E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই হচ্ছে টাকা পয়সার বিনিময়ে

২০১৭ মার্চ ২৩ ১৯:২০:৩৪
মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই হচ্ছে টাকা পয়সার বিনিময়ে

আহম্মদ ফিরোজ, ফরিদপুর : আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী, মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর ফরিদপুরের সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নূর মোহাম্মদ বাবুল বলেছেন, যেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এর প্রধান কারণ দুর্নীতি। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই হচ্ছে টাকা পয়সার বিনিময়ে। টাকার বিনিময়ে ভুয়া স্বাক্ষি সাজিয়ে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে আমার কাছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের গোয়ালচামট ১ নম্বর সড়কের বাসভবনে তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের নিকট তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে জাতি। যারা মুক্তিযুদ্ধে ছিলো না তাদের ইতিহাস এখানে এসেছে। প্রতিটি থানায় যেসব প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, তাদের নিকট হতে যুদ্ধকালীন ঘটনা লিপিবদ্ধ করতে পারলেই আসল মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় জানা যাবে।

প্রসঙ্গত, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল ’৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে বীরোচিত ভূমিকা রাখেন। ২৫ মার্চ গণহত্যার পর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তিনি ৪শ’ যুবক নিয়ে তাঁর গ্রাম লৌহজং থানায় পৌছে ১০টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও ১ হাজার বুলেট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন। এরপর আগষ্টে আগরতলার মেলাবাড়ে তিনি ২ নং সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের সাথে দেখা করেন।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে বিমানযোগে কলকাতা এসে মেজর জলিলের ৯ নং সেক্টরে যোগ দেন। এরপর ২ জন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. এস এ মালেকসহ প্রায় ৮শ’ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ৪ দিন পায়ে হেটে এসে তারা কাশিয়ানীর ওড়াকান্দি স্কুলে ক্যাম্প গড়েন। এরপর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে গোপালগঞ্জে পাকসেনাদের ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। এই যুদ্ধে ১৯ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১০ অক্টোবর তাঁর নেতৃত্বে ভেদরগঞ্জ থানা দখল করেন মুক্তিযোদ্ধারা। ১৪ অক্টোবর শরিয়তপুরের গোসাইরহাটে তাঁর নেতৃত্বে হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে ৬৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। এছাড়া ৮ ডিসেম্বর বিনাযুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাগণ গোপালগঞ্জ দখল করেন। ১৪ ডিসেম্বর প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ভাংগা হতে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা হন। ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে তিনি ফরিদপুরে অবস্থানরত তৎকালীন পাক বাহিনীর কমান্ডার মেজর আবরারকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেন।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুলের এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যুদ্ধকালীন বিভিন্ন দুর্লভ ছবিসহ যুদ্ধোত্তর তাকে দেয়া সম্মাননা ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিস্মারক স্থান পেয়েছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালীন পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট তিনি এখানে সংরক্ষণ করেছেন। পলাশী থেকে রেসকোর্স ইতিহাস এসে স্থান পেয়েছে। স্বাধিনতার জন্য সালে এদেশের দামাল ছেলেরা কিভাবে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেছে, যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছে সেই ইতিহাস যাতে আগামী প্রজন্ম সে লক্ষ্যেই এ জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে বলে এ বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান।

(এএফ/এএস/মার্চ ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test