E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

তহশিলদার থেকে কানুনগো, হাবিবুল্লাহ'র সম্পদের পাহাড়

২০২৫ মার্চ ১৫ ১৮:৪১:৪৫
তহশিলদার থেকে কানুনগো, হাবিবুল্লাহ'র সম্পদের পাহাড়

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : নাম এস এম হাবিবুল্লাহ। রাজবাড়ী কালেকটরেটে সহকারী তহশীলদার হিসেবে চাকুরী শুরু তার। পদোন্নতি পেয়ে রংপুরে কানুনগো হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তবে হঠাৎই যেন আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন তিনি। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে হয়েছেন উচ্চবিত্ত। বদলে ফেলেছেন নিজের পরিবার ও আত্বীয় স্বজনের জীবনযাত্রার মান। স্ত্রী, সন্তান ও আত্বীয় স্বজনের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে গড়ে তুলেছেন শত কোটি টাকার সম্পদ। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে কয়েক দফা অভিযোগ করেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। এস এম হাবিবুল্লাহ’র বাড়ী রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আলহাজ ছালামত আলী শেখের ছেলে।

জানা গেছে, হাবিবুল্লাহর এসব সম্পদ অর্জনের পেছনের কারণ জানতে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর জনৈক জিল্লুল রহমান লিখিতভাবে একটি অভিযোগও দায়ের করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তিনি বর্তমানে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কানুনগো পদে কর্মরত রয়েছে। হাবিবুল্লাহ জ্ঞাত আয় বর্হিভূতভাবে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তাঁর দুর্নীতির টাকায় স্ত্রী, সন্তান আত্মীয়স্বজনের নামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। চাকুরীর সুবাদে ঢাকা, গাজীপুর, রাজবাড়ী সহ বিভিন্ন জায়গায় জমি, প্লট, ফ্লাট সহ অঢেল সম্পদ গড়েছেন।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এস এম হাবিবুল্লাহর স্ত্রী সাহিদার নামে ঢাকা ১৫৯/১১ বিএল মনিপুরে ৭৮ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা মুল্যের একটি বিলাসবহুল ফ্লাট এবং উত্তরা হাউজিং সোসাইটিসহ আরও দু’টি ফ্লাট রয়েছে। তার পরিবার ঢাকায় থাকেন। চলাফেরা করেন নিজস্ব দামী প্রাইভেটকারে। যার গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন নম্বর (ঢাকা মেট্রো গ- ৩৪-৮১২৩)। এলাকায় প্রাইভেটকার ছাড়া তিনি চলাফেরা করেন না। তার ছেলের রয়েছে ইয়ামাহা ব্রান্ডের মোটরসাইকেল। যার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর (ঢাকা মেট্রো ল-৪৫-৫৫০৮)। তার স্ত্রী সাহিদা ও সন্তানের নামে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। তার স্ত্রীর টিআইএন নং ১৩৭২৭৭৬৩৪৮৭৮ ও হাবিবুল্লাহ'র ঢাকা ট্যাক্স জোন-৪ এর সেলারি সার্কেল-৭৬ এ টিন নম্বর ৬৮২২৩৮৭৫৭৫৮১। হাবিবুল্লাহ’র আয়কর রিটার্নে মোট সম্পদ আছে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর তথ্য মোতাবেক ২২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩০ টাকা ও মোট বেতন ভাতা সহ বাৎসরিক আয় ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯৬০ টাকা। এরমধ্যে ১০ হাজার ৫৮৬ টাকা আয়কর প্রদান করেন।

সূত্র জানায়, এসএম হাবিবুল্লাহ এতোটাই প্রভাবশালী যে, দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়লেও অদৃশ্য কারণে তা গায়েব হয়ে যায়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কানুনগো পদে কর্মরত থাকায় ভূমি পরিদর্শন, খাস জমি বরাদ্দে মতামত, তদন্তসহ নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও সিদ্ধান্ত দেয়ার সময় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি সব কাজ সম্পন্ন করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেদন ও খাস জমি বরাদ্দে তিনি নেন লাখ লাখ টাকা। তার ইচ্ছামতো প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কথা বললে তিনি হেনস্তা করে থাকেন। কোটি কোটি টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে তিনি রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চাকুরী জীবনের বেশি সময় কাটিয়েছেন। অন্যত্র বদলী হলেও তিনি মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে পুনরায় ঢাকা শহরে বদলী হয়ে আসেন। বর্তমান কর্মস্থল রংপুর জেলা থেকে ঢাকায় আসার জন্য তিনি বদলী হওয়ার জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালিয়াকান্দি উপজেলা সদরে ও সদর ইউনিয়নের ৪৭ নং মৌজার টেলিফোন একচেঞ্জ এলাকায় ও বালিয়াকান্দি ভাই ভাই ফিলিং ষ্টেশন এলাকায় তার ও তার স্ত্রী সাহিদা সুলতানা এবং তার সন্তান হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান, শালিকা হামিদা পারভীনের নামে রয়েছে বাড়ি করার মত মূল্যবান ভিটা, জমি সহ কোটি টাকার সম্পদ। হাবিবুল্লাহ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে স্থানীয় খন্দকার হাসান তারেকের কাছ থেকে ৬৩ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকার জমি ক্রয় করেন। যার ২৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নগদ ও গত ১২ ফেব্রুয়ারী শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মিরপুর ব্রাঞ্চের মোঃ হাবিবুল্লাহ ৪০১৬১২১০০০১৬৮৫৮ নং হিসাব থেকে ৩৩ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন। হিসাবটিতে হাবিবুল্লাহ’র দুনীতির মাধ্যমে উপার্জিত কোটি কোটি টাকা জমা করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

হাবিবুল্লাহর নিজ এলাকায় নিজের ও তার স্ত্রী, সন্তানের নামে বহরপুর ইউনিয়নের রায়পুর মৌজায় রয়েছে ১০ একর কৃষি জমি। বহরপুরের ইলিশকোল মৌজায় একের পর এক মার্কেটের পজিশন জমি সহ কৃষি জমি ক্রয় করেছেন। বালিয়াকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকা, বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজ সংলগ্ন তার কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ সহ মার্কেট রয়েছে। তার স্ত্রী সাহিদা সুলতানার নামে বালিয়াকান্দি ভাই ভাই ফিলিং স্টেশনের আশে পাশে কোটি টাকার জমি রয়েছে। বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের রায়পুর, ইলিশকোল, বালিয়াকান্দি সদর ও পাইককান্দি মৌজায় এক বছরেই ১৭টি দলিলে কয়েক একর ভিটা সম্পত্তি ক্রয় করেছেন স্ত্রী ও সন্তানদের নামে। তার বাড়িতে একটি বড় গরুর খামার রয়েছে। যার মধ্যে ৩১টি গরু রয়েছে। খামার পরিচর্যা বা দেখভালোর জন্য প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনে একজন কর্মচারী রেখেছেন। তার গরু ও ফার্মের আনুমানিক মূল্য ৬০ লক্ষ টাকা। তার ছেলে প্রতি বছরে ৬-৮ বার মালয়েশিয়া যাতায়াত করেন। ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, কক্সবাজার এবং কুয়াকাটা এলাকায় ২০ কোটি টাকার প্লট আকারে সম্পদ রয়েছে হাবিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যদের নামে

স্থানীয় বালিয়াকান্দি থেকে শিমুল শেখ, মনিরুদ্দীন, আজিজ, মোতাহারদের নিকট থেকে ১ কোটি টাকার জমি ও নিজ গ্রামের বকু, অলি, মোতালেবের নিকট থেকে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার জমি ক্রয় করেছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, হাবিবুল্লাহর নেশা জমি কেনা। কিন্তু তার আয়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ জমি কেনেন। যেখানে বিরোধ, সেখানেই জমি কেনে। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।

এবিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রংপুরে কর্মরত হাবিবুল্লাহ বলেন, স্থানীয় জমিজমা নিয়ে বিরোধের কারণে এক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে নামে বেনামে অভিযোগ করে হয়রানী করে চলেছে। এছাড়া স্ত্রী ও ছেলের নামে জমি কেনার কথা উল্লেখ করলেও তাদের বৈধ কোন আয়ের উৎস উল্লেখ করতে পারেনি।

দুদক ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন, অভিযোগের বিষয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে এখনও কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(একে/এসপি/মার্চ ১৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০২ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test