E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পঞ্চগড়ের বোদায় লুটপাট শেষে ঘরবাড়িতে আগুন, মামলার বাদীকে হুমকি

২০২৫ এপ্রিল ১৬ ১৭:৫৬:৪৯
পঞ্চগড়ের বোদায় লুটপাট শেষে ঘরবাড়িতে আগুন, মামলার বাদীকে হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কাটনহারি বামনবাড়ির মৃত আব্দুস সামাদের বাড়িতে একদল চিহৃিত দুষ্কৃতকারীরা লুটপাট শেষে তাদের বসতবাড়িতে আগুন দিয়েছে। এতে ওই বাড়ির সকল ঘরদুয়ার পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ১৩ এপ্রিল সন্ধা আনুমানিক সাড়ে সাতটার দিকে। এ ব্যাপারে বোদা থানায় মামলা করেছে মৃত আব্দুস সামাদের নাতি মোঃ রুবেল রানা (২৫)। ওর বাবার নাম সুজন আলী। বাদী সুজন আলীর পুড়ে যাওয়া বাড়িতে গত ১৫ এপ্রিল ৬-৭টা মোটরসাইকেল যুগে ১০-১২ জন লোক এসে খোঁজাখুঁজি করেছে বাদী রুবেল রানা  ও তার পরিবারের সদস্যদের। এসময় মামলা তুলে না নিলে, মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাদীর মা রুমিছা খাতুন। 

তারা কারা, চিনতে পেরেছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি জানান, মাথায় হেলমেট ছিলো, কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা ছিলো, চিনতে পারি নি।

আজ বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা হয় বাদী রুবেল রানার সাথে। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার কারণ কি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বড়দাদা আব্দুর রশিদ ছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, তার নামে আসা সকলভাতাদি উত্তোলন করতো আমার ছোট দাদা মৃত আব্দুস সামাদ। ওই টাকা দিয়েই সংসার চলতো। ৫ আগস্টের পর রাস্তাঘাটে অভিযুক্তদের সাথে দেখলে হলেই নানা প্রকার টিটকারি দিতো, এখন কি করবি, কি খাবি, কেমনে চলবি, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ হবো ইত্যাকার। এই নিয়ে মাঝে মাঝে তর্কাতর্কি হতো। ১৩ এপ্রিল সন্ধা রাতে বাড়িতে হামলা, লুটপাট, আগুন। এলাকার একটি বৃহৎ অংশ জানালো এই বাড়ির সবাই নাকি মাদকের ব্যবসা করে, তাই এলাকার লোকজন বাড়ি ঘর পুড়ে দিয়েছে।

এর আগে ১৫ এপ্রিল দুপুরে পোড়াবাড়ির আঙ্গিনায় কথা হয় মামলার বাদীর সাথে। তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানায়, পরিকল্পিতভাবে বাড়িতে লুটপাট হয়েছে, আগুন পুড়িয়ে দিয়েছে ঘরবাড়ি, আমাদের হত্যার উদ্দেশ্যের লাঠিসোটা নিয়ে চিহৃিত ব্যক্তিরা আক্রমন করেছে। আমরা ন্যায় বিচার চাচ্ছি।

সরেজমিন দেখা গেছে, ওই বাড়ির তিনটি পরিবারের থাকারঘর, রান্নাঘর, গোয়ালঘরসহ সকল ঘরদুয়ার পুড়ে ছারখার করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তিনটি পরিবারের সদস্যদের পরনের বস্ত্র ছাড়া বিকল্প কোন কাপড়-চোপড় নেই। ঘরের বইপুস্তক, কোরআন শরীফ, খাতাপত্র পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, খারুয়া গ্রামের ফজল হকের ছেলে আব্দুল আজিজ, মো. বাতেন আলীর ছেলে শাকিল আলী এবং বাতেন আলীর সরাসরি নেতৃত্বে ২০ থেকে থেকে ২৫ জনের একটি দল, লাঠিসোটা নিয়ে ওইবাড়িতে প্রবেশ করেই লুটপাট শুরু করে। নিয়ে যায় গোলার ধান, চাল, লুটপাট হয় গোয়াল থাকা গৃহপালিত গরু-ছাগল, বাড়ির ব্যবহার্য টেলিভিশনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। লুটপাট, তান্ডব চলে ঘণ্টাব্যাপী। পরে বাড়িতে ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। বাড়িঘর পুড়ে ছারখার হওয়া নিশ্চিত করতে দুষ্কৃতকারীরা ঘটনাস্থলে লাঠিসোটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কাউকে আগুন নেভানোর সুযোগ পর্যন্ত দেয়নি তারা। ওই বাড়ির তিনটি পরিবারের মোট ১৩ জন সদস্য পাশের একটি বাড়িতে মানবেতর রাত্রি যাপন করছে।

এই ঘটনার পর বোদা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিম উদ্দীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি এ বিষয়ে বলেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাদীর দাদী জয়নুব খাতুন বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন, আমার তিন সন্তান, নাতি পুতি নিয়ে আমরা কোন রকম খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। এইভাবে বাড়ি জ্বালিয়ে দিল, লুটপাট করলো, আমাদের মেরে ফেলতে চাচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই, বেঁচে থাকতে চাই।

এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ব্যক্তি আব্দুল আজিজ বলেন, যাদের বাড়িঘর পুড়ে দেওয়া হয়েছে, তারা এলাকার মাদক ব্যবসায়ী।

অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি বাতেন আলী বলেন, এরা ভালো না, এলাকার যুবক ছেলেদের নষ্ট করে ফেলেছে। আমার এক ছেলে শামীম ওদের ওখান থেকে মাদক নিয়ে সেবন করতো, এই ছেলে মাদকাসক্ত হওয়ায় ওকে আমি বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। যাদের বাড়িঘর পুড়ে দেওয়া হয়েছে ওরা মাদক ব্যবসায়ী।

কেউ অপরাধ করলে পুলিশকে না জানিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া ঠিক হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ, আর্মি ওদের কিছু করতে পারে না, উচ্ছেদ ছাড়া উপায় নেই। বাতেন আলী ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষক দলের সভাপতি বলে নিজেকে দাবী করেছেন এবং তাদের নেতাদের একটি কম্পোজ করা তালিকা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন।

আজ বুধবার পুনরায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে কৈকুড়ি বাজারের একটি চায়ের স্টলে কথা হয়েছে কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ এর ১ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেম্বার আব্দুল লতিফ এর সাথে।তিনি এ বিষয়ে বলেন, যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচার হোক, এটা চাচ্ছি, কিন্তু কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যেনো হয়রানির শিকার না হয় এটাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ।

রবিউল নামে এক ব্যক্তি জানান, সব বিচারই হতে হবে, যারা ঘর বাড়ি পুড়িয়েছে এবং যারা মাদকের ব্যবসা করে তাদেরও।

ওই বাজারে আরও বেশ কয়েকজন জানান, কাদিয়ানী ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢালাও মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষ জনদের হয়রানি করা হয়েছে। কেউ অপরাধী হলে তার বিচার হোক। নিরপরাধরা হয়রানি হবে এটা যেনো না হয়।

মামলার এফআইআরভুক্ত আসামি আব্দুল আজিজের ছোট ভাই ঢাকা তামিরুল মিল্লাতের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব টেলিফোনে জানিয়েছেন, কালু (বাদীর বাবা, সুজন) এবং কালুদের বাড়ির সবাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত, বিক্ষুব্ধ জনমানুষ তাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছেন। যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তারা এগুলো করেনি।

গলেহাহাট ফাযিল মাদ্রাসার সহকারি অধ্যাপক (আরবী) বলেন, অপরাধী হলে বিচার হবে, কিন্তু তাদের বাড়িঘর পুড়ে দেওয়া, ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ড ইসলাম সমর্থন করে না।

(আরএআর/এসপি/এপ্রিল ১৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test