E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমবায় সমিতি

রায়পুরে গ্রাহকদের মাথায় হাত, দু’কর্মীকে গণপিটুনি

২০১৪ মে ০৯ ১৭:৪৫:৩০
রায়পুরে গ্রাহকদের মাথায় হাত, দু’কর্মীকে গণপিটুনি

রায়পুর(লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার গ্রীন বাংলা সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতির খপ্পরে পড়ে গ্রাহকদের এখন মাথায় হাত। প্রতি লাখে মাসে দুই হাজার টাকা লাভের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল তাদের। প্রলোভনে পড়ে অনেকেই ব্যাংকে জমা করা টাকা তুলে, জমি-সোনা বিক্রি করে গ্রীন বাংলা সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতিতে জমা রাখেন। কিন্তু ৮ মাস ধরে গ্রাহকদের লাভের টাকা দেয়া হচ্ছে না। আর মূল টাকা চেয়েও পাচ্ছেন না তারা।

শুক্রবার (৯মে) দুপুর ২টার দিকে ৮ নং দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মোল্লারহাট বাজারে গ্রীন বাংলা সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতির কার্যালয়ের সামনে ৪০ থেকে ৫০ জন আমানতকারী জড়ো হন। এ সময় কার্যালয় তালাবদ্ধ দেখে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে গাইয়ারচর গ্রামের প্রকৃতি রঞ্চন মিস্ত্রর ছেলে শেমল মিস্ত্র ও মোল্লারহাট এলাকার আজাদ বেপারীর স্ত্রী জামেলা বেগমকে গণপিটুনি দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও প্রধান ফরিদগঞ্জ উপজেলার আলোনিয়া ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মো. নুরে আলম প্রায় এক কোটির বেশি টাকা আত্মসাত করে আত্মগোপন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৫ দিন ধরে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। শুক্রবার দুপুরে গোপনে ওই এনজিও ম্যানেজার ফরিদগঞ্জ শহরের মিজানুর রহমান ও ক্যাশিয়ার ফেনির বসুরহাট এলাকার লোকমান হোসেন তাদের দু’কর্মী শেমল মিস্ত্র ও জামেলা বেগমকে নিয়ে কার্যালয়ের মালামাল নিতে আসেন। এ কার্যালয়টি অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকায় হঠাৎ গ্রাহকরা তাদেরকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসলে দু’কর্মীকে রেখে ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ার পালিয়ে যান।

জানা গেছে, গ্রীন বাংলা সঞ্চয় ও ঋণ দান সমবায় সমিতি প্রায় ৮ বছর আগে গাইয়ারচর গ্রামের ক্যাম্পেরহাটে প্রধান কার্যালয় খোলে। তারা লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে স্থায়ী আমানত সংগ্রহ শুরু করে। ২ মাস পর চরভৈরবি বাজার, দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মোল্লারহাট বাজারে ও ক্যাম্পেরহাট বাজারে একই নামে আরও ৩টি শাখা কার্যালয় খোলা হয়। এ কার্যালগুলোতেও একইভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে স্থায়ী আমানত সংগ্রহ করা হয়।

গ্রীন বাংলা সমিতির ওই দু’জন কর্মচারী জানান, গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে তারা শাখার প্রধান নুরে আলমের কাছে দিতেন। মাসের ৪ থেকে ৫ তারিখে গ্রাহকদের মাসিক লাভের দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে দেয়া হতো। ছয় মাস ধরে গ্রাহকদের লাভের টাকা দেয়া বন্ধ রয়েছে। আর নুর আলম চলে গেছেন রাজশাহী। গ্রাহকরা প্রতিদিন টাকার জন্য তাদের বাড়ি আসছেন। ফোনে নুর আলমের সঙ্গে এ নিয়ে একাধিকবার কথা হয়। তিনি টাকা দেই-দিচ্ছি করে ছয় মাস ধরে তাদের ঘুরাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, মাসিক লভ্যাংশের ভিত্তিতে ৪ শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে এক কোটি টাকা আমানত হিসেবে নেয়া হয়। এর মধ্যে আলী আজগর মাঝির ৬৩ হাজার টাকা, সুরাইয়া বেগমের ১৫ হাজার টাকা, মাইনউদ্দিনের ১০ হাজার টাকা ও আক্তার হোসেনের ২০ হাজার টাকা রয়েছে।

জানতে চাইলে সুরাইয়া বেগম বলেন, ‘আমার কৃষক স্বামীর সয়াবিন ফসলের টাকা এনে এ কার্যালয় সঞ্চয় রাখি। টাকার জন্য প্রতিদিন আসছি। কিন্তু লাভ ও মূল টাকা কোনোটাই দিচ্ছে না।’ কিন্তু গত বুধবারে এসে শুনতে পাই নুর আলম টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার নুরে আলমের মোবাইল ফোন করে কথা বলার চেষ্টা করেও তিনি ফোন ধরেননি।

রায়পুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘বিষয়টি এখন আপনাদের (সাংবাদিক) কাছ থেকে শুনেছি। প্রতারিত গ্রাহকেরা অভিযোগ করলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তা ছাড়া আইন অনুযায়ী কোনো মাল্টিপারপাস কোম্পানি ও সঞ্চয় ঋণ সমিতি মাসিক লভ্যাংশের ভিত্তিতে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিতে পারে না।’

(পিকেআর/অ/মে ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৩ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test