E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

ছাত্রদের প্রতিনিধি সরকারে রেখে দল নির্বাচন করলে মানবে না বিএনপি

২০২৫ জানুয়ারি ২৩ ১৩:০৭:৪৮
ছাত্রদের প্রতিনিধি সরকারে রেখে দল নির্বাচন করলে মানবে না বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করার পরও যদি সরকারে তাদের প্রতিনিধি থাকে তাহলে সরকার নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। এভাবে তারা নির্বাচন করতে চাইলে রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে না।

বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বিরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেছেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন করতে পারবেন না।

মঙ্গলবার নেওয়া এ সাক্ষাৎকার বুধবার প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।

জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, আমরা তো চাই আর্লি ইলেকশন। আগেও বলেছি আমরা। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার, যেটা ন্যূনতম সংস্কার, সেগুলো করে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। এটা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের যে অভিজ্ঞতা দেখেছি আমরা অতীতের কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টগুলোতে, তাতে করে এটা অসম্ভব কিছু না। এটা পসিবল যদি গভর্নমেন্ট চায় যে, ইলেকশন তারা করবে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে বা আগস্টের মধ্যে, তারা করতে পারে।

নির্বাচন যে সময়ের মধ্যে আশা করছেন, সেটা না হলে পদক্ষেপ কী হবে? এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেক্ষেত্রে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। আমাদের পার্টিতে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো এবং আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলনে ছিলেন-আছেন, তাদের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করবো। আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেবো।

সংস্কার নিয়ে ফখরুল বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস যতগুলো সংস্কারের মধ্যে হাত দিয়েছেন, অতগুলো সংস্কার করতে গেলে আপনার দশ বছরের মধ্যেও শেষ হবে না। আর সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। দু-বছর আগে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা দিয়েছি আমরা। তার মধ্যে এই বিষয়গুলো তো রয়েছে।

নির্বাচন পর্যন্ত এ সরকার থাকবে কি না তা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যদি সরকার পূর্ণ নিরপেক্ষতা পালন করে, তাহলেই তারা নির্বাচন কনডাক্ট করা পর্যন্ত থাকবেন। তা না হলে তো নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। নিরপেক্ষতার প্রশ্ন আসতে পারে। কেননা, এখানে আমরা জিনিসটা লক্ষ্য করছি যে, ছাত্ররা একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা চিন্তা করছেন। সেখানে যদি ছাত্রদের প্রতিনিধি এই সরকারে থাকে, তাহলে তো নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। ওইটা হচ্ছে, সম্ভাব্য কথা। কিন্তু যদি তারা মনে করে যে, (সরকারে) থেকেই তারা নির্বাচন করবেন, তাহলে তো রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে না।

সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে এখন কোনো প্রশ্ন তৈরি হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন কোনো প্রশ্ন নেই। আমাদের কাছে কোনো প্রশ্ন নেই।

সংস্কার প্রসঙ্গ
মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধান সংস্কারের বিষয় রয়েছে, জুডিশিয়াল কমিশনের কথা আমরা বলেছি, আমরা ইলেকশন কমিশনের কথা বলেছি, আমরা ব্যুরোক্রেসি সংস্কারের কথা বলেছি ৩১ দফায়, আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা বলেছি -এগুলো আমাদের সমস্ত বলা আছে। এখন সেক্ষেত্রে তারা যেটা করেছেন, সেটা কী রিপোর্ট নিয়ে আসছে আমরা জানি না।

যদি রিপোর্টগুলোয় দেখা যায় যে, আমাদের সঙ্গে মিলে গেছে, তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যেগুলো মিলবে না, সেগুলো তো একটা ন্যূনতম কনসেনসাস হতে হবে। তারপরে সেটা হতে হবে।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আপনি সংস্কার দিলেন, কিন্তু সেটাকে আপনার অ্যাপ্রুভ করবে কে? তার জন্য তো আইনগত যাদের অধিকার আছে, তারাই করতে পারবে। দ্যাট ইজ পার্লামেন্ট।

পার্লামেন্ট ছাড়া কিন্তু কোনো সাংবিধানিক সংস্কার কঠিন হবে। এমনকি অন্যান্য বিষয় কতগুলা আছে, যেগুলা আপনার সংবিধানে কিছু কিছু পরিবর্তন আনার দরকার আছে। কিন্তু সেগুলা পার্লামেন্ট ছাড়া সম্ভব না। সেজন্যই আমরা মনে করি, দ্য সুনার দ্য ইলেকশন ইজ বেটার।

কখনই স্বৈরতান্ত্রিক ছিলাম না
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা কখনই স্বৈরতান্ত্রিক ছিলাম না। আমরা সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলাম। এখানে মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসি আমরাই নিয়ে আসছি। একদলীয় শাসনব্যবস্থা শেখ মুজিবের, সেখান থেকে ট্রানজিশন টু মাল্টিপার্টি সিস্টেম তো জিয়াউর রহমান সাহেব করেছেন। গণমাধ্যমকে মুক্ত করা, আমরাই করেছি। আপনার পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি তো আমরাই নিয়ে আসছি। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট সিস্টেম আমরাই চালু করেছি। আপনি প্রত্যেকটাই দেখেন। সুতরাই প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমাদেরকে কেউ স্বৈরাচারী আঙুল তুলবে এ কথা আমরা কখনই মেনে নিতে পারবো না।

দলটিই তো আমাদের ওইরকম না। আমাদের দলটিই তো গণতান্ত্রিক দল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। ইউ হ্যাভ অলওয়েজ ট্রাইড টু প্রাকটিস ডেমোক্রেসি। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। ১৫ বছর আমরা লড়াই করলাম এই গণতন্ত্রের জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। খালেদা জিয়া প্রায় ছয়টা বছর তিনি কারা অন্তরীণ ছিলেন এই মামলার জন্যে, এই গণতন্ত্রের জন্যে। এবং আমাদের তারেক রহমান সাহেব এখনও বিদেশে আছেন। আমাদের প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের প্রায় সাতশত মানুষ গুম হয়ে গেছে। আমাদের হাজার হাজার লোক খুন হয়েছে- গণতন্ত্রের জন্যে। এদেশের মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিল গণতন্ত্রের জন্যে। সুতরাই আমাদের দলে সেই প্রশ্নই উঠতে পারে না। ডেমোক্রেসির চ্যাম্পিয়ন বলতে পারেন আমাদেরকে আপনি।

বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে বিরোধ প্রসঙ্গ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বেশ কিছু দাবি বিভিন্ন সময় তুলেছিল, যেগুলোর বিরোধিতা করেছিল বিএনপি। সে বিষয়ে ফখরুল বলেন, আপত্তির কারণ খুব সঙ্গত কারণ। আমরা তো একটা সংবিধানের অধীনে আছি। রাষ্ট্রের যে সংবিধান, সেই সংবিধানের অধীনে আমরা আছি। এই সরকারও শপথ নিয়েছে সেই সংবিধানের অধীনে। সেখানে রাষ্ট্রপতিকে যে অপসারণ করবে, সেটা কে করবে? এটা এক। দুই নম্বর হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি আনবেন কাকে? তিন নম্বর হচ্ছে, এটার লেজিটেমেসি কার হাতে থাকবে? পার্লামেন্ট নাই। সুতরাং ওই প্রশ্নটাকে আমরা মনে করি যে, অবাস্তব প্রশ্ন। আর যেখানে ওটা কোনো ক্রাইসিস ছিল না। ওই ধরনের কোনো ক্রাইসিস তৈরি হয়নি। সেটা আমরা মনে করেছি, এটা ক্রাইসিস তৈরি করা নতুন করে। আমাদের সামনে এখন একটাই মূল সমস্যা, সেটা হচ্ছে যে, আপনি নির্বাচন অতিদ্রুত করে ফেলা, একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দেওয়া। এটা তো আপনার এসেন্স অব ডেমোক্রেসি।

এটা গেল এক। আপনার আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র। এটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাও করা হয়নি আগে, আমরা জানিও না এটা। আর (অভ্যুত্থানের) পাঁচমাস পরে এই ডিক্লারেশনের কোনো যুক্তি আছে কি-না? এটা কি আপনার সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার মতো ব্যাপারটা? যেটা হয়েছে-হচ্ছে যে, যাদের অপসারণ করা হয়েছিল ওই সরকারের আমলে, এখন আবার তারা ফেরত পাচ্ছে? এটা তা না। এটা একটা অভ্যুত্থান, একটা আন্দোলন। সেই আন্দোলনের ডিক্লারেশন তখনই হওয়া উচিত ছিল। এটা ছাত্ররা তারা দিতেই পারে। কিন্তু আমরা ওটার পার্ট তখনই হবো, যখন গোটা জাতির প্রশ্নটা আসবে তার মধ্যে, টোটাল জিনিসটা। কোনো আলোচনা না করেই তো আমরা এটা করতে পারি না। প্রশ্নই উঠতে পারে না।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ২৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৩ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test