E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক উন্নয়নের কাজে কচ্ছপ গতি

জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় পুরোদমে শুরু হচ্ছে না কাজ, চরম ভোগান্তি 

২০২৫ এপ্রিল ১১ ১৮:০০:২৬
জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় পুরোদমে শুরু হচ্ছে না কাজ, চরম ভোগান্তি 

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে ৪ বছর আগে। কিন্তু আজও নেই দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি। ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস, চুটলিয়া মোড় এলাকায় শেষ হয়েছে ফ্লাইওভারের পাইলিংয়ের কাজ। ধোপাঘাটা সেতুর জন্য তৈরি করা হয়েছে ব্রিজের গার্ডার। করা হয়েছে কয়েকটি কালর্ভাটের কিছু অংশের উন্নয়ন। কিন্তু সড়কের মূল উন্নয়নকাজ এখনো শুরু হয়নি। জমি অধিগ্রহণের দীর্ঘসূত্রতার কারণে কাজ থমকে আছে। ফলে প্রতিদিন চরম দুর্ভোগে পড়ছেন এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা। ধুলাবালি, খানাখন্দ আর ধীরগতির যান চলাচলে এই মহাসড়ক এখন বিপদের আরেক নাম। 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় মহাসড়কের মূল আকার বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের অধীন ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ ও যশোর সদর উপজেলার মোট ৩০৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। তারা বলছেন, ছয় লেন প্রকল্পের অধীন মহাসড়কের মূল নকশার দ্রুত বাস্তবায়ন বা দৃশ্যমান অগ্রগতির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা জরুরি।

এদিকে ছয় লেন প্রকল্প বাস্তবায়নের আশায় দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইদহ-যশোর সড়কে কোনো সংস্কার হয়নি। কোথাও কোথাও ইট-বালু দিয়ে যানবাহন চলাচলের সাময়িক ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে মাগুরা-কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, উত্তরবঙ্গ ও ঢাকাগামী যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ফলে বেড়েছে ভোগান্তি। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১-এর আওতায় ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কে সাড়ে ৪৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার ছয় লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি (এন-৭) অনুমোদন দেওয়া হয়। ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়। এর মধ্যে ব্যয় একই রেখে প্রকল্পে মেয়াদ একবার বাড়িয়েছে সরকার। ২০২৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সার্বিক অগ্রগতির চিত্র দেখে প্রকল্পটি নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস থেকে যশোরের চাঁচড়া চেকপোস্ট পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য ৪৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার। প্রকল্পের অধীন মহাসড়কটিতে থাকবে একটি শর্ট ফ্লাইওভার, চারটি সেতু, ৫৫টি কালভার্ট, পাঁচটি ভেহিকুলার ওভারপাস, আটটি পেডিস্ট্রিয়ান ওভারপাস ও একটি রেলওয়ে ওভারপাস। এছাড়া প্রকল্প করিডোরকে স্মার্ট হাইওয়েতে রূপান্তর করার জন্য ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ও অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ডিজাইন করার কথা রয়েছে।

ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১ ঝিনাইদহ অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম লটে রয়েছে ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৯ কিলোমিটার সড়ক। দ্বিতীয় লটে মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে মুরাদগড় পর্যন্ত ১৫.৮ কিলোমিটার সড়ক। মুরাদগড় থেকে যশোরে পর্যন্ত বাকি অংশটুকু তৃতীয় লটে রয়েছে।

প্রথম লটে দুটি ভেহিকুলার ওভারপাস (ভিওপি), ২২টি কালভার্ট ও দুটি সেতু রয়েছে। এরমধ্যে ভেহিকুলার ওভারপাস, একটি সেতু ও আটটি কালভার্টের কাজ শুরু হয়েছে। কালভার্টের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে। এছাড়া লট-২ এর অধীন একটি সেতু, দুটি ভিওপি ও ১৯টি কালভার্ট রয়েছে।

ভোগান্তির কথা সড়কে চলাচলকারী হাসমত আলী বলেন,‘মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ইট-বালু বিছিয়ে দায়সারা সংস্কার করা হয়েছে। যানবাহন প্রায়ই এখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়। ধুলাবালিতে জনজীবন বিপর্যস্ত।’

গড়াই বাসের চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যশোর থেকে ঝিনাইদহ বাইপাস পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেহাল। বিষয়খালী, তেঁতুলতলা, চুটলিয়া, দোকানঘর, খয়েরতলা, নিমতলা, আগমুন্দিয়া এলাকায় সড়ক ভেঙে একাকার। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। জানি না কবে ছয় লেনের কাজ শেষ হবে।’

এ বিষয়ে উইকেয়ার ফেজ-১ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নিলন আলী বলেন, ‘আমাদের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। মান বজায় রেখে আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে জমি বুঝে পাই তাহলে কাজও পুরোদমে শুরু হবে। আর আমরাও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ বুঝে দিতে পারব।'

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অধিগ্রহণের জমির জন্য সড়ক বিভাগ ও বনবিভাগসহ কয়েকটি দফতরে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা তাদের তালিকা দ্রুত দিলে আমরা টাকার জন্য চিঠি পাঠাবো। তারপর অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’

(এসআই/এসপি/এপ্রিল ১১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test