E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা

২০২৪ জুলাই ০৪ ১৬:২৭:১৬
দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। মানবসভ্যতা বিকাশে এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনে দুর্নীতি প্রধান অন্তরায়। যেসব দেশে সম্পদের অপ্রতুলতা রয়েছে, সেখানে দুর্নীতি রয়েছে। দুর্নীতি এমন এক অপরাধ যা অন্যান্য অপরাধ দমনেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অধিকাংশ অপরাধের অন্যতম উৎস হচ্ছে দুর্নীতি। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির সঙ্গে লড়াই করে আসছে। দুর্নীতি এমন একটি ব্যাধি যা সমাজের মূল কাঠামোকে ক্ষয় করে, অর্থনীতির উন্নয়নে বাধা দেয় এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করে। তবে, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা আশাব্যঞ্জক ফলাফল দেখাচ্ছে।

বাংলাদেশে দুর্নীতি বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়, যেমন: ঘুষ, অনুপ্রবেশ, অর্থ পাচার, নেপোটিজম এবং অবৈধ লেনদেন। দুর্নীতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্যমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জাতির নৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, দুর্নীতি কেবল গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে না; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করে। দুর্নীতির সঙ্গে মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন। দুর্নীতির কারণে আর্থসামাজিক ক্ষতি হয়। জাতীয় আয়ের ওপর প্রভাব পড়ে, সামাজিক ক্ষতি হয়। দুর্নীতির কারণে মানুষকে জীবনও দিতে হয় সেই উদাহরণও আছে।

প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা, সংকট মোকাবিলায় কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না এ ধরনের ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও একশ্রেণির অসাধু মানুষ বিভিন্নভাবে দুর্নীতি করছে। এ ক্ষেত্রে তিন ধরনের দুর্নীতি লক্ষ্য করা গেছে। সেগুলো হলোক্রয় ও সরবরাহ খাতে দুর্নীতি, সেবা খাতে দুর্নীতি ও ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতি। দুর্নীতি দমনে সবাইকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ঘোষণাটি প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। যাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব রয়েছে তাদের সৎ হতে হবে।

দুর্নীতি প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনই পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ ও এনজিও এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘নেশন মাস্ট বি ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট করাপশন। পাবলিক ওপিনিয়ন মবিলাইজ না করলে শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যাবে না।’

দেশে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করার উদ্দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও সবসময় দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হচ্ছে। এর জন্য দুদকসহ সব পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ‘শুদ্ধাচার’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া আছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন বিষয় হচ্ছে মানুষ। কারণ মানুষের মনের পরিবর্তন কখন, কীভাবে ঘটবে তা বলা প্রায় অসম্ভব। তবে আপাতদৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে দুটি সত্তা কাজ করে। এর একটি হলো শুভবোধের সত্তা ও আরেকটি হলো অশুভবোধের সত্তা। খুব সহজভাবে বললে ভালো মন ও মন্দ মন। যদিও মন ও বোধের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। যখন একজন মানুষের মন তার মধ্যে নিজেকে চেনার ক্ষমতা সৃষ্টি করে তখন তা বোধে পরিণত হয়। যেমন জীবনবোধ, শিল্পবোধ, মানবিক মূল্যবোধ কিংবা সৃষ্টিশীল বোধসহ এ ধরনের যে কোনো বোধের উন্মেষ ঘটতে পারে। তবে এই বোধ কখন জাগ্রত হয়ে মানুষের মধ্যে কাজ করবে এটি নির্ভর করে মানুষের নিজের ওপর কিংবা অন্যান্য প্রভাবক শক্তির ওপর। এই বোধ যখন ক্রিয়াশীল হয় তখন যে কোনো অসম্ভব মানুষের আত্মশক্তিতে সম্ভব হয়ে ওঠে। মানুষের বিকাশ ঘটে। রাষ্ট্রের বিকাশ ঘটে। দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও কর্মসংস্থানকে যদি আমরা সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করি তবে এই সমস্যাগুলোর পেছনে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করছে বোধশক্তির অপূর্ণতা। আমরা জানি চুরি করা ভালো কাজ নয় কিন্তু চুরি করার প্রবণতা মানুষের মধ্যে কাজ করছে। আধুনিক ও পরিশীলিত ভাষায় এটিকে আমরা বলছি দুর্নীতি। পরিবার, অফিস ও সমাজের প্রতিটি মানুষ জানে লোকটি চোর কিন্তু লোকটির মধ্যে এটির বোধশক্তি তৈরি হচ্ছে না। এর কারণ হলো তার শুভবোধের সত্তার পরিবর্তে তার ওপর অশুভবোধের সত্তা প্রভাব বিস্তার করেছে।

মানুষ এ ধরনের চোরদের সামনে সম্মান করার কৃত্রিম অভিনয় করলেও বাইরে এসে তাদের প্রকৃত স্বরূপ নেতিবাচকভাবে তুলে ধরছে। দুর্নীতির আরেকটি দিক হলো স্বজনপ্রীতি। এখানেও শুভবোধের সত্তার প্রকাশ ঘটছে না। আবার অশুভশক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবে মানুষের মধ্যে ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠছে না। ফলে আত্মসম্মানের বিষয়টি মানুষের কাছে গৌণ হয়ে ভোগবাদী চরিত্র ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দুর্নীতিকে ব্যাপক অর্থে বিশ্লেষণ করলে দুভাবে করা যেতে পারে। এর একটি হলো উচ্চস্তরের দুর্নীতি, আরেকটি হলো তৃণমূল পর্যায়ে দুর্নীতি। দুক্ষেত্রেই সুবিধাবাদিতার বিষয়টি গৌণ হয়ে উঠছে। যারা দুর্নীতিতে নিজেদের নিমজ্জিত রেখেছে, অশুভ বোধশক্তিকে তারা মন্দ বলে মেনে নিচ্ছে না বরং এটির সপক্ষে তাদের নিজেদের ইলোজিক্যাল যুক্তি তুলে ধরার প্রচেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে সমাজের শুভবোধের সত্তার ওপরও তাদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কৌশল তারা গ্রহণ করছে। যাতে মানুষ মন্দকেও ভালো বলে মেনে নেয় কিংবা এ ক্ষেত্রে তাদের প্রতিক্রিয়া নিরপেক্ষ রাখে।

আরেকটি মুখ্য বিষয়কে আমরা অনেক সময় এড়িয়ে যাই, সেটি হলো দায়বদ্ধতা। যেমন একজন মানুষের তার প্রতিষ্ঠানে যে পরিমাণ সময় দেওয়া উচিত বা দায়িত্ব পালন করা উচিত সেটি সে করছে না। এটিও দুর্নীতির একটি স্বরূপ। কোনো সহকর্মী দুর্নীতিবাজ প্রমাণিত হলেও আমরা তাকে আইনের আওতায় না এনে বরং সেটিকে কীভাবে ধামাচাপা দেওয়া যায় সে বিষয়টিতে আমাদের তৎপরতা লক্ষণীয়। ফলে দুর্নীতি হলেও তা প্রকাশ পাচ্ছে না। অনেক সময় সহকর্মীদের দুর্নীতিকে মানবিক ইস্যু হিসেবে বিবেচনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যেটি আইনগত ও নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ কিংবা অশুভ প্রভাব দুর্নীতির আওতায় পড়ে। শুভবোধশক্তির মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও তাদের নিরপেক্ষ থাকার চরিত্রটি অনেক ক্ষেত্রেই দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতি করাকে উৎসাহিত করছে।

অন্যদিকে শুভবোধের শক্তি যাদের মধ্যে প্রবলভাবে ক্রিয়াশীল তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কিংবা কৌশল নিরপেক্ষ শুভবোধ ও অশুভশক্তির শুভবোধের সংখ্যাধিক্যের কারণে বিপন্ন হচ্ছে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে শুভশক্তির পরাজয় ও অশুভশক্তির প্রভাব দেখা যাচ্ছে যা আগামী প্রজন্মকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করবে বলে ধারণা করা যায়, যা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য শুভকর নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা যেমন জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছি, ঠিক তেমনি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করলাম।’ সরকার গঠনের পর থেকে সব সময় মন্ত্রণালয়গুলো সরেজমিন দেখার চেষ্টা করেছি। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার।

প্রতিটি বিভাগে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। কোনো পর্যায়েই যাতে দুর্নীতি না হয় তা ভালোভাবে দেখতে হবে। প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রে শুধু জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, এখানে দক্ষতাটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কে কত বেশি কাজ করতে পারে, কতটা সততার সঙ্গে কাজ করতে পারে এবং নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলে এসব বিবেচনা করে পদোন্নতি হওয়া উচিত। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গতানুগতিক ধারণায় আমরা মনে করে থাকি শুধু জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করা হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে আধুনিক ও বিশ্বজনীন মতবাদকে প্রাধান্য দিয়ে সততা ও দক্ষতাকে পদোন্নতির মানদ- হিসেবে বিবেচনা করেছেন যা প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে জাতীয় শুদ্ধাচার নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। যেখানে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে ‘শুদ্ধাচার’ হচ্ছে নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণগত উৎকর্ষ, সমাজের কালোত্তীর্ণ মানদ-, প্রথা ও নীতির প্রতি আনুগত্য, ব্যক্তি পর্যায়ে এর অর্থ হচ্ছে কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক নীতি, ব্যবস্থা ও কার্যপদ্ধতির যথাযথ অনুশীলন, ব্যক্তির সমষ্টিতেই প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি। প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তি পর্যায়ে শুদ্ধাচার অনুশীলন গুরুত্বপূর্ণ। সমন্বিত আকারে প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার অনুশীলনও জরুরি। তবে শুদ্ধাচার কৌশল কতটুকু ফলপ্রসূ হচ্ছে সেই বিষয়টিতে নজরদারি বাড়াতে হবে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে দুর্নীতি এমনভাবে রোধ করতে হবে যাতে মানুষের সাবকন্সাস মন দুর্নীতি করতে চাইলেও বাস্তবে তা করার সুযোগ না পায়।

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে আমরা দুর্নীতি রোধ করতে পারি। এ ক্ষেত্রে আমরা ফিনল্যান্ডের দুর্নীতি দমনের কৌশল আমাদের দেশে প্রয়োগ করতে পারি। ফিনল্যান্ডে এন্টি করাপশন এজেন্সি পৃথকভাবে না থাকলেও দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে এবং আইনসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিত দায়বদ্ধতার মধ্যে এনে এন্টি করাপশন নেটওয়ার্ক গঠন করা হয়েছে। এদের কাজ হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রচার, দুর্নীতি রোধে বিভিন্ন কৌশল তৈরি এবং তা বাস্তবায়ন করা। এগুলোর নজরদারি করার মাধ্যমে মানুষকে দুর্নীতিমুক্ত করা ও দুর্নীতিবিরোধী গবেষণাকে প্রাধান্য দেওয়া।

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। যেমন এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে যে অনিয়ম ও দুর্নীতিগুলো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যকর ভূমিকা রাখছে। একইভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুদকের কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে এই কার্যক্রমকে একটি নেটওয়ার্কিংয়ের মধ্যে এনে এই ধরনের অভিযান পরিচালনা করা গেলে বাস্তব ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাত, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পসহ এ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সমন্বিত দুর্নীতি দমন টিম গঠন করতে পারে। আবার এই টিমগুলোকে জেলাভিত্তিক করা গেলে এই ধরনের টিমের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দুর্নীতির প্রকৃতি ও দুর্নীতিবাজদের প্রকৃত চরিত্র উন্মোচন করা সম্ভব হবে। তবে এ ক্ষেত্রে যারা দুর্নীতি দমনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে তারা যাতে নিজেরা দুর্নীতিতে যুক্ত হয়ে দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে মিশে না যায় তার নিবিড় পর্যবেক্ষণ থাকতে হবে। কেবল দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালালেই হবে না। বরং দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে দুর্নীতিগুলো বিভিন্নভাবে হচ্ছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বের করে এনে দুর্নীতির শ্বেতপত্র জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে। এর সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করতে হবে।

বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা রয়েছেন, তাদের ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব দুর্নীতি দমন কমিশনে বাধ্যতামূলকভাবে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে করা গেলে তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। পরবর্তী সময়ে সম্পদের পরিমাণ বাড়লে সে সম্পদের অর্থের উৎসসহ এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন তথ্যাদি দুদকের ই-ফাইলিংয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্ত করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের লিখিতভাবে ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করতে হবে তাদের প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত রয়েছে। যদি দুর্নীতিমুক্ত না থাকে তবে সেটিরও ঘোষণা দিতে হবে।

দুর্নীতির ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এ অসদাচরণ, পলায়ন, দুর্নীতি ও নাশকতামূলক কর্মে লিপ্ত হয়েছেন কিংবা রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে দণ্ডের ভিত্তি ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং দণ্ড হিসেবে লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ড আরোপ করার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু এই বিধিগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও এর বাস্তব প্রয়োগ তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীরাও এই ধরনের বিধি সম্পর্কে ধারণা রাখে না। এগুলো সরকারি কর্মচারীদের জানানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতি দমনের যে সমন্বিত উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে তা যাতে থেমে না যায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মধ্যেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ করে যেতে হবে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের চেয়ে সামগ্রিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা আশাব্যঞ্জক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যার দূর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা। তিনি বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীন। দূদক স্বাধীনভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করবে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন।বঙ্গবন্ধুও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর আইনি প্রক্রিয়া দুর্নীতি প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে সবার অংশগ্রহণ এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞা অপরিহার্য। যদি সংঘবদ্ধ ও সমন্বিতভাবে দুর্নীতির কদর্য চেহারাকে পরিচিত করে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এবং জনস্বার্থে এর কুফল সম্পর্কে তথা জনসচেতনতা সৃষ্টি করা যায়, তাহলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্নীতি মুক্ত একটি রোল মডেল একটি স্বপ্নের দেশে পরিগণিত হবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।

লেখক : উপপরিচালক, অর্থ ও বাজেট, অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০৭ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test