E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পঞ্চগড় লোকনাট্য উৎসবের শেষ দিন 'বাহরাম বাদশা'

২০২৫ এপ্রিল ২৫ ২৩:৫৬:০৮
পঞ্চগড় লোকনাট্য উৎসবের শেষ দিন 'বাহরাম বাদশা'

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত, পঞ্চগড় শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় লাঠুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত তিনদিনব্যাপী বৈশাখী লোক নাট্যোৎসবের শেষদিন ২৫ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিবেশিত হয়েছে  ফকির সমে আলী সম্প্রদায়ের সত্যপীরের গান ‘বাহরাম বাদশা’।

পালাটি গীতি এবং নৃত্যনাট্যের সংমিশ্রণে পরিবেশিত হওয়ায় শুরু থেকে জমে ওঠে ।সমাপনী দিবসে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সৈয়দ জাকির হোসেন, পঞ্চগড় জেলা শিশু-শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ আকতারুজ্জামান, পঞ্চগড় বিদ্রোহী থিয়েটার ও ষড়ঋতু-জগদল এর কর্ণধার নাট্যকার রহিম আব্দুর রহিম, দিশারি নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার মোঃরফিকুল ইসলাম সরকারসহ স্থানীয় সুধিজনরা।পালা শুরুর সাথে সাথে দর্শকের ভরে যায় উৎসব আঙ্গিনা।

গত ২৩এপ্রিল এই উৎসবের উদ্বোধন করেন পঞ্চগড় জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক)এস এম ইমাম রাজী টুলু।বাহরাম বাদশার কাহিনীতে উঠে এসেছে,'দানশীল এক বাদশার দান খয়রত করার এক আজব কাহিনী, বাদশা বাহরাম প্রতিদিন সকল থেকে দুপুর অবধি তাঁর রাজ্যের দরিদ্র, ভিখারিদের দান করেন,যে যা চান তাকে তাই দেওয়া হয়।এক দুপুরে সত্যপীর এসে বাদশা বাহরামের কাছে স্বর্ণ-অলংকার ভিক্ষা চাইলেন,কিন্তু তখন বেলা অপরাহৃ।এসময় তিনি দান করে না,এছাড়া স্বর্ণ অলংকারও শেষ হয়েছে গেছে। তাই তিনি সত্যপীরকে পরেরদিন সকালে দান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন এবং সত্যপীরকে তার রাজমহলে রাত্রিযাপনের আমন্ত্রন জানান।এবার সত্যপীর, বাদশাহকে পরীক্ষার জন্য বললেন, আজ রাত আপনার মহলে রাতযাপন করতে পারি, তবে তিনটি শর্তে আছে,এর মধ্যে প্রথমটি হলো, আমাকে আপনার ঈমান দান করতে হবে, না হয় সমস্ত স্বর্ণমুদ্রা,তা না হলে আপনার সিংহাসন। রাজা বেকায়দায়,সকল স্বর্ণাদির ভান্ডার অনেক আগেই শেষ হয়েছে, ঈমান দেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়;কি করার? দান করে দেন রাজ সিংহাসন। সবকিছু দান করে বাদশার ফকির হবার কাহিনীই এই পালার সারাংশ।'

যার শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন নারী চরিত্রে বকুল (১৭), মুছা (২৪), ভবেশ (৩৫),বশাগো (২৬)পুরুষ চরিত্রে মহেশ চন্দ্র সরকার (৫৩), শুধুপাল (৫২) ও পোয়াতু (৯৬) বাদ্যযন্ত্রে কর্ণেটে শ্রী ভাদারু পাল,ক্যাচিওতে ধীরেন পাল,খোল ও ঢোলকে পাচি পাল ও মন্দিরাতে কাচিপাল এবং মহেশপাল। উৎসবের দ্বিতীয় রজনীতে পরিবেশিত হয়েছে আটোয়ারির হরিগুরু সম্প্রদায়ের ধামেরগান 'বাবার শেষ বিয়ে।'

পালার কাহিনী, '২সন্তানের এক বাবার বউ মারা যায়,বৃদ্ধ বাবার এক ছেলের বউ শ্বশুরকে ঠিকঠাক দেখভাল করা তো দূরের কথা, প্রয়োজনীয় খাবার দাবারও দেয় না।এমন অবস্থায় বৃদ্ধ বাবা সিদ্ধান্ত নেন, সে বিবাহ করবে। কিন্তু তার দুই সন্তান এবং এক সন্তানের বউ তাকে বিয়ে দিতে রাজী নয়।কারণ ওয়ারিশ বাড়বে বলে। কিন্তু নাছোড়বান্দা বাবা বিয়ে সে করবেই; কারণ দুঃসময়ে তার দেখভালের প্রয়োজন রয়েছে ।নারাজী সন্তানদ্বয়কে নানা কৌশলে রাজী করাতে না পেরে এক প্রকার প্রতারনার আশ্রয় নেই বৃদ্ধ বাবা।তবে ভাগ্যে কোন যুবতী মেয়ে জুটলো না। জুটলো এক বৃদ্ধা।

'এই দিনের পালায় দর্শকরা প্রাণ উজাড় করে হাসতে পেরেছে।উৎসবের উদ্বোধনী দিনে ২৩এপ্রিল পরিবেশিত হয়েছে, দেবীগঞ্জের তৃপ্তি নাট্যগোষ্ঠীর হুলিরগান পেচক্যাটার সংসার,পালার কাহিনীও মজাদার, 'স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভালই চলছিল, নেই তাদের সন্তানাদি,অভাবি সংসারে স্বামী চিন্তা করলো, ঢাকায় কাম কাজ করে আয় রোজগার করে সংসার চালাবে, যেই কথা, সেই কাজ। সিদ্ধান্ত হলো ঢাকায় যাবার, কিন্তু তার স্ত্রী সঙ্গে যাবার বায়না ধরলো, কিন্তু তাকে নিতে রাজী নয় স্বামী প্যাচকেটা।কারণ, তার উদ্দেশ্য ভিন্ন। ঢাকায় যাবার পথে,এক বাজারে দেখা হয় মুড়ি বিক্রেতা এক সুন্দর সুশ্রী যুবতীর সাথে। সেখানেই তাদের মন দেওয়া নেওয়া। প্রেমের উসিলায় বিয়ে, এরপর বাড়ি ফেরা। একেতো অভাব, তারপর দুই বউয়ের সংসার, পেচক্যাটা নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লো, বউ থাকতে বিয়ে, সংসারের জ্বালা যন্ত্রনার নানা ঘটনা এই পালায় উঠে এসেছে।' উৎসবের প্রতিদিনটি পালায় হাজার হাজার দর্শক শ্রোতার উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। উৎসব ঘিরে নারী পুরুষ, বয়োঃবৃদ্ধ, শিশু-কিশোরদের মিলন মেলা বসেছে প্রতিদিন। লোক নাট্যোৎসব পরিনতি হয় লোকমেলায়। যাকে ঘিরে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা। যেখানে খাবার-দাবার, ফল মূল, জুড়ি-নাড়ু,বাতাসা,শিশুদের খেলনাসহ নানাবিধ পণ্য বেচাকেনা হওয়ায় ব্যবসা সম্পৃক্ত লোকজনরা খুবই খুশি।পপন বিক্রেতা আনিছুর বলেন, প্রতিদিন প্রায় দুইহাজার করে তিনদিনে ৬ হাজার টাকা বেচাকেনা হয়েছে।ঝালমুড়ি বিক্রেতা আলমগীরের তিনদিনে ১২হাজার টাকার কেনাবেচা হয়েছে।সে খুবই খুশি।

ফল বিক্রেতা হাফিজুর রহমানের ১ দিনে বিক্রি হয়েছে ১৪শ'টাকা।যা স্বাভাবিক বেচা বিক্রির চেয়ে সন্তোষজনক।

মৃৎশিল্পী অমিত জানালো মাটির ব্যাংক, শিশুদের খেলনা যা বিক্রি হয়েছে তাতে সে খুবই খুশি।

ভ্রাম্যমান রেস্টুরেন্টের মালিক মোহাম্মদ রানা হোসেন বলেন, সন্তোষজনক বিক্রি হয়েছে।

পান বিক্রেতা সুমনের বিক্রি অনেক ভালো। ঝুরি, গজা, কটকটির দোকানী আবুল জানান, বিক্রি সন্তোষজনক।

প্রতিদিন উৎসবে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৬৫ বছর বয়স্ক এক দর্শক জানালেন,' এই গান গুলো আগে খুবই শুনেছি।২০ বছর পর আবার শোনলাম।এগুলো প্রতিবছর হওয়া দরকার। '

(এআর/এএস/এপ্রিল ২৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test