মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে অর্জিত দেশকে ব্যর্থ হতে দেয়া যায় না
![মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে অর্জিত দেশকে ব্যর্থ হতে দেয়া যায় না](https://www.u71news.com/article_images/2024/06/30/abir-ahad.jpg)
আবীর আহাদ
মুক্তিযোদ্ধারা সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। তাঁরাও মানুষ। তাঁদেরও শান্তিপূর্ণ জীবন নিয়ে এদেশে বসবাসের অধিকার ছিলো। কিন্তু তাঁরা তাঁদের সেই অধিকার পাইনি। বলা চলে সিংহভাগ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। যেহেতু তাঁরা দেশের নির্মাতা, জাতির গর্বিত সন্তান, সেহেতু তাঁরা তাঁদের জাতীয় সম্মান ও আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে কারো কাছে হাত পাততে পারেননি। তাঁরা সরলভাবে বিশ্বাস করেছেন যে, তাঁরা রাষ্ট্রের গর্বিত বীর সন্তান। রাষ্ট্রই জাতীয় মর্যাদার আলোকে তাঁদের মোটামুটি উন্নত আর্থসামাজিক জীবন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দেবে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও রাষ্ট্রের ওপর এমন একটি অন্ধ আস্থা রেখে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা দৃশ্যপট থেকে যার যার দিগন্তে ফিরে গিয়েছিলাম। তারপর জীবন থেকে বহুটি বছর কেটে গেছে। কেটে গেছে স্নেহময় প্রভাত, বৈরাজ্ঞময় দুপুর, স্বপ্নময় রাত্রি! আর আজ জীবনের পড়ন্ত বেলায় আমরা অনুভব করছি কী বিশুষ্ক শূন্যতায় আমরা অবগাহন করছি। আমাদের সবাই এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। আমাদের অনেক সাথী প্রতদিন নানান জটিল রোগে পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছেন। অধিকাংশের এখনো মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। রোগেশোকে অনেকেই বিছানায় পড়ে ছটফট করছে। চিকিত্সার অভাবে হা-পিত্যেশ করছে। দারিদ্র্যের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সন্তানদের সঠিকভাবে শিক্ষা দিতে পারেননি। যদিও বা কিছু মুক্তিযোদ্ধা কষ্টের ভেতর থেকেও তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা দিতে পেরেছে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সরকার ও আমলাতন্ত্রের কারণে তাদের অনেকেই সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়ে ধুকে ধুকে মরছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার আজ এমনতর অবস্থার মধ্যে নিপতিত হয়ে তারা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। মূলত: তাদের অবদানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকার ফলে তাদের জীবনে এমনতর বিপর্যয় নেমে এসেছে। তার ওপর রয়েছে গোঁজামিল সংজ্ঞায় অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেয়ার ঘৃণ্য কার্যকলাপ। আর সে-কারণে আমরা আজ কয়েক বছর যাবত মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকার দাবি জানিয়ে আসছি। আমার বিশাল সান্ত্বনা এই যে, আমার উত্থাপিত দাবিদ্বয় আজ একটি জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঐতিহাসিক অবদানের স্বীকৃতিসহ মুক্তিযুদ্ধে তাদের ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে বঙ্গবন্ধু প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০% কোটা প্রদান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্মম তিরোধানে পর থেকে অদ্যাবধি সেই কোটার বাস্তবায়ন তো ঘটেইনি, উপরন্তু সেই কোটাটি আওয়ামী লীগ সরকার বাতিল করে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যে আচরণটি করেছেন তা বলার মতো নয়। অভাব ক্ষুধা দারিদ্র্য বঞ্চনা ইত্যাদি অসংগতির কারণে দেশনির্মাতা মুক্তিযোদ্ধারা যেমন স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের ঊর্ধ জীবনে উঠে দাঁড়াতে পারেনি, তেমনি তাদের উত্তরাধিকারদের জীবনেও এমনতর অভিশাপ নেমে এসেছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত/অর্ধশিক্ষিত ছেলেমেয়েরা চরমতম বেকারত্বের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন। এটা বললে নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না যে, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি পরশ্রীকাতর ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি নানান চক্রান্তের জাল বিছিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাজের বুকে দাবিয়ে রেখে আসার ধারাবাহিকতায় তাদের সন্তানদের প্রতিও অনুরূপ আচরণ করে চলেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের হাতেও যখন এ অবস্থার উদ্ভব ঘটে তখন দু:খ ও পরিতাপের পরিসীমা থাকে না। দেশের স্বাধীনতা আনায়নকারী গর্বিত সন্তান হিশেবে যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ আর্থসামাজিক জীবন ব্যবস্থা থাকার কথা, সেখানে তারা চরম বিড়ম্বিত জীবনযাপন করে চলেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা আজ তাদের বীরত্বে অর্জিত দেশে যেনো পরবাসী। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করলেও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জীবনে চরম দারিদ্র্য পরিস্থিতি বিরাজ করছে !
অথচ আমাদের সেই মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্নাত পবিত্র দেশের মাটিতে কোথাকার কোন দরবেশ সোবহান লোটাস সম্রাট খান কাজী বদি তারেক মামুন ফালু বাচ্চু মিঠু ভূঁইয়া জিকে শামিম, পাপিয়া, সাবরিনা, পাপলু, শাহেদসহ যে দুর্নীতিবাজ লুটেরা মাফিয়া ডনরা অবাধে লুটপাটযজ্ঞ চালিয়ে দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে- কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের রক্তের সাথে, চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে, তাদের মূলত: এই দেশে থাকারই অধিকার নেই ; অথচ বিভিন্ন সময় দুর্নীতি ও লুটপাটের সমর্থক সরকার তাদের জাতিদ্রোহ অনৈতিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনোই ব্যবস্থা নেয়নি। উপরন্তু তাদের যোগসাজশে সরকারের কর্তাব্যক্তিরাও দুর্নীতি ও লুটপাটের সঙ্গী হয়েছে। দিনে দিনে সে-দুর্নীতি ও লুটপাট সাগরচুরি রূপ ধারণ করে আসছে।
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একা সৎ থেকে দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছেন না। আসলে তিনিও যথোপযুক্ত লোকদের যথাযথ স্থানে বসাতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং হচ্ছেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরে এখনো বহু সৎ মেধাবী ও ত্যাগী মানুষ রয়েছে। তাদেরকে খুঁজে এনে দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়ে তাদের নিয়ে তিনি এক সর্বাত্মক দুর্নীতি ও লুটপাটবিরোধী অভিযান পরিচালনা করলে কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে পারেন। কিন্তু দু:খজনক সত্য এই যে, এতো রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকা সত্বেও শেখ হাসিনা মানুষ চিনতে পারছেন না! কা'দের দলের কোন পদে নিতে হবে, কা'দের এমপি উপদেষ্টা ও মন্ত্রী করতে হবে, কাকে কোন মন্ত্রণালয়ের সচিব করতে হবে ইত্যাদি কার্যক্রমে তিনি নিদারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছেন বলেই তিনি যে জনকল্যাণের কাজ চান তা তিনি তাদের কাছ থেকে পাচ্ছেন না। যে লুটেরা ও মাফিয়াদের করাল গ্রাসে পড়ে দেশের অর্থনীতিসহ গোটা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ যাদের বিরুদ্ধে চরম বিরক্ত তাদেরকে দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে কেনো ও কী কারণে যে বসিয়ে রাখা হয়েছে তা সত্যিই বোধগম্য নয়।
দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও মাফিয়াদের অনেক ছাড় দেয়া হয়েছে। তাদেরকে আর কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেয়া যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে লুটেরা-মাফিয়া চক্রের পৃষ্ঠপোষক, আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা এবং সংকীর্ণমনা ও স্বার্থান্ধ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদেরও ক্ষমা করা যায় না। এরা তাদের ব্যক্তি ও চক্রের স্বার্থে দেশকে ধ্বংসের শেষ সীমানায় নিয়ে এসেছে। তাদের কারো ক্ষমা নেই।
দেশের সচেতন সৎ ত্যাগী ও জাগ্রত বিবেকবান সাহসী মানুষদেরকে আজ একজোট হয়ে ঐসব স্বার্থবাদী সংকীর্ণমনা সাম্প্রদায়িক অপরাজনৈতিক শক্তি এবং উদগ্র লুটেরা-মাফিয়াচক্রকে চিরতরে উৎখাত করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হবে। এটাই সতেরো কোটি মানুষের দাবি। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের দাবি। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপর্ণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, তেমনি স্বাধীন দেশটি পরিচালিত হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে- মুক্তিযোদ্ধা-জনতার সমন্বিত শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে অর্জিত ও ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তস্নাত বাংলাদেশকে ব্যর্থ হতে দেয়া যায় না।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও গবেষক।
পাঠকের মতামত:
- বন্যার আশঙ্কা, আগাম প্রস্তুতির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- অবসরের পরও ইংল্যান্ড দলের সঙ্গেই থাকবেন অ্যান্ডারসন
- দাদা-বৌদির রসগোল্লার চা!
- শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে শিক্ষককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ
- জাপান ঘুরে এসে উচ্ছ্বসিত এমদাদ-হন্জো আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থী
- মাথায় পচা ডিম ভেঙ্গে শিক্ষককে লাঞ্ছিত!
- গোপালগঞ্জে ছাতা পেল ১৫ শিশু শিক্ষার্থী
- দেশের নিট রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলার
- ‘ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না’
- চলতি মাসের এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ আজ
- ‘আমার মুখটা দেখতেই গরিবের মতো, আমি কখনো গরিব ছিলাম না’
- গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় উরুগুয়ে
- সন্ধ্যায় বাসায় ফিরবেন খালেদা জিয়া
- সম্রাটের অবৈধ সম্পদের মামলায় চার্জ শুনানি ২৬ সেপ্টেম্বর
- ‘প্রত্যয়’ স্কিম নিয়ে যা জানালো অর্থ মন্ত্রণালয়
- উৎপাদনে ফিরলো পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র
- ‘সাংবাদিকদের আইন নিয়ে লেখাপড়া করা উচিত’
- ‘ইমরান খানকে স্বৈরাচারীভাবে বন্দি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’
- সাজেকে আটকা শতাধিক পর্যটক
- উপকূলের আরও কাছে হারিকেন বেরিল
- ‘বাংলাদেশ থেকে পাকসেনা খতম করে তবে থামব’
- ‘ধৃষ্টতা এমন পর্যায়ে গেছে, সব কিনে ফেলেছি বলতেও দ্বিধা করে না’
- গৌরনদীতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে চার বোমার বিস্ফোরণ
- ‘বিএনপি নেতারা কূটনীতির ভাষা বোঝে না’
- রাণীশংকৈলে এতিমখানা শিশু নিবাসীদের মাঝে সমাজসেবার চেক বিতরণ
- হবিগঞ্জে প্রতারণার ঘটনায় ডাঃ কলি-নাদিরাকে সিভিল সার্জনের তলব
- তিন বছরেও শেষ হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ
- কাঠালিয়ায় রাকিবুল হত্যার বিচার দাবিতে লাশ নিয়ে স্বজনদের অবস্থান মানববন্ধন
- সময় টিভির বার্তা প্রধানের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে শেরপুরে মানববন্ধন
- মেয়েকে বাঁচাতে বাবা-মায়ের আকুতি
- বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে ২ লাইনম্যানকে গ্রাহকের মারধর
- বাজার মূলধনে যোগ হলো সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা
- সিরাজগঞ্জে আবারও বাড়ছে যমুনার পানি
- নড়াইল জেলা যুবলীগের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন
- মহম্মদপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
- গোপালগঞ্জে কলেজ শিক্ষকদের বেসিক আইসিটি ট্রেনিং সমাপ্ত
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- বইমেলায় রহিম আব্দুর রহিম’র তিনটি বই
- গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান লুটুল কারাগারে
- ৩ কোটি ৩০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল কিনবে সরকার
- গোপালগঞ্জে শিক্ষকের অপসারনের দাবিতে বিক্ষোভ
- সালথায় আ'লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষে আলোচনা সভা
- বাংলাদেশি দুগ্ধ চাষিদের সহায়তা দেবে ইউএসএইড
- তিতলি-মাইকেল-লুবান : একসঙ্গে তিন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পৃথিবী