E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বরিশালে গান, কবিতা ও গল্পের মাধ্যমে বঞ্চিত শিশুদের পাঠদান

২০২৫ এপ্রিল ২৯ ১৯:৩৬:৫৬
বরিশালে গান, কবিতা ও গল্পের মাধ্যমে বঞ্চিত শিশুদের পাঠদান

আঞ্চলিক প্রতিনধি, বরিশাল : শৈশব শেষের আগেই অধিকারবঞ্চিত অনেক শিশুর জীবন সমাজের মূলস্রোত থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, সামাজিক বৈষম্য আর নানামুখী বাঁধায় তাদের শিক্ষাজীবন থমকে যায় মাঝপথে। এমন বাস্তবতায় এই শিশুদের ঝরে পড়া ঠেকাতে এগিয়ে এসেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) একদল শিক্ষার্থী। ‘পদাতিক’ নামের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে তারা চালু করেছেন সাপ্তাহিক পাঠদান কর্মসূচি ‘আমরা করব জয়’।

নগরীর কীর্তনখোলা নদী তীরের চাঁনমারি এলাকার কলোনিতে এই পাঠশালার সূচনা। শতাধিক শিশুকে নিয়মিত পাঠদান করাচ্ছেন তারা। এখানে শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে এই পাঠদান সীমাবদ্ধ নয়, শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ও আনন্দময় করতে শেখানো হয় গান, কবিতা ও গল্প। এসবের মাধ্যমে চলে পাঠদান। প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ‘আমরা করব জয়’ পাঠশালার এই ব্যতিক্রমী পাঠদান কার্যক্রম। শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ। যা সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের হাত খরচ বাঁচিয়ে সংগ্রহ করেছেন।

পদাতিকের সভাপতি ভূমিকা সরকার বললেন, আমরা স্বপ্ন দেখি একটি সমৃদ্ধ দেশের। সুনাগরিকের শান্তিময় দেশ। এ জন্য সবার আগের সব মানুষের শিক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক দৈন্য, অজ্ঞতা আমাদের শিশুদের সেই অধিকার নিশ্চিতের পথে বড় প্রতীবন্ধকতা। কিন্তু আমরা যারা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছি, তারা যদি যে যার জায়গা থেকে এই অন্ধকার উত্তরণে সামান্য ভূমিকা নেই তাহলে ছোট এই উদ্যোগে দেশটা আলোয় আলোকিত হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগে আশা জেগেছে ওই কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে। তারা অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে কঠিন জীবনসংগ্রাম করছেন। এ দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করতেই দম আটকে যাওয়ার অবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই শিশুদের পড়ালেখার ব্যয় বহন করতে না পেরে তাদের কাজে পাঠান। এভাবেই শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ঝড়ে পরছে নিম্নবিত্তের এই শিশুরা।

কীর্তনখোলার তীরের খোলা জায়গায় ত্রিপল বিছিয়ে শিশুদের পাঠদান করাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে গিটার হাতে একজন শিক্ষার্থী গান তুলছেন, ‘আমরা করব জয়, আমরা করব জয়।’ শিশুরাও তার গলায় গলা মিলিয়ে কোরাস গাইছিল। ওই পাঠশালার সাত বছরের শিক্ষার্থী লামিয়া বলে, এইহানে পড়তে মোর জম্মের (অনেক) ভালো লাগে। ১৫ বছর বয়সের সাকিব বলল, ‘মোরা গরিব, খাওন পড়নেই মোগো কষ্ট। হেইয়ার লাইগ্গা পড়াল্যাহা ছাইড়া দিছিলাম। এ্যাহন এই পাঠশালায় আবার শুরু করছি। খুব আনন্দ অয় এইহানে পড়তে আইলে। যদি এইডা সপ্তাহে চার বা পাঁচদিন হইতো, তাইলে মোগো ভালো অইতো।’

কলোনির বাসিন্দা ও এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মোগোতো কাম কইর‌্যা পেট চালান লাগে। পোলাপান পড়ামু হেই টাকা নাই। হেইয়ার জন্য অনেক বাচ্চা অল্প বয়সে স্কুলে যাওন ছাইড়্যা কামে যায়। তিনি আরও বলেন, ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীরা এ্যাহন এই স্কুল খোলনে মোগো অনেক উপকার হইছে। পড়ানে কোনো খরচ হয়না। পোলাপানও আনন্দের মধ্যে পড়াশুনা করে।
পদাতিকের সদস্যরা জানিয়েছেন, আপাতত সপ্তাহে দুইদিন পাঠদান হলেও ভবিষ্যতে যদি সহায়তা মেলে, তাহলে তারা সপ্তাহের অধিকাংশ দিনই ক্লাস পরিচালনার পরিকল্পনা করছেন। পাশাপাশি শিশুরা যেন মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় আবারও যুক্ত হতে পারে সেই লক্ষ্যে তারা বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজনের কথাও ভাবছেন।

পদাতিকের স্বেচ্ছাসেবার এ কাজের বিষয়ে বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগের বিষয়ে আমি আগেই জেনেছি। একটি পাঠদান অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। এটি অবশ্যই একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। পড়াশোনার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবার চর্চা আমরা যতো বাড়াবো, ততো বেশি মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন প্রজন্ম আমরা পাবো। তিনি আরও বলেন, পদাতিকের উদ্যোগে অধিকার বঞ্চিত শিশুদের পাঠদানের এ কার্যক্রম সমাজের দৃষ্টান্ত। এ কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে সমাজের সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসা উচিত।

(টিবি/এসপি/এপ্রিল ২৯, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test