E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ভোগান্তিতে হাজার হাজার সেবা গ্রহীতা 

অজ্ঞাত স্থানে বসে ইউনিয়ন পরিষদের কাজ করেন ৩ চেয়ারম্যান

২০২৫ এপ্রিল ২৭ ১৬:১৬:০৫
অজ্ঞাত স্থানে বসে ইউনিয়ন পরিষদের কাজ করেন ৩ চেয়ারম্যান

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : ৫ টি ইউনিয়ন নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা গঠিত। এ উপজেলার ২টি ইউনিয়নে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কাজ কর্ম পরিচালিত হচ্ছে। বাকী ৩টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অজ্ঞাত স্থানে বসে  ইউনিয়ন পরিষদ দায়সারাভাবে চালাচ্ছেন। এতে ওই ৩ ইউনিয়নে হাজার হাজার সেবা গ্রহীতা ভোগান্তিতে পড়েছেন।  যথাসময়ে পাচ্ছেন না জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, ট্রেড লাইসেন্স সহ অন্যান্য সনদ ও প্রত্যয়নপত্র।

অজ্ঞাত স্থানে বসে ডুমরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী আহম্মেদ শেখ, গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিলিয়া আমিনুল অফিসের কাজ করছেন।

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৫ ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যান। কারণ তারা ৫ জনই আওয়ামী লীগ নেতা ও দলীয় প্রতিক নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত থাকায় ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে সরকার। তারপর থেকে উপজেলার ডুমুরিয়া, গোপালপুর, কুশলী ও বর্ণি ইউপি চেয়ারম্যান অফিস করা শুরু করেন। কিন্তু পাটগাতী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ শুকুর আহম্মেদ আত্মগোপনেই থেকে যায়। তখন তার স্থলে প্যানেল চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাসকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হন কুশলী ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সর্দার। তিনি কারাগারে যাওয়ার পর তার স্থলে দায়িত্ব পান প্যানেল চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ। তারপর থেকে বাকি ৩ ইউপি চেয়ারম্যান নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করতে থাকেন। কিন্তু গত ২ ফেব্রুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের উপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হন ৩ ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহম্মেদ শেখ, লাল বাহাদুর বিশ^াস ও মিলিয়া আমিনুল। এরপর গ্রেপ্তার আতঙ্কে অজ্ঞাত স্থানে বসে ইউনিয়ন পরিষদ চালাচ্ছেন ওই ৩ ইউপি চেয়ারম্যান। আর আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানরা নিজ এলাকার জনগণের ফোনও রিসিভ করছেন না। আর কখনো রিসিভ করলেও বিভিন্ন আবেদন সচিবদের কাছে রেখে যেতে বলছেন।


বর্ণি ইউনিয়নের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন মুন্সী, হাফেজ মোহাম্মদ মোস্তাইন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল ঠিকমতো পরিষদে থাকেন না। নিজেদের কাজ ফেলে রেখে কয়েক মাস ধরে জন্ম নিবন্ধনের জন্য ঘুরছি, কিন্তু চেয়ারম্যানের দেখা পাচ্ছি না। এছাড়া অন্যান্য সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি আমরা । চেয়ারম্যানের মোবাইল নাম্বারও বন্ধ। চেয়ারম্যানের একটা স্বাক্ষরের জন্য আমাদের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। তাই বর্ণি ইউনিয়নবাসীর দুর্ভোগ কমাতে সরকার ও প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।


বর্ণি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল মাস খানেক হলো পরিষদে আসেন না। প্রতিদিন জনগণের আবেদন বা কাগজপত্র একটা ফাইলে রেখে দেই। আর চেয়ারম্যানের স্বামী আমিনুল ইসলাম দুই একদিন পর পর ফাইলটি নিয়ে যায়। আর চেয়ারম্যান কাগজপত্র সই করে পাঠিয়ে দেয়। এভাবেই চলছে বর্ণি ইউনিয়ন পরিষদ জানিয়ে তিনি আর কোন কথা বলতে চাননি।


ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বাশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম, সাহেদ তালুকদার গোপালপুর ইউনিয়নের অধিবাসী নির্মল সেন, অমল বিশ্বাস বলেন, চেয়ারম্যানরা আত্মগোপানে থাকায় ওয়ারিশান, নাগরিক, চারিত্রিক ও মৃত্যু সনদ নিতে দিনের পর দিন পরিষদে ঘুরছি। এখান থেকে আমরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছি না। এতে আমাদের ভোগান্তি ও সময় নষ্ট হচ্ছে। শুনেছি চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে রয়েছেন। তাই ইউনিয়ন পরিষদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি ।

এ বিষয়ে জানতে গোপালপুর ও ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও দুই চেয়ারম্যান লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং আলী আহম্মেদ শেখকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে তাদের মোবাইলে একাধিকবার কল কার হয় । তার ফেনে রিসিভ করেন নি। ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সারা মেলেনি। তবে বর্ণি ইউপি চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুলের হোয়াটসঅ্যাপে কল দিলে রিসিভ করেন। তিনি বেশ কিছুদিন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে অনুপস্থিত জানিয়ে বলেন, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের মিথ্যা মামলায় আমাকে ১০৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে পরিষদে যাই না। জনপ্রতিনিধিদের অফিস চলাকালীন সময়ে কার্যালয়ে থাকার সরকারি নির্দেশ অমান্য করছেন ?

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেখানে দাড়ানো যায় না। তাই আমি ঘর পরিবর্তন করেছি, কিন্তু এলাকাতেই আছি। তিনি দাবি করে বলেন, আমার এলাকার জনগণের কোন ভোগান্তি হচ্ছে না। কারণ আমি আমার স্বামী ও সচিবের মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থানে বসে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে কার্যক্রম সচল রেখেছি।

এ ব্যাপারে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মঈনুল হক বলেন, জনপ্রতিনিধি অনুমোদনহীন ভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না। যদি কেউ এমনটি করেন, তাহলে নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে ও জনদুর্ভোগ লাগবে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এএস/এপ্রিল ২৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test