E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ঈদের আগে অর্থনীতিতে স্বস্তি

২০২৪ জুন ১৪ ১৯:০৩:২৩
ঈদের আগে অর্থনীতিতে স্বস্তি

স্টাফ রিপোর্টার : নানা সংকটের গেঁড়াকলে আটকে থাকা অর্থনীতির পালে লেগেছে স্বস্তির হাওয়া। আর এই স্বস্তি এসেছে আসন্ন ঈদকে ঘিরে। ঈদ ঘিরে সার্বিক যেই লেনদেন হবে, তাতে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।কোরবানির পশুর বাজার, রেমিট্যান্স, কেনাকাটা, ভ্রমণ ও বিনোদন ব্যয় থেকে আর্থিক লেনদেন অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। কোরবানির ঈদে সবচেয়ে বেশি অর্থের লেনদেন হয় পশুর বাজার ঘিরে। পশুর বাজারে গত ঈদে বিক্রি হয়েছিল ৬০ হাজার কোটি টাকার, এবার লক্ষ্য ৭৫ হাজার কোটি টাকার। 

অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পশুর চামড়ারও ভূমিকা রয়েছে। অন্যদিকে বছরের অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে এ সময় রেমিট্যান্স আসে সবচেয়ে বেশি। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী এবং গার্মেন্টস শ্রমিক ও সারা দেশের দোকান কর্মচারীদের বেতন-বোনাস যুক্ত হয় ঈদ বাজারে। রোজার ঈদে পোশাক ও খাদ্যপণ্যে মানুষ বেশি ব্যয় করে। তবে এই ঈদেও এ খাতে ব্যয় নেহায়েত কম নয়। একইভাবে লবণ, মসলা, ছুরি-চাকু, পরিবহন, ভ্রমণ-বিনোদন বাবদও বেশ মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মানুষের সম্পৃক্ততা বিবেচনায় নিলে ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির গুরুত্ব দিনকেদিন বাড়ছে। বিশেষত বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশে মুসলমানদের বেশিরভাগই এখন পশু কোর বানি দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। কোরবানির আগে ও পরে মিলিয়ে সপ্তাহ দেড়েক সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। পশুর হাট থেকে শুরু করে ব্যাংকপাড়া এবং পণ্যবাজার থেকে কামারবাড়ি-সবখানেই এখন চরম ব্যস্ততা।

অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের মানুষের আর্থিক টানাটানি আছে এবারও, তবু আমার বিশ্বাস কোর বানির ঈদ ঘিরে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। কারণ এই সময় অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকাংশই চলে ঈদকে ঘিরে। আর এ কারণেই প্রতি বছরই দেশের অর্থনীতিতে ঈদের গুরুত্ব বাড়ছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে দেশে কোরবানি দেওয়ার হার যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে কোরবানির পশুর সংখ্যাও। ২০২২ সালে দেশে কোর বানি দেওয়া হয় ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু। ওই বছর দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু ছিল ১ কোটি ২১ লাখ। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে দেশে কোরবানি দেওয়া হয় ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি, যার আর্থিক মূল্য ৬০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

গত বছর কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। এবার দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। প্রত্যাশা করা হচ্ছে এবার কোর বানি দেওয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৫ হাজার থেকে ১ কোটি ১০ হাজার হতে পারে। যার মূল্য হতে পারে ৭০-৭৫ হাজার কোটি টাকা।

পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে চামড়ার ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, প্রতি বছর দেশে দেড় কোটিরও বেশি পশুর চামড়া পাওয়া যায়। এর প্রায় ৬০ শতাংশই আসে কোর বানির পশু থেকে। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ খাতের মূল বাজার ৪-৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য বাজারসহ এ খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়।

বছরের যে কোনো মাসের চেয়ে দেশে রেমিট্যান্স বেশি আসে এই কোর বানির ঈদের আগে। বছরের অন্য মাসের পুরো ৩০ দিনে যেখানে রেমিট্যান্স আসে ১৫ থেকে ১৬ হাজার কোটি- টাকার মতো, সেখানে কোর বানির ঈদের আগের মাত্র দুই সপ্তাহেই আয়ে ১৬ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো।

দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে গত মে মাসে ২২৫ কোটি (২.২৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর চলতি জুন মাসের প্রথম ৭ দিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৭২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এর আগে কখনোই এক দিনে ১০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।

বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা) হিসাবে। টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ২২৪ কোটি। মাসের বাকি ১৮ দিনেও এই হারে এলে মাস শেষে রেমিট্যান্সের হিসাব ৩১১ কোটি ২৭ লাখ (৩.২৭ বিলিয়ন) ডলারে পৌঁছবে। যা হবে একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। যেহেতু আগামী ১৭ জুন ঈদুল আজহা, তাই বাকি কয়েক দিনে যত রেমিট্যান্স আসবে তাতে ঈদের আগে চলে আসবে ১৬ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন, রসুনের চাহিদা ৫ লাখ টন, আদা ৩ লাখ টন। এর উল্লেখযোগ্য অংশইপশুকোরবানিতে ব্যবহার হয়। গরম মসলা বিশেষ করে এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরা, তেজপাতারও উল্লেখযোগ্য অংশ কোরবানিতে ব্যবহার হয়। কোরবানির বাজারে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হবে এসব পণ্যে। কোরবানির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো কামার আইটেম। ছুরি, বঁটি, দা, চাপাতি, কুড়াল, রামদা ছাড়া কোরবানিই সম্ভব নয়। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কোর বানিতে পণ্যটির বাজার এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের এক সমীক্ষায় বলা হয়, ঈদে পরিবহন খাতে অতিরিক্ত যাচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকাও বেশি।এ উৎসবে ভ্রমণ ও বিনোদন বাবদ ব্যয় হয় ৪ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে আরও কয়েকটি খাতের কর্মকাণ্ড অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সাড়ে ২০ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সম্ভাব্য বোনাস বাবদ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। দেশব্যাপী ৬০ লাখ দোকান কর্মচারীর বোনাস ৫ হাজার কোটি টাকা। পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭০ লাখ শ্রমিকের সম্ভাব্য বোনাস ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ অর্থ ঈদ অর্থনীতিতে বাড়তি যোগ হচ্ছে। এ ছাড়া কোর বানির ঈদে ফ্রিজের বিক্রি বেড়ে যায়। কোর বানির ঈদে ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার ফ্রিজ বিক্রি হয় বলে জানা গেছে।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, কোরবানিকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এই অর্থ শহর থেকে গ্রামে আবার গ্রাম থেকে শহরে আসছে। এক কথায় ঈদকে ঘিরে দেশের সর্বত্র একটা কর্মচাঞ্চল্য দেখা দেয়, গতি আসে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে।

তিনি আরও বলেন, সত্য বলতে কি- আমরা যারা ব্যবসায়ী তারা সারা বছর অপেক্ষায় থাকি দুই ঈদ বাজারের। এর মধ্যে রোজার ঈদ বাজার থাকে পোশাক ও খাদ্যপণ্যকে ঘিরে, আর কোরবানির ঈদ চাঙ্গা থাকে পশুর বাজারকে কেন্দ্র করে। যদিও এখন দেশের মানুষ আর্থিক টানাপাড়েন রয়েছে, তবু আমাদের প্রত্যাশা এবারের ঈদেও সব শ্রেণির ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভালো হবে।

(ওএস/এসপি/জুন ১৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test