E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, হতাশ-দুশ্চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা

২০২৪ অক্টোবর ০৮ ১৩:০৪:৫২
পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, হতাশ-দুশ্চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা

স্টাফ রিপোর্টার : ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটক ভ্রমণে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। গত তিন মাস ধরে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সম্প্রতি পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের কারণে এমনিতেই পর্যটকরা পাহাড়বিমুখ ছিলেন। এখন ‘নিরাপত্তা’র অজুহাতে প্রশাসনের পর্যটক ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার লোকসান হবে জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত রাঙামাটিতে পর্যটনের ‘পিক টাইম’ ধরা হয়। গ্রীষ্মকালে খুব বেশি পর্যটক রাঙামাটি ভ্রমণ না করলেও বর্ষার শেষে শরতের মাঝামাঝি থেকে হালকা শীতের আমেজ আসতেই পর্যটকরা ভিড় করেন হ্রদ, পাহাড় ও ঝর্নার দেশ রাঙামাটিতে। ঝুলন্ত সেতুর পাটাতনে দাঁড়িয়ে বিশেষ দিনগুলো ছবির ফ্রেমে বন্দি রাখার পাশাপাশি শান্ত কাপ্তাই হ্রদের জলে নৌ-বিহারে নেমে পড়েন ভ্রমণ প্রেমীরা। পাহাড়, হ্রদ নিয়ে পর্যটকদের আগ্রহের কারণে এই খাতের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছেন তরুণ উদ্যোক্তারা।

পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দ ও আকর্ষণীয় করে তুলতে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। করেছেন কোটি টাকা বিনিয়োগ। কাপ্তাই হ্রদের ছোট ছোট দ্বীপে তৈরি করা হয়েছে রিসোর্ট। হ্রদে নামানো হয়েছে হাউজ বোট। কিন্তু গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতা, পাশাপাশি পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের কোপ পড়েছে এবার পর্যটন খাতে। ৮-৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলা ভ্রমণে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আর এতে হতাশা ও দুশ্চিন্তা ভর করেছে এই খাতের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব রাঙামাটি (টোয়ার) এর সভাপতি ও গরবা ট্যুরিজমের সিইও বাদশা ফয়সাল বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা শুধু একটা নির্দেশনা নয়; এটা দীর্ঘমেয়াদী একটা নেতিবাচক ফল বয়ে আনবে আমাদের জন্য। বাইরে থেকে সবাই ভাববে পাহাড় নিরাপদ নয়, সেখানে ঘুরতে যাওয়া নিরাপদ হবে না। সেক্ষেত্রে প্রত্যাহারের পরও কতটুকু এটা রিকভার করতে পারবো আমরা বুঝতে পারছি না। তরুণ উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। অনেকেই এই ব্যবসা ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। এই ক্ষতি বলে বুঝানোর মত নয়।’

হাউজ বোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বার্গি লেকের পরিচালক বাপ্পী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘রাঙামাটি শহরসহ এর আশপাশে যে এলাকা তাতে বর্তমানে যে পরিস্থিতি সেখানে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার মতো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। আর যদি শুধু নিরাপত্তার জন্য পর্যটক ভ্রমণ নিষেধ করা হয়, তাহলে তো পর্যটক ভ্রমণ বন্ধ রেখে পরিস্থিতি উন্নয়ন হবে না। এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলকে ভেবে দেখা দরকার।

তিনি আরও জানান, দুর্গাপূজায় টানা ছুটিতে হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলো অগ্রিম বুকিং ছিল, সেগুলো ক্যান্সেল করতে হচ্ছে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যদি এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে, তাহলে এই খাতে কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে।

রাঙামাটি ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ সভাপতি রমজান আলী বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদে পর্যটকদের নৌ-বিহারের জন্য কয়েকশত ট্যুরিস্ট বোট রয়েছে। এতে প্রায় হাজারখানেক মালিক ও শ্রমিকের সংসার নির্ভরশীল। পর্যটক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় সকলেই কষ্টে পড়েছেন। এমনিতেই এতদিন পর্যটক ছিল না। সামনের টানা ছুটিতে যখন সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন এমন নির্দেশনায় আমাদের মালিক-শ্রমিক সকলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।’

রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাবেক সম্পাদক এম নেকবর আলী জানান, পর্যটক না আসলে সব সেক্টরেই প্রভাব পড়বে। পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে এখানে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট খোলা হয়েছে, তাদের লোকসানে পড়তে হবে। কারণ পর্যটক না আসলেও ভাড়া, স্টাফ খরচ, বিদ্যুৎ, পানি বিল সব বহন করতে হবে। দ্রুত এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার প্রয়োজন।

রাঙামাটি শহরে ৫৩টি হোটেল রয়েছে। পর্যটকরা রাঙামাটি আসলে বেশিরভাগই এসব হোটেলেই রাত্রিযাপন করেন। পর্যটক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় হোটেল ব্যবসায়ীও বিপাকে।

রাঙামাটি হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দীন সেলিম জানান, গত কয়েকমাসের লোকসান পূজার এই ছুটিতে কাটিয়ে তোলার লক্ষ্য ছিল ব্যবসায়ীদের। কিন্তু ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় ব্যবসায়ীরা আরও লোকসানে পড়লো। অনেক হোটেলে কর্মচারী ছাটাই করতে হবে খরচ কমানোর জন্য।

রাঙামাটি ভ্রমণে আসলে পর্যটকদের নির্ধারিত গন্তব্য পর্যটন কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতু। যেটিকে রাঙামাটির ‘আইকন’ বলা হয়। গত দেড়মাস ধরে ঝুলন্ত সেতুর পাটাতন কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে আছে। এতে তারা দৈনিক লোকসানে দিন কাটাচ্ছে। এবার এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে আবারো পিছিয়ে পড়লো পর্যটন কর্পোরেশনের এই প্রতিষ্ঠানটি।

পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের দৈনিক ক্ষতি লক্ষাধিক টাকা।’

এদিকে জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করে অনতিবিলম্বে তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবি তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।

(ওএস/এএস/অক্টোবর ০৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২১ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test