E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ঘুষের টাকা ফেরত দিলেন পুলিশের উপ-কমিশনার জিল্লুর

২০১৫ জুলাই ০৩ ১৫:৪৫:৫৫
ঘুষের টাকা ফেরত দিলেন পুলিশের উপ-কমিশনার জিল্লুর

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বিভিন্ন পদমর্যাদার ২৩০ পুলিশ সদস্যের পদোন্নতির জন্য ‘ঘুষের তহবিল’ থেকে ৫০ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সাসপেন্ড হওয়া উপ-কমিশনার জিল্লুর রহমান। বৃহস্পতিবার রাতে বিএমপি’র সদর দপ্তরে এ টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএমপি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) সোয়েব আহমেদ-পিপিএম।

সূত্র মতে, পরবর্তীতে যারা পদোন্নতি পাওয়ার প্রলোভনে এ টাকা ঘুষ হিসাবে দিয়েছিলেন তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বরিশাল মেট্টোপলিটন পুলিশের একের পর এক কেলেংকারীর ঘটনায় চরম অসস্তিতে রয়েছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। নগরবাসীর কাছে ইমেজ সংকটের পাশাপাশি পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে বিএমপি’র কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্তেই বিএমপি’র কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য ফাঁস হয়ে যায়।

আইজিপি’র সুপারিশে বুধবার বিএমপি’র উপ-কমিশনার জিল্লুর রহমানকে সাসপেন্ড করে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করার মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে বিএমপি সদর দপ্তরে ঘুষের টাকার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা জিল্লুর রহমান ফেরত দিয়েছেন। এরআগে পদোন্নতিতে বড় কর্তাদের জন্য ঘুষ তহবিল গঠনের দায়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের তিন এএসআই, এক নায়েক ও ছয় কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহা-পরিদর্শক (এমঅ্যান্ডপিআর) মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পদোন্নতির জন্য ঘুষের টাকা সংগ্রহে বরিশাল মহানগর পুলিশের নিম্নপদের পুলিশ সদস্যদেরকে প্রলুব্ধ বা উদ্বুব্ধ করেছেন, এমন অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর।

ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রফেসশনাল স্ট্যান্ডার্ড শাখা ওই বিষয়টিতে অনুসন্ধানে নামে। স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই জিল্লুর রহমানকে সাসপেন্ড করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন আইজিপি। বিএমপি সূত্রে জানা গেছে, বিএমপি’র সৃষ্ট পদের বিপরীতে পদোন্নতি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পদোন্নাতি প্রত্যাশী ২৩০ জন পুলিশের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে সংগ্রহ করা হয়।

ইতোমধ্যে ৭৭ লাখ টাকার তহবিল গঠন করেন তারা। যদিও অভিযুক্তদের ব্যাংক একাউন্টে তদন্তে পাওয়া গেছে মাত্র ১৭ লাখ টাকার হদিস। বাকী টাকা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দেওয়ার কথা বলে মধ্যম সারির পুলিশ কর্মকর্তারা আতœসাত করেন। সেখান থেকেই জিল্লুর রহমান বৃহস্পতিবার রাতে সোনালী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের দুটি চেকের মাধ্যমে ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। আরো ১৭ লাখ টাকা ডাচ বাংলা ব্যাংকের বরিশাল শাখায় বিএমপি’র এএসআই আনিসুজ্জামান, নায়েক কবীর হোসেন ও চালক বাবলু মজুমদারের যৌথ হিসাব নম্বরে জমা রয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কোটি টাকার ঘুষ তহবিল সংগ্রহের অভিযোগে গত ২৭ জুন উপ-পুলিশ কমিশনার জিল্লুর রহমানের বডিগার্ডসহ মেট্রোপলিটন পুলিশের ১০ সদস্যকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়।

পুলিশ সিকিউরিটি সেলের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আলমগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, বরিশাল মেট্রোপলিটনের শীর্ষ কর্মকর্তা হওয়ায় পুলিশ কমিশনার শৈবাল কান্তি চৌধুরী ঘুষ কেলেঙ্কারির দায় থেকে কোনভাবেই এড়াতে পারেন না। তদন্তে স্পষ্ট যে, শীর্ষ কর্মকর্তারা এই ঘটনার শুরু থেকে সবকিছুই জানতেন। ঘুষ সংগ্রহে বিএমপি’র এক ডিসি’র কার্যালয়ে বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকের ঘটনা পুলিশ কমিশনারসহ চার ডিসি জানলেও পরে তা ধাঁমাচাপা দেয়া হয়। এই অপরাধে কমিশনারকে বিএমপি থেকে প্রত্যাহারসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ.কে.এম শহীদুল হক বলেছেন, অপরাধীর বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। কেউ কোন ফৌজদারি অপরাধ, দুর্নীতি করলে সে পুলিশ হিসেবে গণ্য হবে না। তাকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধীকে কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা অসদাচরণ করবে তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আইজিপিসহ পুলিশ সদর দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কঠোর মনোভাবের কারনে চরম অস্বস্থিতে পড়েছেন বিএমপি’র শীর্ষ কর্মকর্তারা। ঘুষ কেলেংকারীর বাইরে উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আবু রায়হানের দেহরক্ষী রওনক হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের। ডিবি পুলিশের অভিযানে ইয়াবাসহ আটকের পর আবার মুক্তি। সংখ্যালঘু একদিনমজুরকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য গৌরনদী থানার ওসির হুমকি, ট্রাফিক বিভাগের ঘুষ বাণিজ্যসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় চরম অসস্থিতে ভুগছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। পেশাগত অবসাদ তাদের ঈদের খুশিকে মাটি করে দিয়েছে।

(টিবি/এএস/জুলাই ০৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test