E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মাদারীপুরে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে ফের সংর্ঘষ, আহত অর্ধশত

২০২৫ এপ্রিল ১৪ ১৩:৩৯:২০
মাদারীপুরে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে ফের সংর্ঘষ, আহত অর্ধশত

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের রাজৈরে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসময় ১০/১২ টি দোকানে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ উভয়পক্ষের অর্ধশত আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কয়েক ঘন্টা যৌথ চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাত ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দফায় দফায় রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ও পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজৈর উপজেলার পশ্চিম রাজৈর গ্রামের ফুচকা ব্রিজের কাছে ঈদের পর ২ এপ্রিল আতশবাজি ফোটায় পাশের বদরপাশা গ্রামের আতিয়ার আকনের ছেলে জুনায়েদ আকন ও তার বন্ধুরা। এসময় ওই গ্রামের মোয়াজ্জেম খানের ছেলে জোবায়ের খান ও তার বন্ধুরা মিলে তাদের বাধা দেয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।

এরই জেরে ঘটনার পরের দিন ৩ এপ্রিল সকালে রাজৈরের বেপারিপাড়া মোড়ে জোবায়েরকে একা পেয়ে পিটিয়ে তার ডান পা ভেঙে দেয় জুনায়েদ ও তার লোকজন। পরে আহত জোবায়েরের বড় ভাই অনিক খান বাদি হয়ে জুনায়েদ আকনসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামি করে রাজৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

শনিবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় অনিক খান রাজৈর বাজারে গেলে ধাওয়া দেয় জুনায়েদ ও তার বন্ধুরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত ৯ টার দিকে রাজৈরের পশ্চিম রাজৈর ও বদরপাশা গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দুই ঘন্টাব্যাপি এ সংঘর্ষ চলে। এসময় কয়েকটি দোকান ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। খবর পেয়ে রাজৈর থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় রাজৈর থানার ওসি, পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যসহ উভয় পক্ষের ২৫ জন আহত হয়।

এরজের ধরেই রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাত ৭টার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন উত্তেজিত হয়ে আবারো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রায় চার ঘন্টাব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এসময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনা ঘটে। এছাড়াও দোকানের অগ্নিসংযোগ করা হয়। একপর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিস যৌথ চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

এই ঘটনায় মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম, রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান ও কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের অর্ধশত লোকজন আহত হয়।

আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় রাজৈরের পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মেহেদী মীর (২২), রাসেল শেখ (২৮), সাহাপাড়া গ্রামের মনোতোষ সাহা (৫০), আলমদস্তার গ্রামের তাওফিককে (৩৭) প্রথমে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলমের পায়ে আঘাত পাওয়ায় তিনি মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। বাকি আহতরা রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এরপর রাত সাড়ে ১২ টার দিকে উত্তেজিত গ্রামবাসী রাজৈর থানা পুলিশের দুটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে। রাজৈর উপজেলার রাজৈর বাসস্ট্যান্ডে এই ঘটনা ঘটে। এসময় রাজৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তফা ও ড্রাইভার শাহাবুদ্দিন আহত হন। তাদের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, আমাদের উপর হামলা চালিয়ে দুইটি গাড়ি ভাংচুর করেছে। এসময় এসআই মোস্তফা ও ড্রাইভার শাহাবুদ্দিনের মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে হামলাকারীরা। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। উত্তেজনা থাকায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।

তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে ৪ ধাপে এই দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হলো। পুলিশের উপর হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছি। কিন্তু সেই দায়ভার কাউকে দিতে চাই না। আশা করি সকলের সহযোগিতায় এ সমস্যা দ্রুতই সমাধান করতে পারবো। আমরা চাই এই ঝামেলা থেকে তারা বের হয়ে আসুক। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এএসএ/এএস/এপ্রিল ১৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

Website Security Test