E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

দেবহাটায় কালী ও রাধাগোবিন্দ মন্দিরে হামলা ভাঙচুর

তিন দিনেও পুলিশ মামলা না নেওয়ায় হামলাকারিদের আবারো হুমকি

২০২৫ মার্চ ২৯ ১৮:৪০:০৭
তিন দিনেও পুলিশ মামলা না নেওয়ায় হামলাকারিদের আবারো হুমকি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের পাইকাড়া সার্বজনীন কালীমাতা ও রাধা গোবিন্দ মন্দিরের চারিধারের বাঁশের চটার রেলিং ও পাকা প্রাচীর ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার পর মন্দিরের জমিতে থাকা মৎস্য ঘেরের বেড়িবাঁধ কেটে লক্ষাধিক টাকার মাছ লুটপাট করার ঘটনার তিন দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ। ফলে হামলাকারিরা আজ শনিবার দুপুরে ওই মন্দির চত্বরে যেয়ে মন্দির কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। তারা অবিলম্বে মামলা রেকর্ড করে হামলাকারিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের পাইকাড়া সার্বজনীন কালীমাতা ও রাধা গোবিন্দ মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ রায় জানান, পাইকপাড়া গ্রামের জামায়াত কর্মী বাবুরালী গাজী, তার ছেলে তার ছেলে মাহামুদুল হাসান, জামাল ফারুখ ও তাদের ভাড়াকরা ইন্দ্রনগরের ৩০/৩৫জন সন্ত্রাসী বুধবার দিবাগত রাত একটা থেকে দুই ঘণ্টাব্যাপি মন্দিরের বারান্দার রেলিং ও পূর্ব পাশের প্রাচীর ভেঙে ফেলে। ভেঙে নিয়ে যায় মন্দিরের সাইনবোর্ডটি। মন্দিরের জায়গায় থাকা ঘেরের বাঁধ কেটে দিয়ে বেড় জাল দিয়ে লক্ষাধিক টাকার মাছ লুট করা হয়। ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় ছয়জনকে পিটিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় মন্দির কমিটির সদস্য তপন কুমার রায় বাদি হয়ে বৃহষ্পতিবার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন জামায়ত নেতা ঘটনাস্থলে আসেন। তাদের সামনে বাবুরালী গাজী ও তাদের ছেলেরা দোষ স্বীকার করলে ঘেরের বেড়িবাঁধ, মন্দিরের প্রাচীর ও রেলিং নতুন করে তৈরি করে দেওয়ার নিশ্য়তা দেন। মন্দিরের রেলিং ও প্রাচীর ভাংচুরের ঘটনার বিষয়টি অবহিত করায় জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান কল্যাণ ঐক্য ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. অসীম ম-ল, অ্যাড. সুনীল কুমার ঘোষ, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত ও মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শণে আসেন। এ সময় তারা কাড়জপত্রের আলোকে বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করার জন্য পরামর্শ দেন।

অনিমেষ রায় আরো জানান, শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফারুক মাহাবুবুর রহমানসহ কয়েকজন একটি সাদা মাইক্রোবাসে এসে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হামলাকারিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে তাদেরকে হুমকি ধামকি দেন। এমনকি রঘুনাথ খাঁ ও মাধব দত্তসহ শুক্রবার সকালে আসা দুই আইনজীবীকে লক্ষ্য করে তারা আপত্তিকর মন্তব্য করেন। যাহা স্থানীয়ভাবে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির পক্ষে যথেষ্ট।

এ সময় সেখানে হাজির হন হামলাকারি বাবুরালী গাজীর ছেলে জামাল ফারুক তার ভাই মাহামুমুদুল হাসান, কালিগঞ্জের সন্ন্যাসীর চক গ্রামের সাহাবুদ্দিন গাজীর ছেলে আলাউদ্দিন গাজী, রজব হাওলাদারের ছেলে মহিদ হাওলাদার, ঢেবুখালি গ্রামের রজব হাওলাদারের ছেলে মজিদ হাওলাদারসহ কয়েকজন। তারা ফারুক মাহাবুববর রহমানের সঙ্গে সুরে সুর মিলিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের হুমকি দিলে বিষয়টি দেবহাটা তানাকে অবহিত করা হয়।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হামলাকারি মাহামুদুল হাসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার পর তারা হুমকি দিতে দিতে সোয়া একটার দিকে চলে যায়। পরে তারা গাজীরহাটে পৌঁছালে রজব আলীর ছেলে আব্দুল মজিদ হাওলাদার প্রকাশে পাইকপাড়ার হিন্দুদের হাত ও পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন। পুলিশ মীমাংসার নামে সময়ক্ষেপন না করলে হামলাকাররা শনিবার দুপুরে নতুন করে মন্দির চত্বরে আসতে পারতো না বলে অভিযোগ করেন অনিমেষ রায়।

নওয়াপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা রেজাউল ইসলাম জানান, পাইকাড়া সার্বজনীন কালীমাতা ও রাধা গোবিন্দ মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলা নিলে নতুন করে শনিবার দুপুরে ওই মন্দির চত্বরে সাংবাদিক পরিচয়ে সাংবাদিক ফারুক মাহাবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ভাংচুরকারিরা নতুন করে হুমকি দেওয়া ও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারতো না। মজিদ হাওলাদার শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে গাজীরহাট বাজারে পাইকপাড়ার হিন্দুদের হাত ও পা ভেঙে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি তিনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করলে একজন উপপরিদর্শককে পাঠানোর কথা তাকে অবহিত করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলার জন্য তিনি সব ধরণের চেষ্টা করবেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে ফারুক মাহাবুবর রহমান তার ভিডিও বক্তব্যে মানবাধিকার কর্মীসহ পাইকপাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের হুমকির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, তাদের মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের পর বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু আহম্মেদের প্রভাব খাটিয়ে তার জামাতা জনতা ব্যাংকের ব্রহ্মরাজপুর শাখার এক কর্মকর্তা বাবুরালী গাজীর দুই ছেলে ও এক পুত্রবধুর কাছে মন্দিরের দখলীয় জমি বিক্রেতা নজরুল ইসলাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য তিনি কয়েকজন সাংবাদিককে ম্যানেজ করেছেন বলে তারা জানতে পেরেছন।

এ ব্যাপারে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হযরত আলীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

(আরকে/এসপি/মার্চ ২৯, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০২ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

Website Security Test