E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মাদক সেবীদের কাজে বাধা দিতে গিয়েই জীবন গেল বৃদ্ধ তারা মিয়ার

২০২৫ এপ্রিল ২১ ১৯:৫৮:৪৫
মাদক সেবীদের কাজে বাধা দিতে গিয়েই জীবন গেল বৃদ্ধ তারা মিয়ার

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : তাঁরা মিয়া ফকির। বয়স অনুমান ৬২ বছর। পেশায় একজন কাঁচামাল ব্যবসায়ী। তিনি চট্টগ্রাম গাওছে হাওলাই দরবার শরীফের একজন সক্রিয় সদস্যা। কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের বাশাটী বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করে সৎভাবে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। বাজারে আসা যাওয়ার পথে দেখা হতো মাদক সেবীদের সাথে। তিনি মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসার কাজে বাধা নিষেধ করতেন। মাদক সেবীদের পথের কাঁটা ছিলেন বৃদ্ধ তারা মিয়া।

জানা যায়, চলতি বছরের গত ২১ মার্চ রাত অনুমান ১০ টার দিকে বাশাটী বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে কাঁটাহুসিয়া এলাকায় খামারখালি নামক স্থানে মাদকসেবীদের কাজে বাধা দেওয়ায় মাদকসেবীরা তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যার পর দৃব্যত্তরা তারা মিয়া ফকিরের লাশ গুম করারও চেষ্টা চালায়। কিন্তু না পেরে ব্রিজের নীচে ঝোপের আড়ালে তাঁরা মিয়া ফকিরের লাশ ফেলে রেখে যায়। বাড়ির লোকজন তাঁরা মিয়া ফকির বাজার থেকে সঠিক সময়ে বাড়িতে না আসায় খোজাখুজি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে খামারখালি ব্রিজের কাছে রক্তের দাগ দেখে আশেপাশেই খোজাখুজি করে ব্রিজের নীচে ঝোপের আড়ালে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্বজনরা।

পুলিশ তাঁরা মিয়া ফকিরের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়না তদন্ত শেষে পরদিন পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবার কবরের পাশেই চিরনিদ্ধায় শায়িত করা হয়। ২৩ মার্চ তাঁরা মিয়া ফকিরের ছেলে বশিরুল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে কেন্দুয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম জানান, তথ্য অনুসন্ধান চালিয়ে গত ১১ এপ্রিল রাতে কাটাহুসিয়া গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে শামিমকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ শামিমকে ৭ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেন।

জানা যায়, ১২ এপ্রিল রাতে হাওলা দরবার শরীফে হত্যা রহস্য উদঘাটনের জন্য বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে ১৩ এপ্রিল গ্রামবাসীর সহায়তায় ওয়াই গ্রামের নয়ন মিয়ার ছেলে আফজাল হোসেন স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হন।

তিনি আদালতকে জানান, মাদক সেবন ও ব্যবসার কাজে বাধা দেওয়ার কারণেই তাঁরা মিয়া ফকিরকে হত্যা করা হয়েছে। আফজালের কথা মতো পুলিশ জুলহাস মিয়ার ছেলে সজল ও জাবেদ মিয়ার ছেলে রিয়াজকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। আফজালের দুই দিনের রিমান্ড শেষে গত শনিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়। গ্রেফতারকৃত চারজনের মধ্যে সকলেই তাঁরা মিয়া হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন বলে তদন্তকর্মকর্তা জানান।

আজ সোমবার মামলার বাদী তাঁরা মিয়ার ছেলে বশিরুল ইসলাম জানান, আমার বাবা কোন অপরাধ করেননি। সমাজকে সুন্দর রাখার জন্য মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদৈর কাজে বাধা দিয়েছেন। এজন্যই মাদকসেবীরা আমার বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করি।

কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, তারা মিয়া ফকির হত্যা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে চার জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে আফজাল হোসেন স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়ে মাদক সেবনের কাজে বাধা দেওয়ায় তাঁরা মিয়া ফকিরকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে আদালতকে জানায়।

(এসবি/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২২ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test