বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে সাত বছর নির্বাসিত জীবন না কাটালে দেশকে আরো অনেক কিছু দিতে পারতেন ওয়াজেদ মিয়া
মানিক লাল ঘোষ
হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ আর আত্মঅহমিকা আমাদের মনমানসিকতাকে ক্রমাগত গ্রাস করে ফেলছে। অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই যেনো আমি কী হনুরে ভাব! সমাজের প্রচলিত এই ধারার বিপরীতে নির্লোভ ও নিরহংকারী মানুষের আজ বড়ই অভাব। সেই হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের মধ্যে অন্যতম প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া।
ব্যক্তি জীবনে তিনি কতটা নির্লোভ ও নিরহংকারী ছিলেন তা নতুন করে বলার কিছু না থাকলেও এই প্রজন্মের কাছে তার জীবনাদর্শ তুলে ধরা জরুরি। ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকেও এম এ ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন সাদামাটা এক মানুষ। একটি স্বাধীন দেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা হয়েও অতিসাধারণ জীবন যাপন করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার স্বামী হওয়া সত্ত্বেও তিনি কখনোই ক্ষমতার ব্যবহার করেননি। বরং নীরবে নিভৃতে সারাজীবন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন ড. ওয়াজেদ মিয়া।
১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জের ফতেহপুর গ্রামে একটি সম্ভান্ত্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এম এ ওয়াজেদ মিয়া। তিনি তার কাজ দিয়ে একদিকে পীরগঞ্জের মানুষকে গর্বিত করেছেন। অন্যদিকে বহির্বিশ্বের কাছেও বাংলাদেশকে গর্বিত করেছেন তার বিজ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে। তিনি নিভৃত এক পল্লী থেকে উঠে এসেছেন। নিজের যোগ্যতায় সব চড়াই-উতরায় পেরিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। সততা আর দেশপ্রেম দিয়ে পরবর্তী জীবনেও আত্মা মর্যাদায় ধরে রেখেছেন তার অবস্থান। মৃত্যুর পরেও তাকে অমরত্ব এনে দিয়েছে তার কৃতকর্ম।
মরহুম আবদুল কাদের মিয়া ও মরহুমা ময়জুননেছার সন্তান এম এ ওয়াজেদ মিয়া সুধা মিয়া নামে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। মানসম্মত লেখাপড়ার জন্য তাকে রংপুর জিলা স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকেই তিনি ডিসটিনকশনসহ প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন।
১৯৫৬ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে পড়ার সময় থেকেই রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন তিনি।
মেধার চর্চা করে নিজেকে পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তেমনি রাজনীতির প্রতি তার একটি সুগভীর আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করছেন। ১৯৬১ সালে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ফজলুল হল ছাত্র সংসদে ছাত্রলীগের মনোনয়নে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হলে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্নেহে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এর মধ্য দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ ও নীবিড় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাশ করার পর ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে আণবিক শক্তি কমিশনে চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আাসেন তিনি। একই বছর ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তরুণ বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া। ১৮৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে এম এ ওয়াজেদ মিয়াও অনেক ঘাত প্রতিঘাতের শিকার হন। স্ত্রী শেখ হাসিনা ও দুই সন্তানকে নিয়ে এসময়ে জার্মানীতে ছিলেন তিনি। তাদের সাথে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। জার্মানিতে ৭ বছর নির্বাসিত জীবনে বিজ্ঞান চর্চা ব্যহত হয় এই তরুণ বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার। তা না হলে জাতিকে আরে অনেক কিছু দিতে পারতেন তিনি। স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের কারণে কিছুদিন কারাবরণও করেন তিনি।
১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং এর আগে ও পরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও ছাত্র আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। ড. ওয়াজেদ মিয়া আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৯৯ সালে অবসর নেন। অবসর গ্রহণের আাগে ১৯৯৭ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পুনঃবাস্তবায়নের উদ্যেগ নিয়েছিলেন ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া। তার রূপপুর আজ আর স্বপ্ন নয় বাস্তবতা।
কাজ পাগল পরমাণু বিজ্ঞানী তার মেধাকে আগামী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে লেখক হিসেবে ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন।
এম এ ওয়াজেদ মিয়া স্নাতক পর্যায়ের বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইংরেজীতে লেখা গ্রন্থদ্বয়ের নাম Fundamentals of Thermodynamics এবং Fundamentals of Electromagnatics। তার অন্যতম গ্রন্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়। ৪৬৪ পৃষ্ঠার সুপরিসর এই গ্রন্থে বাংলাদেশের বহল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। তার আরেকটি গ্রন্থের নাম বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র যা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড কর্তৃক ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয়। তার লেখা বিজ্ঞান ভিত্তিক গ্রন্থ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে।
২০০৯ সালের ৯ মে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে যান এম এ ওয়াজেদ মিয়া। তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী পীরগঞ্জের ফতেহপুরে বাবা মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জামাতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী হওয়া সত্ত্বেও তার সাধারণ জীবন যাপনের প্রভাব পড়েছে পুরো পরিবার জুড়ে। নিজের কথা না ভেবে ড. ওয়াজেদ মিয়া সারাজীবন দেশ ও জাতির কল্যাণের কথাই ভেবেছেন। সন্তানদের ও গড়ে তুলেছেন একই চিন্তা চেতনায়। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা আজ বাংলাদেশের জন্য আশির্বাদ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া-শেখ হাসিনার পুত্র ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার সজীব ওয়াজেদ জয় তারুণ্যের অহংকার। তিনি সমৃদ্ধ আগামীর প্রতিচ্ছবি। আর মানবতার কল্যাণে নিবেদিত অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা সবাই আজ বিশ্ব জুড়ে আলোকিত। দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে তারা। আর এটা সম্ভব হয়েছে পারিবারিক সততা, দেশপ্রেম, কাজের প্রতি ভালোবাসা ও নির্লোভ থাকার কারণে। মা চারবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়া স্বত্বে পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও কন্যা সায়না ওয়াজেদ পুতুল ক্ষমতার রাজনীতির বাইরে অবস্থান করে দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। এই শিক্ষা তারা পিতা এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কাছ থেকেই পেয়েছে। তাই নিসন্দেহে বলা যায় নিরহংকারী, নির্লোভ পরমাণু বিজ্ঞানী মরহুম এম এ ওয়াজেদ মিয়ার জীবনাদর্শ আগামী প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয়।
লেখক : সহ-সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য।
পাঠকের মতামত:
- ‘সংস্কারের নামে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা যাবে না’
- পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন থাকছে না
- কেন্দুয়ার তারাকান্দিয়া বাজুপাড়ায় শেষ হলো ২৪ প্রহরব্যাপী সম্প্রীতির নামযজ্ঞ
- প্রধান শিক্ষকের উপর হামলা, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাংচুর
- কোটালীপাড়ায় বিএনপির সভা পণ্ড করল প্রতিপক্ষ
- সুন্দরবনে ৯ দিনেও উদ্ধার হয়নি অপহৃত ১৫ জেলে
- মোংলায় আ.লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংর্ঘষে আহত ৮
- রামপালে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
- বাগেরহাটের গোয়াল ঘরে দুর্বৃত্তের আগুনে দগ্ধ ৫ গরু
- যৌনপল্লীর সুবিধাবঞ্চিত নারী ও শিশুদের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
- রাজবাড়ীতে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ
- ‘সৌদি, কাতার ও ওমানের প্রতিশ্রুতি আন্তরিক মনে হয়েছে’
- পাচারের অর্থ ফেরাতে কানাডার সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
- নোয়াখালীতে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার
- দিনাজপুরে দিগন্ত শিল্পী গোষ্ঠীর বার্ষিক প্রীতিভোজে বটমূলে মিলন মেলা
- পঞ্চগড় হাসপাতালে ডাক্তারের শূণপদ পূরণে অনশন, জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে স্থগিত
- বোয়ালমারীতে স্কুলের নিরাপত্তা কর্মী আটক, মুখ খুলতে চান না পুলিশ
- মানব পাচার প্রতিরোধে সচেতনতা সভা
- একজন নারী উদ্যোক্তার গল্প
- আমাদের জীবন পরিবর্তনে গ্রন্থ ও গ্রন্থাগারের অবদান অপরিসীম
- সাফজয়ী নারী ফুটবলারকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি
- স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা দিদার হত্যা মামলায় আ. লীগ নেতা কারাগারে
- পঞ্চগড় সদর উপজেলার শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সম্পন্ন
- ‘মূল্যস্ফীতি কমাতে আরও দু-তিন মাস লাগবে’
- ‘নতুন ভোটার হচ্ছেন ৫০ লাখ’
- দেলদুয়ার-নাগরপুরের উন্নয়নে কর্মবীর এমপি টিটু
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- নিউ ইয়র্কে পাতাল ট্রেনে ঘুমন্ত নারীযাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা
- ঝিনাইদহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার
- মঙ্গলবার থেকে ফের শুরু হচ্ছে বৃষ্টি, থাকতে পারে ৪ দিন
- ঈদগাঁওতে দিনব্যাপী শেখ রাসেল শিশু-কিশোর উৎসব
- কাঁপা
- শরীয়তপুরে বজ্রপাতে নিহত ৩
- বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট: মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
- ২০২৪ সালে চার মেধাবী শিক্ষার্থীকে হারিয়েছে ববি
- বাসের ধাক্কায় খাদে লেগুনা, প্রাণ গেলো ৪ জনের
- অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বীর মুক্তিযোদ্ধা কলিমুল্লাহ চৌধুরী
- ভোলার তজুমদ্দিনে আত্নরক্ষায় কারাতে প্রশিক্ষণ
- শুরুতে হম্বিতম্বি, এখন চীনের প্রতি নরম সুর ট্রাম্পের
- শাওমি নিয়ে এলো বহুল প্রতীক্ষিত রেডমি নোট ১৪
- পাঠ্যবইয়ে স্থান পেলেন জ্যোতি-জামাল ভূঁইয়া, বাদ সাকিব-সালাউদ্দিন
- ৯ জানুয়ারি ‘শেখ মুজিব দিবস’ পালন করবে বাংলাদেশ
- আসুন প্রার্থনা করি, আমরা যেন লজ্জা পাই
- ববিতে নতুন কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ
- সিটি ব্যাংকের ডিএমডি হলেন মেসবাউল আসীফ সিদ্দিকী