E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

এবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫০তম জন্মতিথি

২০২৪ আগস্ট ২৬ ১৬:১৬:৩৮
এবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫০তম জন্মতিথি

গোপাল নাথ বাবুল


আজ ২৬ অক্টোবর সনাতনী সম্প্রদায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান জন্মাষ্টমী পালিত হচ্ছে। জন্মাষ্টমী মানে মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর জন্মাষ্টমী উদযাপন করা হয়। সনাতনী বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে জানা যায়, আজ থেকে ৫ হাজার ২৫০ বছর পূর্বে দ্বাপরযুগের শেষদিকে যখন সমগ্র ভারতবর্ষে হানাহানি, রক্তপাত, সংঘর্ষ, রাজ্যলোভে রাজন্যবর্গের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ তথা বিশৃংখলায় পরিণত হয় ঠিক তখনই সৃষ্টি স্থিতি-প্রলয়ের যুগ সন্ধিক্ষণে স্বয়ং বিষ্ণু অবতারের আবির্ভাব অনিবার্য হয়ে পড়ে। মানবতাবাদী চরিত্রে চিত্রিত যুগ পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্র যোগে মথুরা ভোজবংশীয় রাজা উগ্রসেনের পুত্র অত্যাচারী কংসের কারাগারে এক বৈরি সমাজে অত্যাচরী ও দুর্জনের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় সাধুজনের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের লক্ষ্যে বসুদেব ও দেবকীর অষ্টম সন্তানরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

কারাগারে ঘোর অমানিশার অন্ধকারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলেই শ্রীকৃষ্ণের গায়ের রং শ্যামল, অন্য অর্থে ধূসর, পীত অথবা কালো। ওই সময় দুরাচারি রাজা কংস রাজধর্ম, কুলাচার, সদাচার, ভুলে গিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা, অন্যায়-অবিচারে মত্ত হয়ে ওঠেছিলেন। নিজের জন্মদাতা পিতা উগ্রসেনকে কারাগারে নিক্ষেপ করে জোরপূর্বক মথুরার সিংহাসন দখল করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন কংসের শ্বশুর জরাসন্ধ, চেদিরাজ, শিশুপালসহ অনেক রাজা। সনাতনীদের বিশ্বাস মতে, পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল তখন সেই অশুভ শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য বিষ্ণুর অষ্টম অবতার রূপে মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল।

শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন, “যদা যদা হি ধর্ম্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত/ অভ্যূত্থানমর্ধম্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্/ পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্/ ধর্ম্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে”।

অর্থাৎ যখনই ভারতে ধর্মের গ্লানি হয়, অধার্মিকদের অত্যাচার বেড়ে যায়, তথনই সাধুদের ও ধর্ম রক্ষার জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই। তিনি বিভিন্ন সময়ে আবির্ভূত হয়ে সাধু ও ধর্ম রক্ষা করে তাঁর কথা রেখেছেন। সেবারও তিনি অত্যাচারী কংসের হাত থেকে ধর্ম ও সাধুদের রক্ষার জন্য বসুদেব ও দেবকির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং কংস ও জরাসন্ধকে বধ করে তিনি সাধু ও ধর্মকে রক্ষা করেছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এ জন্মতিথিই জন্মাষ্টমী নামে পরিচিত।

সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন গ্রন্থ মতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে ১২৫ বছর লীলাবিলাস করে বৈকুন্ঠ গমন করেন। শাস্ত্রমতে, তিনি যেদিন ইহধাম ত্যাগ করে অন্তর্ধান হন, সেদিনই কলির প্রবেশ ঘটে। সে হিসেবে, এবার ১৪৩১ বাংলার (২০২৪ সাল) জন্মাষ্টমী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫০তম জন্মতিথি। কেননা, তিনি মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে (শুক্রবার) ইহধাম ত্যাগ করেন। ফলে খৃষ্টপূর্ব ৩১০১ সালে কলিযুগ আরম্ভ হয়। এখন ২০২৪ সাল। তাহলে কলির বয়স হচ্ছে (৩১০১+২০২৪)বছর =৫১২৫ বছর এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিল (৫১২৫+১২৫) বছর =৫২৫০ বছর পূর্বে। সে হিসেবে এবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫০তম জন্মদিবস পালন করা হচ্ছে।

১২৫ বছর র্শ্রীকৃষ্ণ যে লীলা আমাদের দেখিয়েছেন তার রসামৃত আমাদের জীবনকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করেছে। তাই প্রতিবছর ভাদ্রের জন্মাষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি পালনের জন্য বিশ্বের কোটি কোটি নরনারী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। মানবজীবনে শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি হচ্ছে মুক্তি এবং পাপ থেকে বিরত থাকা। পরম পুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাই শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় ১৮টি অধ্যায়ের মাধ্যমে জাগতিক জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি, মুক্তি, মোহ, যশ, খ্যাতি, অর্থ-বিত্তের মায়াজাল, অন্যায়-অবিচার প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞানদান করেছেন এবং মানব জীবনের মুক্তির ও পাপমুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। তাঁর দিব্য জন্ম মানবতার বিশ্ব গড়ে সুন্দর ও সুখময় জীবনযাপনের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সনাতনী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করলে সব পাপমোচন ও প্রভূত পূণ্য অর্জিত হয়। এ ব্রত যারা নিয়মিত পালন করেন তাঁদের সন্তান, সৌভাগ্য ও আরোগ্য লাভ হয় এবং পরকালে বৈকুন্ঠ প্রাপ্তি ঘটে।

অতএব আসুন, জন্মাষ্টমীর এ শুভদিনে বিশ্বব্যাপি বিরাজমান অশান্তি নিরসনে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সকলেই সৌভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কৃষ্ণনামের ভবসাগরে ডুব দিয়ে কৃষ্ণভাবনায় নিজেদের সম্পূর্ণরূপে সমর্পন করি তাহলে কংসত্ব, জরাসন্ধত্ব রূপী আসুরিক শক্তি বিনাশ হয়ে আত্মরাজ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হব। ফলে আমাদের জীবন হবে রসময়, আনন্দময় এবং মঙ্গলময়।

পরিশেষে বিশ্বব্যাপী শান্তি কামনা করে বিভিন্ন দেশে বিরাজমান যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ হোক, আলোকিত হোক মানবসমাজ। খুলে দিক মানবিক চোখ। এমন প্রত্যাশা হোক ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথিতে। কারণ, ধর্ম সব সময় সত্য ও সুন্দরের পথ দেখায়।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।

পাঠকের মতামত:

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test