শেখ মণির মাঝে কর্মক্ষম যুবসমাজের স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু
মানিক লাল ঘোষ
ক্ষণজন্মা এক কীর্তিমান পুরুষ শেখ ফজলুল হক মণি। মেধা আর মননে আপাদমস্তক দেশ প্রেমে গড়ে ওঠা তারুণ্যের প্রতীক। বাংলাদেশের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িয়ে থাকা এক সংগ্রামী মানুষের নাম। স্বাধীনতা সংগ্রামে কৃতিত্ব পূর্ণ অবদানের জন্য বিপ্লবী খেতাবে পরিচিত পান মাত্র ৩৫ বছর বয়সে। তাঁর হাত ধরেই রোপিত হয়েছিল এই দেশে যুব রাজনীতির বীজ। এই প্রজন্মের অনেকের কাছেই তাঁর নামটি আজ অজানা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ইতিহাস থেকে যেভাবে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে, তারই ধারাবাহিকতার শিকার যুব রাজনীতির অহংকার শেখ মণি।
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে যুব সমাজকে কর্মক্ষম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যুব সমাজের ওপরই সবচেয়ে ভরসা বেশি ছিলো বঙ্গবন্ধুর। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে মণির মাঝে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন এমন সম্ভাবনাকে, যা সমাজের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং তাদের মুখের ও চোখের ভাষা বুঝতে পারবে। ১৯৭২ সালে ১১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন শেখ ফজলুল হক মণি। দায়িত্ব গ্রহণ করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের।
যুব সমাজকে সুসংগঠিত করে আদর্শিক নেতৃত্ব প্রদানে বঙ্গবন্ধুর আস্থা ও বিশ্বাসের পরিপূর্ণ মর্যাদা রাখেন শেখ ফজলুল হক মণি। দক্ষতা , সততা , আন্তরিকতা, রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় খুব অল্প দিনের মধ্যেই তিনি পরিণত হন যুব সমাজের আইকনে, আর তাঁর হাতে গড়া আওয়ামী যুবলীগ পরিণত হয় এদেশের যুব সমাজের ভালোবাসা ও প্রাণের সংগঠনে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ও ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি।
বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি ও অধিকার আন্দোলনের নক্ষত্র, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাঙালি, জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের সৃজনশীল যুবনেতা, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৩৯ সালের ৪ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ার ঐতিহাসিক শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মরহুম শেখ নুরুল হক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি। মা শেখ আছিয়া বেগম বঙ্গবন্ধুর বড় বোন।
ঢাকার নবকুমার ইনিস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার পাশ করেন শেখ ফজলুল হক মণি। ১৯৫৮ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উর্ত্তীর্ণ হন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়। ১৯৬০ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে লাভ করেন বিএ ডিগ্রী। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন প্রতিভাবান এই তরুণ। ষাটের দশকে সামরিক শাসন বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন শেখ ফজলুল হক মণি। ১৯৬০ -৬৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরূদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় গ্রেফতার হন এবং ৬ মাস কারাভোগ করেন।
১৯৬৪ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর আবদুল মোনেম খানের কাছ থেকে সনদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান এবং সরকারের গণবিরোধী শিক্ষানীতির প্রতিবাদে, সমাবর্তন বর্জন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এ কারণে তাঁর বাংলা সাহিত্যে অর্জিত মাস্টার্স ডিগ্রী প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে মামলায় জিতে ডিগ্রী ফেরত পান শেখ ফজুলল হক মণি। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানে নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন এবং দেড় বছর কারাভোগ করেন এই সাহসী তরুণ। শেখ মণির জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও অর্জন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬ দফার পক্ষে হরতাল সফল করা। বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে। আন্দোলনকে বেগবান ও মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করতে হরতাল সফলের আর কোনো বিকল্প ছিল না মুক্তিকামী বাঙালির কাছে। তখন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকদের হরতালের সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ করেন তরুণ সমাজের এই আইকন। এই হরতাল পালনের মধ্য দিয়ে নতুন করে জাগরণ ও প্রেরণার সৃষ্টি হয় বাঙালির মনে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে সাহসী ও অগ্রণী ভূমিকা পালনের দায়ে তাঁর বিরূদ্ধে হুলিয়া জারি হয় এবং তিনি গ্রেফতার হন। একই সময়ে নানা অভিযোগে আরো ৮ টি মামলার আসামী করা হয় শেখ ফজলুল হক মণিকে। ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনের সময় মুক্তি দেয়া হয় তাঁকে।
রাজনীতিতে অত্যন্ত নির্লোভ ছিলেন তিনি। নিজে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের কর্মসূচি প্রণয়নের অন্যতম প্রণেতা ছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি। সমাজতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী শেখ মণি সত্তরের নির্বাচনী কর্মসূচিতে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশকে ৬ দফাভিত্তিক স্বায়ত্বশাসন, ব্যাংক বীমা ও ভারী শিল্প, বৈদেশিক বাণিজ্য, পাট ও তুলা ব্যবসা জাতীয়করণ, পূর্ব পাকিস্তানের জায়গিরদারি, জমিদারী ও সর্দারী প্রথার উচ্ছেদ, ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির খাজনা মওকুফ, শ্রমিকদের ভারী শিল্পের শতকরা ২৫ ভাগ শেয়ার ও বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন সাধারণ জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেন। নিষ্পেষিত, অধিকার বঞ্চিত মুক্তিকামী বাঙালিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধু যে দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়েছেন তার ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামে অন্যন্য ভূমিকা রেখেছেন শেখ ফজলুল হক মণি। তিনি ছিলেন মুজিববাহিনীর অধিনায়ক, মুুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক । শেখ ফজলুল হক মণি শুধু রাজনীতিতে নয়, তাঁর সুনাম জড়িয়ে আছে এদেশের সাহিত্য জগতে। গণসচেতনতার আলো ছড়িয়েছেন তিনি সাংবাদিকতার মহান পেশাতেও। বহুল প্রচারিত ও পাঠক সমাদৃত দৈনিক বাংলার বাণী, ইংরেজী দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস ও বিনোদন ম্যাগাজিন সিনেমার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শেখ ফজলুল হক মণির লেখা “অবাঞ্ছিত” উপন্যাস ব্যাপক পাঠক সমাদৃত তৎকালীন সময়ে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার রাতে ঘাতকদের নিষ্ঠুরতার শিকার হন স্ত্রীসহ বাঙালির যুব সমাজের আইকন। মহান স্রষ্টার অশেষ কৃপায় প্রাণে বেঁচে যান তাঁর দুই শিশুপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস। শেখ মণির সুযোগ্য সন্তান শেখ পরশ আজ তাঁর পিতার হাতে গড়া যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান।
পিতার সাহসী কর্ম জীবনের মূল্যায়নে শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন- "আমার বাবা শেখ মনি ঝুঁকি নিতে ভয় পেতেন না। তিনি ছিলেন বিশ্বস্ততার প্রতীক। তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত তাই করেছেন।
আরেক ছেলে শেখ তাপস নান্দনিক ঢাকা নগরী গড়ে তোলার স্বপ্নচারী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র।পিতার মতোই নির্লোভ, সাহসী ও কর্মদক্ষতার সাক্ষর রেখে চলেছেনে শেখ মণির দুই পুত্র। সততার পথে, চেতনার পথে অবিচল থেকে এগিয়ে চলছেন তাঁরা। শেখ পরশ ও শেখ তাপসের মাঝে এদেশের যুব সমাজ খুঁজে পায় তাদের আইকন শেখ ফজলুল হক মণিকে। তিনি বেঁচে থাকুক তারুণ্য, মেধা ও মননে দেশপ্রেমের আইকন হিসেবে যুব সমাজের মণিকোঠায়। শুভ জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা ক্ষনজন্মা বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমৃত্যু জ্ঞানভিত্তিক বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দ্রষ্টা শহীদ শেখ মণি’র স্মৃতির প্রতি।
লেখক : ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এর সহ সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য।
পাঠকের মতামত:
- বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং টিউলিপের ভবিষ্যৎ
- রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে কমিশন গঠন
- জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত
- নড়াইলে আমাদা আদর্শ কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
- নগরকান্দায় রসালো পিঠা উৎসব
- ফরিদপুরে কিশোর রিক্সাচালক হোসাইন হত্যা মামলায় গ্রেফতার ২
- সাভার প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল, সম্পাদক জিয়া
- ফরিদপুরে মাটিচাপা শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার
- পাংশায় ৩৭০ পিস গাঁজার গাছসহ চাষী গ্রেফতার
- টিউলিপের জায়গায় এমাকে দায়িত্ব দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
- মশার কামড়ে অসুস্থ সামান্থা রুথ প্রভু
- পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন রোহিত শর্মা
- ‘আদালতে দোষী হলেও জনতার কাছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বীর’
- হত্যাচেষ্টা মামলায় সালমান-পলক ৪ দিনের রিমান্ডে
- ডেসটিনির এমডিসহ ১৯ জনের ১২ বছরের কারাদণ্ড
- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া
- ‘পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার কাজ চলছে’
- ‘বিতর্কিত ভূমিকায় জড়িত সব কর্মকর্তাকে ধরা হবে’
- সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নামে প্রথম মামলা
- প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৪ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা
- 'শোষকের গুলিতে প্রাণ দিতে প্রস্তুত কিন্তু জনগণের অধিকারের প্রশ্নে আপোষ হবে না'
- যাত্রাভঙ্গ
- সবার আমি ছাত্র
- দাবানলের কারণে আবার পেছালো অস্কার মনোনয়ন
- পেট খালি রাখলেই বিপদ
- একমাস পর সর্বনিম্ন সংক্রমণ শনাক্ত ভারতে
- বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির বিষ
- সুবর্ণচরে চর জিয়া উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে আলোচনা সভা
- পাঠ্যবইয়ে র্যাপার হান্নান ও সেজান
- মঞ্চে গিটার বাজাতে বাজাতেই মারা গেলেন পিকলু
- বিজয় দিবসে শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের মিলন মেলা
- খাগড়াছড়িতে বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের সড়ক অবরোধ
- মাকে বাঁচাতে জবি শিক্ষার্থীর আকুতি
- পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা
- নিউ ইয়র্কে সাকিব আল হাসানের নয়া কৌশলে চাঁদাবাজি
- ‘পাকিস্তানের আক্রমণ ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে’
- ‘পাকিস্তানের আক্রমণ ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে’
- ডেঙ্গুতে আরও ৪ মৃত্যু, একদিনে হাসপাতালে ২৪১ জন
- তোমার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম যে ব্যক্তিটি খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তিনি মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, যাকে তুমি পিতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে
- শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে নানা আয়োজন
- বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল : কৃষিমন্ত্রী
- সড়কে মৃত্যু: প্রতিদিনের ট্র্যাজেডি এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব
- ইসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০১ আইনজীবীর আবেদন
- 'আমি নিশ্চিত, পিতা মুজিব যদি রাষ্ট্রপতির প্রটোকল মেনে বঙ্গভবনে থাকতেন, তাহলে বাঙালির এতো বড় মহাসর্বনাশ কেউ করতে পারত না'
- লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানল