E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সাংবাদিকদের হুমকি, মামলার ভয়ভীতি

এসিল্যান্ড তারিকুলের খুঁটির জোর কোথায় 

২০২৫ এপ্রিল ২১ ১৯:৪০:০৮
এসিল্যান্ড তারিকুলের খুঁটির জোর কোথায় 

# নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়াকে সভাপতি করে নিজেই পুকুর সংস্কার ও গাছ কাটার এই কাজ বাস্তবায়ন করছেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) তারিকুল ইসলাম।

# ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে ১০ কোটি টাকার বালু ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮০ (ভ্যাট ব্যাতিত) টাকায় গোপন নিলামে বিক্রি করেন।

# উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. আব্দুস সোবাহান বাইরে ক্লিনিকে রোগী দেখছেন এমন দৃশ্যের ভিডিও করায় তিনজন সাংবাদিকের নামে থানায় অভিযোগ দেয় এসিল্যান্ড তারিকুল ইসলাম।

# “আপনার যা মনে হয় লিখেন, আর কোন নিউজ নাই আপনাদের, সব দালালের বাচ্চা”

# “মিডিয়াতে লিখে যা ছিঁড়তে পারেন করেন গা যান”

মোহাম্মদ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সরকারি নিয়ম বহির্ভুতভাবে পুকুর সংস্কার ও গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে তার বক্তব্য ও তথ্য জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিককে ‘দালালের বাচ্চা’ বলে গালিগালাজ করেন।

শুধু তাই নয়, এর আগেও এসিল্যান্ড তারিকুল ইসলাম একাধিকবার সাংবাদিকদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এমনকি কাউকে কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগ উঠেছে, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়াকে সভাপতি করে নিজেই পুকুর সংস্কার ও গাছ কাটার এই কাজ বাস্তবায়ন করছেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) তারিকুল ইসলাম। প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার টিআর প্রকল্পের মধ্যে দৈনিক হাজিরা শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা।

জানা যায়, সম্প্রতি ভূঞাপুর ভূমি কার্যালয়ের সামনের পুকুর পাড়ে কয়েকটি অর্ধশত বয়সী গাছ কাটা হয়। একই সঙ্গে সরকারি পুকুরের সংস্কার কাজ শুরু হলেও কোন দরপত্র বা ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়নি। হাসপাতালের কর্মচারী দিয়ে কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগের কাছে কোন লিখিত বা অনুমোদনও নেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে এখন টেলিভিশনের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি তার বক্তব্য ও তথ্য চাইতে এসিল্যান্ড মো. তারিকুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেন।

এসময় এসিল্যান্ড ফোন রিসিভ করে বলেন, “আপনার যা মনে হয় লিখেন, আর কোন নিউজ নাই আপনাদের, সব দালালের বাচ্চা” গালি দিয়েই ফোনের সংযোগ কেটে দেন। সরকারি কর্মচারীর এমন অশোভন কথপোকথনে ক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ভূঞাপুরে আসার আগে তিনি ৬মাসে ৩বার বদলী হয়েছেন বিভিন্ন কারণে।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বরে তিনি ভূঞাপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন। দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহের মাথায় এক বালুর ঘাটে অভিযান পরিচালনা করেন এসিল্যান্ড তারিকুল ইসলাম। অভিযোগ উঠে, ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে ১০ কোটি টাকার বালু ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮০ (ভ্যাট ব্যাতিত) টাকায় গোপন নিলামে বিক্রি করেন। ওই খবর প্রকাশের পর থেকেই সাংবাদিকদের প্রতি তার আচরণ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। তার এমন অবৈধ নিলামের প্রক্রিয়ার তথ্য জানতে যায় স্থানীয় কালবেলার প্রতিনিধিসহ কয়েকজন। এসময় এসিল্যান্ড তাদেরকে গালিগালাজ করে তার কক্ষ থেকে বের করে দেয়। তিনি তার আগের কর্মস্থলেও এমন আচরণ করেছেন মানুষের সাথে। তার বিপক্ষে গেলেই মামলার ভয় দেখানো হতো এবং ফেসবুকে সেটা লিখে পোষ্টও দিতেন তিনি। সম্প্রতি ভূঞাপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. আব্দুস সোবাহান বাইরে ক্লিনিকে রোগী দেখছেন এমন দৃশ্যের ভিডিও করায় তিনজন সাংবাদিকের নামে থানায় অভিযোগ দেয় এসিল্যান্ড তারিকুল ইসলাম। পরে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে সেটা পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক হাদী চকদার বলেন, দৈনিক কালবেলার ভূঞাপুর প্রতিনিধি মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন বালু নিলামের তথ্য জানতে তার কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। একপর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্যভাষায় গালাগালিসহ দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। পরে তার কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়।

দৈনিক কালবেলার ভূঞাপুর প্রতিনিধি মিজানুর রহমান বলেন, তার অবৈধ বালু নিলাম প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। মামলার ভয় দেখান। মিডিয়াকে গুনার টাইম তার নেই এমন মন্তব্য করেন। এসময় এসিল্যান্ড বলেন, “এখন মিডিয়াতে লিখে যা ছিঁড়তে পারেন করেন গা যান।” টেলিভিশনের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি কাওছার আহম্মেদ বলেন, পুকুর সংস্কার ও গাছ কাটার তথ্য জানতে প্রথমে এসিল্যান্ডের কার্যালয় গিয়ে তাকে পাইনি। ফোন করে তার ভিডিও বক্তব্য চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনাদের আর কোন নিউজ নাই, নিউজের কি অভাব দেশে, আপনার যা মনে চায় তাই লিখেন, সব দালালের বাচ্চা” বলেই ফোন কেটে দেন। তিনি সংক্ষুব্ধ হলে অথবা মিথ্যা সংবাদের ঘটনা ঘটে থাকলে আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন কিন্তু তা না করে তিনি পরিবার তুলে গালিগালাজ করেছেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার আচরণ এমন হতে পারে না, হয় না। এই কারণে তার মানসিক সুস্থ্যতা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।

প্রকল্পের কাজ করা শ্রমিক সর্দার ফারুক বলেন, এ প্রকল্পের জন্য কত লাখ টাকা বরাদ্দ তার কিছুই জানি না। তবে দৈনিক হাজিরা হিসেবে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার টাকার কাজ করেছি। বাকি কাজ শেষ করতে আরও ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে।

উপজেলা সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিকের সভাপতি অধ্যাপক মির্জা মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সরকারি কর্মচারীর আইন অমান্য করে পরিবেশ নষ্ট করে এই কাজ কোনমতেই কাম্য হতে পারে না। একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সরকারি কাজ বাস্তবায়ন করা উচিত।

টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, ভূমি অফিসের গাছ কাটার বিষয়ে কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। তবে কিছু গাছের ডালপালা ছাঁটার কথা বলেছিল মৌখিকভাবে।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এভাবে কোন কথা একজন কর্মকর্তা বলতে পারেন না। তার এধরনের কথা বলা উচিত হয়নি।

(এসএম/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২২ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test