E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কঠোর নিরাপত্তা 

ওড়াকান্দির স্নানোৎসবে লাখ-লাখ পূণ্যার্থীর ঢল

২০২৫ মার্চ ২৭ ১৯:১৮:০৪
ওড়াকান্দির স্নানোৎসবে লাখ-লাখ পূণ্যার্থীর ঢল

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাবারুনীর স্নানোৎসব চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পুণ্যার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে পৌনে দু’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী দেশের সর্ববৃহৎ এ স্নানে অংশ নিয়েছেন। উৎসবকে কেন্দ্র করে ওড়াকান্দিতে পাঁচ দিন ব্যাপী মহাবারুনীর মেলাও আরম্ভ হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বুধবার (২৬ মার্চ) রাত ১১ টা ১ মিনিটে স্নানোৎসব শুরু হয়। চলবে আজ বৃহস্পতিবার রাত ৯ টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত।

এতে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী পূণ্যার্থীরাও অংশ নিয়েছেন।

পূর্ণব্রহ্ম শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১৪ তম অবির্ভাব তিথি উপলক্ষে বুধবার রাত ১১ টা ১ মিনিটে গদীনশীল ঠাকুর ও মতুয়ামাতা শ্রী শ্রী সীমা ঠাকুর ও পদ্মনাভ ঠাকুর কামনা সাগরে স্নান করে স্নানোৎসবের শুভ সূচনা করেন।

এরপর পাঁচ কুড়ির দল স্নানে অংশ নেয়। তার পর থেকে চলতে থাকে পুণ্যার্থীদের অবিরাম স্নানোৎসবের পালা। যা শেষ হবে আজ বৃহস্পতিবার রাত ৯ টা ২৬ মিনিটে।

এ বছর রেকর্ড পরিমান ভক্ত ও পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটেছে শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে। সেনা বাহিনী সহ আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনী এ স্নানোৎসবকে নির্বিগ্ন করতে গত ১৫ দিন ধরে কাজ করছে।তারা সেখানে টহলের পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।

হরিচাঁদ ঠাকুরের ষষ্ঠ পুরুষ ও স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি সুব্রত ঠাকুর হিল্টু জানান, স্নানোৎসবে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা, নেপাল, ভূটান সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী পুণ্যার্থীরা এসেছেন। তারা দলে দলে ঢাক, ঢোল, শংখ, কাশি বাজিয়ে লাল নিশান উড়িয়ে ‘হরি বোল’ ধ্বনিতে এলাকা প্রকম্পিত করে স্নানোৎসবে অংশগ্রহণ করছেন।

“সারা দিন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ পুণ্যার্থী পাপ মুক্তি ও পাপ মোচনের আশায় স্নান করছেন। স্নান সেরে ভক্তরা ঠাকুরের মন্দিরে প্রণাম করে ব্যক্তি, দেশ-জাতির সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও ঠাকুরের কৃপা লাভের জন্য প্রার্থনা এবং গড়াগড়ি করছেন।”

এ বছর ২০ লাখ পূণ্যার্থী বারুণীর মেলা ও স্নানোৎসবে অংশ নেবেন বলে ধারণা করছেন সুব্রত ঠাকুর।
এ উৎসবকে ঘিরে ভক্তদের থাকার জন্য করা হয়েছে আবাসন ও প্রসাদের ব্যবস্থা। সেনা বাহিনী ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি মতুয়া মহাসংঘের প্রায় সাত শতাধিক স্বেচ্ছাসবক সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন জানান ঠাকুর পরিবারের এ সদস্য।

শ্রীধাম ওড়াকান্দি বরুণীর স্নান উদযাপন কমিটির সদস্য ও ঠাকুর পরিবারের সন্তান সম্পদ ঠাকুর বলেন, “হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি মহা তীর্থস্থান। সরকার কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে। সেনা সদস্য, আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনী ও গোয়েন্দা সদস্যরা ১৫ দিন ধরে কাজ করছে। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসন ও কাশিয়ানী উপজেলা প্রশাসনের দিক নির্দেশনায় স্নানোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই আমরা উৎসবের আমেজে স্নানোৎসব করতে পরছি। ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়েই এ উৎসব হচ্ছে।”

ওড়াকান্দির স্নানোৎসবে খুলনা থেকে আসা অশোক বিশ্বাস বলেন, বলেন, “এটি বারুণীর উৎসবের বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্নানোৎসব ও মেলা। এখানে পূণ্য লাভের আশায় স্নান করেছি।
“ওড়াকান্দিতে স্নান করলে পাপ মোচন হয় বলে আমরা বিশ্বাস রয়েছে। এ বিশ্বাস আমরা দীর্ঘ পৌনে ২শ’ বছর ধরে বংশ পরম-পরা লালন করে চলেছি।”

মাদারীপুর থেকে আসা কলেজ ছাত্র পলাশ বিশ্বাস বলেন, “আমি এবারই প্রথম ওড়াকান্দিতে এসেছি বন্ধুদের সাথে। স্নাণ করলাম, পরিবারের সবার জন্য মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করেছি।”

যশোর থেকে আসা প্যর্ণ্যার্থী শিউলী বিশ্বাস বলেন, “বিগত ৫ বছর ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে ওড়াকান্দির বারুণীর স্নাণে অংশ নিতে আসি। এখানে স্নাণ করলে মনোবাসনা পূর্ণসহ সকল পাপ-কষ্ট দূর হয় বলে বিশ্বাস করি । বিশ্বাসের ফলও পেয়েছি।”

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, “এ স্নানোৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ঠাকুর ওড়াকান্দিতে সুউচ্চ পর্যবেক্ষন চৌকি ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।”

নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির দ্যূত হিসাবে খ্যাত আধ্যাত্মিক পুরুষ পূর্ণব্রহ্ম শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর বাংলা ১২১৮ সালে মহা বারুণীর দিনে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথীর ব্রহ্ম মুহূর্তে জন্ম নেওয়া হরিচাঁদ ঠাকুর ১২৮৪ বঙ্গাব্দে ৬৬ বছর বয়সে জন্মের একই দিনে ও তিথিতে তিরোধানে যান।

বাবা যশোবন্ত ঠাকুরের পাঁচ ছেলের মধ্যে হরিচাঁদ ঠাকুর ছিলেন দ্বিতীয়। বাল্য নাম হরি হলেও ভক্তরা তাকে হরিচাঁদ নামে ডাকতেন।

এই পরম পুরুষ হরিচাঁদ ঠাকুরের অর্বিভাবে সাফলীডাঙ্গা গ্রাম হয়ে ওঠে ধন্য। এর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী গ্রাম ওড়াকান্দি হরিচাঁদ ঠাকুরের অলৌকিকত্ব ও লীলার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠে। এটি জেলা সদর থেকে মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

পৌনে ২শ’ বছর আগে ঠাকুরের অবির্ভাব দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে ওড়াকান্দিতে স্নানোৎসবের প্রচলন করা হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর এ উৎসব চলছে।

(টিবি/এসপি/মার্চ ২৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test