E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কর্ণফুলীতে ক্রীড়া সংগঠকের বিরুদ্ধে বিতর্কিত অভিযোগ, অনুসন্ধানে অসঙ্গতি

২০২৫ এপ্রিল ১২ ১৮:৪৪:০৯
কর্ণফুলীতে ক্রীড়া সংগঠকের বিরুদ্ধে বিতর্কিত অভিযোগ, অনুসন্ধানে অসঙ্গতি

স্টাফ রিপোর্টার : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বহুল পরিচিত ক্রীড়া সংগঠক এমএ রহিম ওরফে ‘ফুটবল রহিম’-এর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও দেহ ব্যবসার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে একটি পত্রে, যা পাঠানো হয়েছে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)-এর কাছে।

তবে অভিযোগকারীর পরিচয় যাচাই করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এমন কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বাস্তব অস্তিত্বই নেই। বিষয়টি ঘিরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালেও অনুসন্ধানে এই অভিযোগের স্বপক্ষে মিলছে না কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণও।

আইজিপির দপ্তরে পাঠানো অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এমএ রহিম কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইউএনও-ওসিকে ব্যবহার করে লুটপাট ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর তা অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়, যার দায়িত্ব দেওয়া হয় কর্ণফুলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জামাল উদ্দিন চৌধুরীকে। অনুসন্ধান চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

এমন গুরুতর অভিযোগের বিষয়টি জানার পর কর্ণফুলীর একাধিক গণমাধ্যমকর্মী স্বতন্ত্রভাবে অনুসন্ধানে নামেন। তবে তদন্তের শুরুতেই প্রশ্নের মুখে পড়ে অভিযোগপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে।

অভিযোগকারী হিসেবে যিনি নাম দিয়েছেন—‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরিষদ, কর্ণফুলী উপজেলা শাখার সহ-সমন্বয়ক রিয়াজুল হাসান অনিক’—এমন কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের অস্তিত্ব কর্ণফুলীর স্থানীয় মহলে বা কেন্দ্রীয়ভাবে নেই বলেই জানা গেছে। অভিযোগপত্রে কোনো ফোন নম্বর বা যোগাযোগের মাধ্যমও উল্লেখ নেই, যা যাচাই-বাছাইকে আরও দুরূহ করে তোলে।

সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমএ রহিম দীর্ঘদিন ধরে ক্রীড়া উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন এবং তাঁর উদ্যোগে অনেক খেলোয়াড় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, অতীতে তাঁর বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ কখনো উঠেনি।

তবে অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, এমএ রহিম কালারপোল ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও ক্রীড়া সম্পাদকের পদ দখল করে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন। পাশাপাশি, তিনি কর্ণফুলীর সাবেক ইউএনও শাহিনা চৌধুরীকে ব্যবহার করে সরকারি-বেসরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। এমনকি, কালারপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে রাতের আঁধারে বিদ্যালয় ব্যবহার করে অনৈতিক কার্যকলাপ চালানো হয়েছে বলেও দাবি করা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, এমএ রহিম বর্তমানে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় রয়েছেন এবং তাঁদের সহযোগিতায় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার আশ্রয় পাচ্ছেন। কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়ার ভাই জহির উদ্দিন বাবরকে কালারপোল ক্রীড়া একাডেমির চেয়ারম্যান বানানোর কথাও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

তবে সরেজমিনে দীর্ঘ ১৫ দিনের অনুসন্ধানে প্রতিবেদক এসব অভিযোগের কোনো সুনির্দিষ্ট ভিত্তি খুঁজে পাননি। চাঁদাবাজির বিষয়ে মিল-মালিকদের বক্তব্য বা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় করা হয়েছে, তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় অনুসন্ধান এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে কালারপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিরিন আক্তার বলেন, 'রহিম একজন ভালো মানুষ। তিনি স্কুলে ফ্যান, টেবিলসহ নানা শিক্ষা উপকরণ প্রদান করেছেন। স্কুলের সব কাজে সহযোগিতা করেন। চাবি দপ্তরী আর আমার কাছেই থাকে। অভিযোগগুলো মিথ্যা।'

একই কথা বলেন, অভিভাবক প্রতিনিধি নাসিমা আক্তার। তার ভাষায়, 'রহিম ভাই ভালো মানুষ। এমন কাজে জড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন।'

এই বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অভিযুক্ত এম এ রহিম বলেন, '৩ আগস্ট আমি এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ছিলাম। ভিডিও ফুটেজ ও পত্রিকায় তার প্রমাণ আছে। অথচ অভিযোগে বলা হয়েছে, আমি ওইদিন নিউ মার্কেট এলাকায় ছিলাম। এসব মিথ্যা অভিযোগ। কে বা কারা এগুলো করেছে জানি না।'

কালারপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শিকলবাহা ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার ইউপি সদস্য মো. আলমগীর বলেন, 'রহিম ভাই একজন ভালো মানুষ পাশাপাশি একজন ক্রীড়াবিদ মানুষ। উনার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ কখনো বিশ্বাসযোগ্য নয়।'

কর্ণফুলী থানার ওসি মোহাম্মদ শরীফ বলেন, 'আমি এখানে নতুন। অভিযোগকারীর নামে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, এমন কেউ নেই। এটি একটি ভুয়া অভিযোগ।'

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দা আমাতুল্লাহ আরজু বলেন, 'রহিম রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে স্কুলে আসেনি। এই স্কুলে উনার অবদান অনেক। স্কুলের জন্য যখন যা প্রয়োজন সব সময় সহযোগিতা পেয়েছি। ওনার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলো মিথ্যা ও বানোয়াট।'

জানতে চাইলে কর্ণফুলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমরা অনুসন্ধান করছি। তা সঠিক। তবে আমি এখন মিটিং-এ পরে কথা হবে।'

(জেজে/এসপি/এপ্রিল ১২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৩ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test