E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নগদ টাকার সংকট কেটেছে, ব্যাংক লেনদেন স্বাভাবিক

২০২৪ জুলাই ২৫ ১৩:৪২:৩৮
নগদ টাকার সংকট কেটেছে, ব্যাংক লেনদেন স্বাভাবিক

স্টাফ রিপোর্টার : শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পাঁচ দিন সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার ব্যাংকের গ্রাহকেরা। অনেক গ্রাহক টাকার হাহাকারে ভোগেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিন কার্যদিবস সরকারের সাধারণ ছুটির পর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে ব্যাংকে টাকা তোলার হিড়িক পড়ে। ক্যাশ কাউন্টার এবং এজেন্ট পয়েন্টে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের চাপ সামলাতে অতিরিক্ত বেগ পোহাতে হয়। কোনো কোনো শাখায় নগদ টাকা পর্যাপ্ত না থাকায় নির্ধারিত সময়ের আগেই ব্যাংকের শাটার ফেলে দেওয়া হয়।

গতকাল বুধবার রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন, বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেলা ১১টায় ব্যাংক খোলার আগেই ব্যাংকের শাখাগুলোতে ভিড় করতে থাকেন গ্রাহকেরা। সকালে বেলা বাড়ার পরেই লাইন আরও দীর্ঘতর হতে দেখা যায়। প্রায় সব ব্যাংকের শাখা-উপশাখায় অন্যান্য দিনের চেয়ে গ্রাহকদের চাপ কয়েক গুণ বেশি ছিল। ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা বা অন্যান্য কাজের থেকে উত্তোলনের চাপ বেশি থাকায় সংশ্লিষ্ট ডেস্কে বাড়তি কর্মকর্তা দেওয়া হয়। এতে অনেক শাখাতেই তারল্যসংকট দেখা দেয়। গ্রাহকদের চাপ সামলাতে না পেরে কোনো কোনো শাখা বেলা ২টার আগেই গ্রাহকের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।

মতিঝিলে সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের অপেক্ষায় থাকা গ্রাহক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে গত কয়েক দিন ঘর থেকে বের হতে পারিনি। হাতে নগদ টাকা ছিল না। বেশ সমস্যায় ছিলাম। ঝুঁকি নিয়ে বের হয়ে এটিএম বুথে গেলে শাটার বন্ধ পাওয়া যায়। তাই ঝামেলা এড়াতে ১১টার আগেই ব্যাংকে চলে এসেছি।’ একই শাখায় টাকা তুলতে আসা আরেক গ্রাহক সাবরিনা সুলতানা বলেন, ‘কয়েক দিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় টাকা তুলতে পারিনি। এটিএম বুথ ঘুরেও টাকা তোলা যায়নি। কয়েকটি বুথ ঘুরে দেখেছি, সেখানে টাকা না থাকায় আমার মতো আরও অনেকেই বেশ সমস্যায় পড়েছেন। পরিশেষে ব্যাংক খোলার কথা শুনেই চলে এসেছি।’

সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণে তিন কার্যদিবস ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ সময়ে হয়তো অনেক গ্রাহকই তাঁদের নগদ টাকা কেনাকাটায় শেষ করেছেন। এ কারণে আজকের বেশির ভাগ গ্রাহকই টাকা উত্তোলন করছেন। টাকা তোলার বাড়তি চাপ সামলাতে অতিরিক্ত লোক দেওয়া হয়েছে।

একই অবস্থা দেখা যায় ইসলামী ব্যাংকের দিলকুশা শাখায়। টাকা তুলতে আসা একজন গ্রাহক বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে নগদ টাকা সংকটের কারণে নানান সমস্যায় পড়েছি। বাজার করতে পারছিলাম না। ব্যাংক খোলায় লেনদেন করতে পেরে ভালোই লাগছে।’

গ্রাহকের চাপ সামলাতে না পেরে দেড়টার দিকেই বন্ধ দেখা গেছে এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখা। সেখানে গ্রাহক পরিচয়ে প্রবেশ করতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা প্রবেশ করতে দেননি। ৩টা পর্যন্ত লেনদেন হওয়ার কথা; কিন্তু দেড়টার দিকেই কেন বন্ধ জানতে চাওয়া হয়ে এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে বাইরে থাকা কয়েকজন বলেন, টাকা শেষ, তাই আর ঢুকতে দিচ্ছে না। তবে পাশেই সাউথইস্ট ব্যাংকে অনেকটা স্বাভাবিক লেনদেন লক্ষ্য করা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকতা জানান, সকালের দিকে চাপ কিছুটা বেশি ছিল। এখন স্বাভাবিক রয়েছে। এতটা যে চাপ হবে, তা আগে থেকেই অনুমান করা ছিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরিস্থিতির কারণে টানা তিন দিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। সে কারণে আজকে ব্যাংকে ভিড় বাড়াটা স্বাভাবিক। তবে কোথাও টাকা দিতে পারছে না, এই ধরনের তথ্য নেই। এই কয়েক দিন মানুষ এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পেরেছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি দেখা যায়, যারা টাকার অভাবে বিদ্যুতের জন্য কার্ড রিচার্জ করতে পারেননি।

এদিকে দেশের সাম্প্রতিক ঘটনার কারণে যাঁরা ক্রেডিট কার্ডের বিল, ঋণের বকেয়া ও বিভিন্ন সঞ্চয়ী স্কিমের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি, বাড়তি সুদ ছাড়াই তাঁদের অর্থ পরিশোধে ব্যবস্থা নিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বুধবার পৃথক দুই প্রজ্ঞাপনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কারফিউ ও সাধারণ ছুটির সময়ে যাঁদের ঋণের বকেয়া, ক্রেডিট কার্ডের বিল ও সঞ্চয়ী আমানতের কিস্তি দেওয়ার সময় ছিল, তাঁরা ৩১ জুলাই পর্যন্ত তা জমা দিতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ১৮-২৫ জুলাই সময়ে প্রদেয় কিস্তির জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো ধরনের বাড়তি সুদ, জরিমানা, বিলম্ব মাশুল আদায় করতে পারবে না। এই সময়ে কিস্তির টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সঞ্চয় স্কিম বাতিলও করা যাবে না।

(ওএস/এএস/জুলাই ২৫, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test