে করে নিয়ে গেছে, তবে ছেলেটি মারা গেছে কী-না, সেটি তিনি নিশ্চিত নন।

পুলিশ বলেছে, স্থানীয় কিছু মাদ্রাসার শিক্ষার্থী উৎসবকে নিয়ে আসে। তাদের অভিযোগ, ছেলেটি ইসলামের 'নবীকে কটূক্তি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে'। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, “ঠিক আছে, প্রচলিত আইনে ওর বিচার হবে। তারা এতে রাজি হয়নি। তাদের দাবি, ‘দেশের প্রচলিত আইনে নয়, বিচার করতে হবে ওদের আইনে’। ওরা বলে, আমাদেরকে ৫মিনিট সময় দেন। আমাদের হাতে তুলে দেন। পুলিশ জানায়, আমরা সেই পারমিশন দিতে পারি না। এ ঘটনাপ্রবাহের মাঝে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য মাদ্রাসার লোকজন খবর দেয়। সাথে ইমাম সমিতির লোকজন এসে জড়ো হয়। পুলিশের সাথে এদের বাকবিতণ্ডা চলে। এ পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে সেনা ও নৌবাহিনী ঘটনাস্থলে আসে।

পুলিশ কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বিবিসিকে জানিয়েছেন, সেনা ও নৌবাহিনী, স্থানীয় ইমাম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অভিযোগকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মাদ্রাসা ছাত্রেরা তা মানেনি। এ পর্যায়ে কয়েকশ’ মানুষ সেনা ও নৌবাহিনীর উপস্থিতিতে পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে। মি: ইসলাম বলেন, "শত শত মানুষ ধাক্কা দিয়ে আমার অফিসে ঢুকে যায় এবং ওকে মারধর শুরু করে। এক সময় ওরা বলে যে ও মারা গেছে এবং তারা আস্তে আস্তে সবাই বেরিয়ে যায়। স্থানীয় সংবাদদাতারা জানায়, উপ-কমিশনারের অফিসে ছাত্র-জনতার ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটে রাত ১১টার দিকে এবং তারা বের হয় পৌনে ১২টার দিকে। তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, এরপর ছেলেটিকে সেনাবাহিনী বডিব্যাগে ভরে নিয়ে গেছে।

ছেলেটি হিন্দু, তাকে পিটিয়েছে মুসলমান। ‘মুসলমান’ বলায় কেউ কেউ দু:খ পাবেন, কিন্তু সত্য তো চিরদিন কঠোর। যারা উৎসবকে পিটিয়েছে, তাদের মধ্যে একজন হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান-আদিবাসী-উপজাতি পাবেন না, এমন বীরত্ব শুধু কিছু সংখ্যক বাঙ্গালী মুসলমানকে মানায়। এ কৃতিত্ব ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। তবে প্রকৃতি’র নিয়মে এর খেসারত দিতে হয়, আফগানিস্তান ‘বামিয়ান’ ভেঙ্গে আজো খেসারত দিয়ে যাচ্ছে। এর দায় রাষ্ট্রের, সরকারের, প্রধান উপদেষ্টার, সকল উপদেষ্টার। জাতি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য শুনতে চায়। সাংবাদিকরা এদের প্রশ্ন করুন, ‘উৎসব মন্ডল ঘটনায় আপনার মন্তব্য কি’? প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য না পাওয়া গেলে বোঝা যাবে, ‘যে যায় লঙ্কা, সে হয় রাবন’। শেখ হাসিনার আমলে নাসিরনগর থেকে কুমিল্লা, হিন্দু’র ওপর এত অত্যাচার হলো, শেখ হাসিনা চুপ ছিলেন, কোন ব্যবস্থা নেননি। শেখ হাসিনা’র আমলে দেশ পরাধীন ছিলো, তাই তিনি কথা বলেননি; এখন দেশ নুতন করে স্বাধীন হয়েছে, ড: ইউনুস কথা না বললে, এ স্বাধীনতার অর্থ কি?

লিংক: https://share.icloud.com/photos/04fapKaIubCd1InMQRXTqZVdQ

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test