E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সংসদে ৩৮ হাজার কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস

২০২৪ জুন ১০ ২৩:২৪:৫৯
সংসদে ৩৮ হাজার কোটি টাকার সম্পূরক বাজেট পাস

স্টাফ রিপোর্টার : চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৩৭ হাজার ৮১৭ কোটি ৪০ লাখ ৫৭ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। সোমবার (১০ জুন) সংসদ অধিবেশনে ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২৪’ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিল পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরা আর্থিক খাতে বিভিন্ন অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি পাচার অর্থ ফিরিয়ে আনার এবং পাচারকারীদের চিহ্নিত করার দাবি জানান।

আগামী ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরের কার্যক্রম নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে মঞ্জুরিকৃত অর্থের বেশি বরাদ্দ ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব দেওয়ার জন্য এ সম্পূরক বিল আনা হয়।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে ৩৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। ৪০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাজেট অপরিবর্তিত রয়েছে বা কমেছে।

সার্বিকভাবে ৪৭ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা কমে সংশোধিত বাজেট হয়েছে সাত লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। সম্পূরক বাজেটে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৬৪৯ কোটি ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা পেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

সম্পূরক বাজেটে ২০টি দাবির বিপরীতে ৬৬টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন চার জন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে দুটি মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনা হয় - অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। বাকি প্রস্তাবগুলো আলোচনা ছাড়াই ভোটে দেন স্পিকার।

এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন। তাদের বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনিয়মের যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলো অনেকটা ঢালাও অভিযোগ। তবে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়।

এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে অথচ ৫০ হাজার টাকার জন্য কৃষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে এখানে টাকা খরচ করা কেন। চুপ থাকাই ভালো।

তিনি বলেন, আর্থিক বিভাগের বিভাগের অনিয়মের প্রতিবাদ হিসেবে তিনি ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বড় কাজ ব্যাংকিং খাতকে সুপারভাইজ করা। কিন্তু জনগণের টাকা লুটপাট হচ্ছে, ব্যাংকে অনিয়ম হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বা বাংলাদেশ ব্যাংক কি সুপারভাইজ করছে? পি কে হালদার কয়েক হাজার কোটি নিয়ে চলে গেছেন, বিভিন্ন সময় বড় বড় প্রতিষ্ঠান ঋণ নেয়; পরে তাদের সুদ মওকুফ করা হয়, এসবের জবাব কি অর্থমন্ত্রী দিতে পারবেন।

জাতীয় পার্টির এ সদস্য বলেন, ডলার সংকটের বড় কারণ পাচার। আগের অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছুই শুনতে চাইতেন না। আর্থিক খাতে অনিয়ম বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা যিনিই হোন, যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, কানাডা, ইউরোপ আমেরিকায় বাড়ি, হোটেল করেছেন, তদন্ত করে তাদের চিহ্নিত করা হোক। টাকা ফেরত আনতে না পারলেও তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানান তিনি।

স্বতন্ত্র সদস্য পঙ্কজ নাথ বলেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে যে সংযত নীতি পরিহার করে আরও উদার হওয়া দরকার। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি ।

আরেক স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কেন অতিরিক্ত মঞ্জুরি দাবি করেছে, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। অতীতে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। দেশে লুটপাট করে যারা অর্থ পাচার করেছেন, তাদের সে অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে।

আইসিটি বিভাগের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে চলছে কি না, সেই খবর নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এ প্রকল্পে যারা শিখতে আসে, তারা সঠিকভাবে আত্মস্থ করতে পারে না। এখানে অপব্যয় হচ্ছে।

যশোরে শেখ হাসিনা আইসিটি পার্কের অনিয়মের বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নামে আইসিটি পার্ক করেছেন, সেখানে হোটেল ম্যানেজমেন্ট, বিয়ের অনুষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠান কী করে হয়?

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ বলেন, আইসিটি খাতে কাজ যে হচ্ছে না, তা ঠিক নয়। তবে, দোয়েলের বাক্স খুললে যদি চীনা কম্পিউটার পাওয়া যায় তাহলে- এটা কি অপচয় নয়, দুর্নীতি নয়? এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাটা কী নিয়েছেন, তা সংসদ জানতে চায়। দোয়েলের বাক্স খোলার পরে দেখা গেল চায়নিজ পচা মাল। এরপর বন্ধ করে দেওয়া হলো।

তিনি বলেন, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের নামে যে কম্পিউটার দিয়েছেন, তাতে কি আদৌ কাজ হচ্ছে নাকি জং ধরে গেছে। ডাক বিভাগের আধুনিকায়নের নামে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। ডাক বিভাগের জমির অবস্থা কী, জানতে চান তিনি।

(ওএস/এএস/জুন ১০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test