E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল, পণ্যবাহী ৪ ট্রাক ফেরত পাঠালো ভারত

২০২৫ এপ্রিল ১০ ১২:৪৭:০৫
ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল, পণ্যবাহী ৪ ট্রাক ফেরত পাঠালো ভারত

স্টাফ রিপোর্টার : ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হওয়ায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের গেট থেকে চারটি পণ্যবোঝাই বাংলাদেশি ট্রাক ফেরত এসেছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ট্রাকগুলো ফেরত পাঠায় ভারত। পরে পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো ঢাকায় চলে আসে।

এতদিন ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানি হতো। ২০২০ সালের ২৯ জুন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এই চুক্তি হয়েছিল।

এর মাধ্যমে ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভুটান, নেপাল, মিয়ানমারসহ তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানি সুবিধা পেতো বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সেই চুক্তি বাতিল করে ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি)।

বুধবার ভারত বলেছে, যেসব পণ্যবোঝাই ট্রাক এরই মধ্যে ভারতের ভূখণ্ডে আছে, সেগুলোকে দ্রুত ভারত ত্যাগ করতে হবে। আর এ আদেশের আগে যেসব পণ্য এন্ট্রি হয়ে আছে তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা নেই।

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা বন্ধের জন্য ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় একটি চিঠি ইস্যু করেছে। এ চিঠির আলোকে ট্রানজিট সুবিধার পণ্য বেনাপোল বন্দর থেকে পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ভারত সরকার ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করেছে। সে কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে চারটি রপ্তানি পণ্যবোঝাই ট্রাক ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশের জন্য গেলে তা ফেরত পাঠায়। ট্রাকগুলো ঢাকার রপ্তানিকারক ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি লিমিটেডের ছিল।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করায় পেট্রাপোল কাস্টমস তৃতীয় দেশের কোনো পণ্যে কার্পাস ইস্যু করেনি। ফলে গতকাল তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানির জন্য যাওয়া চার ট্রাক পণ্য তারা রিসিভ করেনি।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ভারতের ভূমি ও অবকাঠামো ব্যবহার করে কম খরচে ও কম সময়ে বাণিজ্য করার সুবিধা পেয়ে আসছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সুবিধা বাতিল করায় কয়েকটি দেশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন রপ্তানিকারকরা।

বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়া ট্রাক, কাভার্ডভ্যান খাতেও ছিল একটি বড় আয়ের উৎস। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রপ্তানি পণ্য বোঝাই শত শত ট্রাকগুলো যেতো বেনাপোল বন্দরে। সেখান থেকে পেট্রাপোল বন্দরে পণ্য আনলোড করে চলে আসতো। এতে তারা নির্দিষ্ট একটি ভাড়া পেতো। সেটাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। এমনিতেই বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে মহাসংকটে রয়েছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি। এরমধ্যে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের ফলে কেবল পেট্রাপোল স্থলবন্দরেই ৪০ শতাংশ আর্থিক ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।

পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, বাংলাদেশ থেকে আসা কন্টেইনারগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক এবং অন্যান্য পণ্য থাকতো। এসব পণ্য ভারত হয়ে যেত তৃতীয় দেশে। পণ্যগুলো বাংলাদেশ থেকে প্রথমে পেট্রাপোল স্থলবন্দরে যেত। এরপর সেগুলো কাস্টমস সিল হয়ে জাতীয় সড়ক দিয়ে যেত দিল্লি। জাহাজেও যেত কিছু পণ্য। সেখান থেকে তৃতীয় দেশে রপ্তানি হতো।

তিনি জানান, পেট্রাপোলে প্রতিদিন যদি ২০০ গাড়ি আসতো, তার ৪০ শতাংশ থাকতো এই ধরনের পণ্য, অর্থাৎ ট্রান্সশিপমেন্টের গাড়ি। পণ্যগুলো বাংলাদেশ থেকে আসতো, তা আমাদের না এবং আমাদের দেশে বিক্রিও হয় না। সেগুলো বিক্রি হয় বিদেশে। তারা আমাদের বন্দরটি ব্যবহার করতো মাত্র। কিন্তু যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা ৪০ শতাংশ কাজ হারালো। ট্রান্সশিপমেন্টে যেসব ট্রাক বা ট্রেলার যুক্ত ছিল, তারা কাজ হারালো। লজিস্টিক কোম্পানিগুলো যারা বন্দর পর্যন্ত এই পণ্যগুলো পৌঁছে দিত, তারাও কাজ হারালো।

(ওএস/এএস/এপ্রিল ১০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test