E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ক্রেতা নেই, চামড়া নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

২০২৪ জুন ২০ ১৮:১২:০৩
ক্রেতা নেই, চামড়া নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের চামড়ার ব্যবসা চলে গেছে দানের খাতায়। লাখ টাকায় কেনা পশুর চামড়া ফড়িয়া বা মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মাত্র ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা দাম দিচ্ছেন- তাই বিক্রি না করে মাদ্রাসা, মসজিদ বা এতিম খানায় বিনামূল্যে দিয়ে দিচ্ছেন। আর ছাগল বা ভেড়ার চামড়া কেউ কেউ ফেলেও দিচ্ছেন। 

জেলার সবচেয়ে বড় চামড়ার হাট পাকুটিয়ায় চামড়ার ক্রেতা নেই। বুধবার (১৯ জুন) কোরবানির পর প্রথম হাটে দু-একজন ক্রেতা এলেও দাম দিচ্ছেন সরকার বেধে দেওয়া দামের চেয়েও কম।

কয়েকজন চামড়া বিক্রেতা জানান, এক সময় পাকুটিয়ার চামড়ার হাট সপ্তাহে বুধ ও রোববার বসতো। এখন চামড়ার বাজার নেই- তাই বুধবারে হাট জমেনা, রোববারে ক্রেতারা এলে কিছুটা জমে ওঠে। কোরবানির পর বুধবারের হাটটি ছিল প্রথম। তাই তারা কাঁচা চামড়া নিয়ে এসেছিলেন। ক্রেতা না থাকায় ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন- বাড়িতে গিয়ে লবন মেখে ডাবর(স্তুপ) দিয়ে রাখবেন।

এদিকে, জেলায় চামড়ার আড়তদার রয়েছে কালিহাতী উপজেলার বল্লায়। বল্লা এলাকায় ২০-২৫টি আড়ত থাকলেও লোকসানের কারণে এখন ৭-৮জন আড়তদার রয়েছেন। তাদের মধ্যে- জুলহাস কোম্পানী, আহাম্মদ আলী, আজগর আলী, শাহালম মিয়া, দীন ইসলাম, মিজানুর রহমান, আলী হোসেনের আড়তে কিছু কিছু কাঁচা চামড়া কেনা হচ্ছে।

তারা জানায়, মফস্বলে ফুট হিসেবে কেউ চামড়া বিকিকিনি করেনা। চোখের মাপে সাইজ দেখে চামড়া কিনে থাকেন। এবার তারা মৌসুমি চামড়ার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিপিস গরুর (বড়) চামড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় কিনছেন।

কাঁচা চামড়া সংগ্রহের পর দ্রুত লবণ মাখিয়ে ডাবর(স্তুপ) দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। তাদের এ কার্যক্রম আরও ৩-৪দিন চলবে। প্রতিপিস চামড়ার সাথে লবণ লাগানো ও শ্রমিক মিলে প্রাথমিক পর্যায়েই খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৬০০ টাকা। অথচ ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত চামড়ার দর প্রতি পিস মাত্র ১০০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।

স্থানীয় আড়তদাররা জানায়, বল্লা এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীদের ২৫-৩০ কোটি টাকা ঢাকার ট্যানারী মালিকদের কাছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাকি পড়ে রয়েছে। ট্যানারী মালিকরা ঈদের আগে দিতে চেয়ে বছরের পর বছর ঘুরাচ্ছেন। তারাও ফড়িয়া বা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে চামড়া কিনে ট্যানারীতে সাপ্লাই দিয়েছিলেন। ট্যানারী মালিকরা টাকা না দিলেও কেউ কেউ জমি-বাড়ি বিক্রি করে ফড়িয়া বা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ করে ব্যবসা গুটিয়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।তারা জানান, রাজধানীর পোস্তা থেকে চামড়া শিল্প সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তরের কারণে পোস্তা তার জৌলুশ হারিয়েছে। একইভাবে চামড়ার দর পতনের কারণে এতদাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পথে বসেছেন। যারা আছেন তারা অতিকষ্টে পেশাটাকে টিকিয়ে রেখেছেন।

অথচ স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এতদাঞ্চলের ঘরে ঘরে গুদাম ছিল- বড় বড় আড়ত ছিল। সেখানে এখন আড়ত আছে মাত্র ৭-৮টি। সে সময় ফড়িয়া বা মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করতেন। এখন মসজিদ বা এতিম খানায় গিয়ে অনেকগুলো চামড়া একত্রে কিনে নিয়ে আসেন। এক লাখ টাকায় কেনা গরুর চামড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করার চেয়ে মসজিদ বা এতিমখানায় দান করে দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করেন কোরবানি দাতারা।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, টাঙ্গাইলে কাঁচা নচামড়ার বড় হাট ঘাটাইলের পাকুটিয়া। এবার সেখানেও চামড়া ও ক্রেতার উপস্থিতি নগণ্য। গরুর চামড়ার দর কম হলেও পাওয়া যায়। কিন্তু ছাগল বা ভেড়ার চামড়ার কোনো দাম নেই। ছাগল বা ভেড়ার চামড়া কেউ কেউ সড়কে ফেলে দেন অথবা অনুরোধ করলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৫-৮ টাকা পিস নিয়ে নেন।

উল্লেখ্য, এবার ঢাকায় সরকার নির্ধারিত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুটের মূল্য ঠিক করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এছাড়া ঢাকায় খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। তবে এই দামে চামড়া কিনছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ী বা ফড়িয়ারা। লবণের দাম বৃদ্ধি এবং প্রক্রিয়াজাত খরচ বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দিচ্ছেন তারা।

(এসএম/এসপি/জুন ২০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test