E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে রক্ষায়

এসএসসি পরীক্ষার বিঘ্ন ঘটিয়ে রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের মানববন্ধন

২০২৫ এপ্রিল ২৭ ১৯:৩২:৫৮
এসএসসি পরীক্ষার বিঘ্ন ঘটিয়ে রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের মানববন্ধন

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : অফিস ফাঁকি দিয়ে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা ও এসএসসি পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে কেন্দ্র থেকে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে মানববন্ধন করার অভিযোগ উঠেছে।

আজ রবিবার সকাল ১০টা থেকে তালা উপজেলার পরিষদের সামনে উপজেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা কর্মচারির ব্যানার ও সকাল ১০টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত তালা ডাকবাংলোর সামনে জাসাস, নাগরিক কমিটি ও শিক্ষক সমিতিসহ কয়েকটি ব্যানারে পৃথক দুটি মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়।

উপজেলা পরিষদের সকল দপ্তরে কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাজীব সরদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন উপজেলা প্রকৌশলী রথীন্দ্রনাথ হালদার, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন্নাহার, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামাল হোসেন, উপসহকারি প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, একাডেমিক সুপারভাইজার প্রভাষ কুমার দাস, উপজেলা ডেভলপমেন্ট ফেসিটেটর তালিম হোসেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপসহকারি প্রকৌশলী এমএ মামুন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ, খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুজ্জামান, নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ সাদিক বিন জামান ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আশুতোষ কুমার বিশ্বাস।

ডাকবাংলা মোড়ের সামনে খুলনা-পাইকগাছা সড়ক অবরোধ করে জাসাস, নাগরিক কমিটি, শিক্ষক সমিতি, তালা বণিক সমিতিসহ সাতটি ব্যানারে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও জেলা হিন্দুম বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি মৃনাল কান্তি রায়, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু, ইসলামকাটি ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, ধানদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামকাটি ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন কপোতাক্ষ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জগদীশ হালদার, কলেজ শিক্ষক সমিতির মোস্তাফিজুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আব্দুল কাদের, বিরোধপূর্ণ তালা প্রেসক্লাবের একটি অংশের সাংবাদিক এম এ হাকিম, সাংবাদিক আব্দুল মোমিন, সাংবাদিক জুলফিকার রায়হান, সাংবাদিক স,ম,ইয়াছিন উল্লাহ্, সাংবাদিক হাসানুর রহমান হাসান প্রমুখ।

পৃথক দুটি মানববন্ধন কর্মসুচিতে বক্তারা বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এক জন ভালো মানুষ। তিনি তালায় যোগদান করার পর থেকে উপজেলা সদরসহ ১২ টি ইউনিয়নে অনেক উন্নয়ন মূলক কাজ করেছেন। তাকে সরানোর জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করে আসছে। তিনি এ উপজেলায় থাকলে তালার চিত্র পাল্টে যাবে।

কোন সংবাদপত্র বা সাংবাদিকের নাম উল্লেখ না করেই বক্তারা আরো বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তালা থেকে সরানোর জন্য আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হেলালের কাছের লোক বলে পরিচিত এক সাংবাদিকের পক্ষে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসুচি পালন করেছেন। যা বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার শমিল। এলাকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করার জন্য ফ্যাসিষ্ট মনোভাব নিয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেলের বিরুদ্ধে ষড়যত্র তালাবাসী মেনে নেবে না।

এদিকে মানববন্ধন কর্মসুচি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই তালা বিদে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ঢিঁল ছোড়া দূরত্বে ডাকবাংলোর সামনে খুলনা-পইকগাছা সড়কে তেলের ব্যারেল, দোকানের তাক, বেঞ্চ, কাঠ ফেলে প্রথমে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়। মাইকে উচ্চ স্বরে আওয়াজ সৃষ্টি করে ঘন্টা ব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়।

স্থানীয় বি দে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অপেক্ষমান তালা উপজেলার মুড়াকলিয়ার গ্রামের অভিভাবক আব্দুল গফ্ফার সরকার, আটারই গ্রামের মফেজ উদ্দিন সেখ, সুজনসাহা গ্রামের গনি মোড়ল, খড়ের ডাঙ্গা গ্রামের মনিরুল ইসলাম, নলতা গ্রামের বাসুদেব কর্মকার সহ অপেক্ষমান অভিভাবকরা জানান, মানববন্ধনের কারণে মেইন রোডে ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করায়, দুরপাল্লার যানবাহন কলেজ-স্কুল রোডে ঢুকে পড়ে। কেন্দ্রের সামনে উচ্চ শব্দে হর্ণ বাজালে আতংকিত হয়ে পড়েন তারা। এর প্রভাব পড়ে পরীক্ষার্থীদের উপর। রবিবার বিজ্ঞান, ইতিহাসসহ এসএসসির তিনটি পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষা কেন্দ্রের সন্নিকটে জোরালো আওয়াজের কারণে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েন। এসময় তারা তাদের প্রিয় সন্তানদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন।

পাটকেলঘাটার বাজারের পাশর্^বর্তী নুরুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরকারি অফিস চলার কথা। তিনি রবিবার সকাল ১০টা ০৫ মিনিটে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার অফিসে একটি কাজ নিয়ে গেলে সেখানে কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারির দেখা পাননি। পরে তাদেরকে উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন কর্মসুচিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চলে আসেন তিনি।

একইভাবে মাগুরা গ্রামের রেনুকা বিশ্বাস জানান, তার মেয়ের জন্য রবিবার সকাল ১০টা ১২ মিনিটে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে যেয়ে কর্মকর্তা নাজমুন্নাহারসহ কাউকে অফিসে পাননি তিনি। অফিসে অপেক্ষমান মাদ্রার কোহিনুর ইসলাম ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন দাবি করে বলেন, আজ মনে হয় অফিস করবেন না কেউ। সবাই ইউএনওকে বাঁচাতে মানববন্ধন করছেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সাংবাদিককে নিয়মবহির্ভুতভাবে সাজা দিয়ে গ্যাড়াকলে পড়া ইউএনও এর পাশে দাঁড়ানোর নামে ঠিকাদার, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারিরা আগামিতে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছেন। নইলে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশেষ কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতার জন্য মৃণাল রায় বা শফিকুল ইসলামদের দরদ উথলে পড়ছে কেন?

এ ব্যাপারে তালা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মৃণাল কান্তি রায় বলেন, ডাক বাংলো মোড় থেকে বিদে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় অনেক দূর। মাইকের শব্দ সে পর্যন্ত যাওয়ার কথা নয়। যদি যেত তাহলে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে আপত্তি করা হতো। মানববন্ধন কোন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কোন প্রকৃত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নন।

ওই সাংবাদিক একজন আওয়ামী লীগার উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হেলালের হয়ে তার সঙ্গে ছবি পোষ্ট করে ওই সাংবাদিক অনেক সুবিধা লাভ করেছে বিগত সরকারের আমলে। তবে তিনি সাংবাদিক সমাজ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যে বিরাজমান পরিস্থিতির সমাধান চান বলে দাবি করে এ প্রতিনিধিতে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান।

এ ব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোঃ রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা পরিষদের সামনে ও ডাকবাংলোর সামনে মানববন্ধন চলাকালে তিনি একটি এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে ছিলেন। এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে সামজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তার পক্ষে মানববন্ধন করেছে। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা মানববন্ধনে অংশ নিলেও ওই সময়ে কেই কোন অফিসে এসে ফিরে গেছে এমন অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে।

তবে অফিস টাইমে এমন মানববন্ধন করা আইন সম্মত কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু একজন সরকারি কর্মকর্তা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন তাই তারা আতঙ্কিত হয়ে উর্দ্ধধন কর্তপক্ষকে অবহিত করতে মানববন্ধনে অংশ নিতে পারে। এ ছাড়া ঢাকা প্রেসক্লাব বা সচিবালয়ের সামনে সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারিরা হরহামেশায় মানববন্ধন করে থাকে সেটা দেখে তালা উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা -কর্মচারিরা এটা করতে পারে। তবে অফিস চলাকালিন হাজিরা দিয়ে অফিস না করে মানববন্ধন করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরণের কোন পরিপত্র তার কাছে নেই।

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল ১১ কোটি ২৯ লাখ ৬৫ হাজার ৯৮৩ টাকা ব্যায়ে উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণে অনিয়মের তথ্য চাওয়ায় দৈনিক কালের কণ্ঠের তালা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামানকে মারপিট করেন উপ-সহকারী পকৌশলী এম এ মামুন। পরে মামুনের কথায় ঠিকাদারের লোক দিয়ে সাক্ষী বানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেথ মোঃ রাসেল টিপুকে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ১০ দিনের কারাদন্ড ও ২০০ টাকা জরিমানা প্রদান করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ফুসে ওঠে সাতক্ষীরাসহ সারা দেশের সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিকরা টিপুকে মুক্তি দিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে মনববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। টিপুকে গ্রেপ্তারের ২২ ঘন্টা পর সাংবাদিকদের আন্দোলনের মুখে তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়।

(আরকে/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test