খরস্রোতা তিস্তা এখন মরা খাল, ভাঙনে দুই যুগে লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি
.jpg)
প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের উলিপুরে খরস্রোতা তিস্তা নদী কয়েক মাস আগেও পারাপারে ভরসা ছিল নৌকা। এখন শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ নেই। জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় চর। নৌকা চলছে না। নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে মানুষে বাধ্য হয়ে প্রয়োজনীয় কাজে পায়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছেন। আর বেকার হয়ে পড়েছেন শত শত মাঝি ও জেলেরা। কিন্ত বর্ষার এলেই তিস্তা তার পুর্বরূপ ধারন করে ভেঙ্গে নিয়ে যায় নদী পাড়ের হাজার হাজার বাড়িঘর ও আবাদী জমি ও গ্রামের পর গ্রাম। সব হারিয়ে নিঃস্ব ভুমিহীন হয় হাজার হাজার মানুষ। নদীর এমন ভাঙ্গা গড়ায় স্থানন্তরিত হয়েছে তিস্তা পাড়ের সহস্রাধিক পরিবার। হারিয়ে গেছে অনেক গ্রাম। বদলে গেছে এলাকার মানচিত্র। তবুও স্থায়ী ভাবে নদী শাসনের উদ্যোগ নেয়নি সরকার। ভাঙন দেখা দিলে আপদকালীন সময় কিছু ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা কোন কাজে আসে না।
ফলে গত দুই যুগে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের সিংগভাগ এলাকা নদী গিলেছে। গৃহহারা হয়েছে ৮ হাজার পরিবার। অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষের। রাস্তা ঘাট, ব্রীজ কালভাট, সরকারি বেসরকারি স্থাপনাসহ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে লক্ষ কোটি টাকার। দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় জেগেছে। এখন তাদের একটাই দাবী তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্থবায়ন চাই। সেই লক্ষে গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা নদী বেষ্টিত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির আয়োজনে নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। থেতরাই ইউনিয়নের পাকার মাথা পয়েন্টে (তিস্তা নদীর উপকণ্ঠে) ২দিন ব্যাপী লাখো মানুষের অবস্থান সমাবেশ অনুষ্টিত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নের তথ্য মতে, গত ২৪ বছরে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ১৯টি ওয়ার্ড, ২৮টি গ্রাম, ২৩ কিলোমিটার এলাকা, ৬৭ হাজার একর জমি, সাড়ে ৮ হাজার পরিবার, ২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৬টি হাট বাজার ও ২২ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। এরমধ্যে বজরা ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড, ৮টি গ্রাম, ৩ হাজার পরিবার, ৫০ হাজার একর জমি, ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১টি ক্লিনিক, ২টি স্লুইজ গেট, ১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। দলদলিয়া ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ড, ১০টি গ্রাম, ১হাজার ৩’শ পরিবার, ১০ হাজার একর জমি, ৭ কিলোমিটার এলাকা ও ৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। থেতরাই ইউনিয়নের ওয়ার্ড ৭টি, গ্রাম ১০টি, পরিবার ৩ হাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪টি, কৃষি জমি ১ হাজার একর, স্লুইজ গেট একটি, ইউনিয়ন পরিষদ, পোষ্ট অফিস, ২টি হাট বাজার ও ৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। গুনাই গাছ ইউনিয়নের ২টি ওয়ার্ড, ৫টি গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪টি, হাট বাজার একটি ও ২কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ।
সরোজমিনে দেখা গেছে,খরস্রোতা সেই তিস্তায় পানি নেই। নদীতে জেগে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য চর। নৌকা চলে না মানুষ হেটে নদী পাড়া পাড় হচ্ছে। কিন্তু তিস্তার উজানে ভারতের গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করায় বাংলাদেশ অংশে প্রায়ই পানি সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে খরস্রোতা তিস্তা পানি শুকিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে নদীতে পানি না থাকায় রংপুরের কাউনিয়া থেকে কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারী বন্দর পর্যন্ত নৌ যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে য়ায়। ফলে এ অঞ্চলের নৌকার মাঝি ও জেলেরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এছাড়া নদীর খনন কাজ দ্রুত না করায় দিন দিন নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পানি প্রবাহের গতি প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। নদীর নাব্যতা হারানোর কারণে বর্ষা মৌসুমে দুই কূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে শত শত হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষিকাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। অথচ প্রতিবছর বর্ষায় ভারত হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে পানি ছেড়ে দেওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিপুল সংখ্যক মানুষকে।
নদীতে পানি না থাকায় বোরো চাষও হুমকির মধ্যে পড়েছে। সরকার দফায় দফায় তিস্তার পানি চুক্তি ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা বললেও তা বাস্তবতার মুখ দেখছে না।
থেতরাই ইউনিয়নের খারিজা নাটশালা চরের বাসিন্দা তৈয়মুর শেখ (৮০) বলেন, মোর এই বয়সে ১১ বার বাড়ি নদী ভাঙ্গার মুখোত (মুখে) পড়ে। জীবনের ব্যাকটি (সময়) গ্যালো নদীর লগে (সাথে) যুদ্ধ করতে। অহনও (এখন) চলছে যুদ্ধ, নদী বাঁন্দি দিলে বাকী জীবনটা কষ্ট থাকি বাঁচনো হয়।
হোকডাঙা গ্ৰামের জেলে নিবারণ চন্দ্র, বাবলু চন্দ্র সহ কয়েকজন জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে তিস্তা নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়ে হরেক রকমের মাছ ধরে তা বিক্রি করে জীবন চালিয়ে আসছি। এখন নদীতে পানিও নাই মাছও নাই। বর্তমানে আর এ পেশায় থাকা যাচ্ছে না, তিস্তা নদী আর নদী নাই, চর পরে মরে গেছে। জীবন বাঁচাতে আমাদের এ পেশা অনেকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
চর গোড়াইপিয়ায় গ্রামের নৌকার মাঝি , রুহুল আমিন সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন আমি ৪০ বছর ধরে নৌকা চালিয়ে আসছি। এখন প্রায় ৫ মাস থেকে নদীর কমে যাওয়ায় নৌকা চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নদীতে পানি কম থাকায় নৌকা দিয়ে কমসংখ্যক মানুষ পারাপার হয়। বেশিরভাগ মানুষ হেঁটে নদী পারাপার হয়। এ কারনে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারিভাবে তাদের কোনো সাহায্য সহযোগিতা করা হয় না। অনেকে বাধ্য হয়ে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। যারা দিন মজুরির কাজ করতে পারছে না তারা বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নের তিন ভাগ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এখন নদীতে পানি নাই। বর্ষা আসলেই নদীর ভয়াবহরুপ হয়। দেখা দেয় বন্যা ও নদীর ভাঙ্গন। শুরু হয় মানুষের জীবন ও ঘরবাড়ী রক্ষার লড়াই। গৃহহারা মানুষের আত্মনাদ ও আহাজারীতে দিশেহারা নদী তীরবর্ত্তী মানুষ। গৃহহারা ভুমিহীন ৩ হাজার পরিবার অভাব অনটনে দিশেহারা। বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে মানুষের দুঃখ দুর দশা বর্ননাতীত। তবে তিস্তার পানি চুক্তি ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে কৃষি জমি বিলিন হয়ে যায়। আবার সেই জমিতে পলি পড়ে আবাদী হয়। চরের জমির পরিমান প্রায় ৬ শত হোক্টর।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খন্দকার মো. ফিজানুর রহমান বলেন, তিস্তার ভাঙনে এ পর্যন্ত ৮/৯ হাজার পরিবার গৃহহারা হয়েছে। এ সমস্ত পরিবারের জন্য আপদকালীন সহায়তা প্রদান করা হয়।
নদী বিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, তিস্তার ভয়াবহ ভাঙ্গনে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। নদীটি উত্তরাঞ্চলের বলে বিগত কোন সরকার পদক্ষেপ নেয়নি। তিস্তা পাড়ের মানুষের আহাজারী সরকার শুনতে পায় না। তাই এবার আওয়াজ উঠেছে।
কুড়িগ্রাম পানি উনয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গনে লাখ লাখ কোটি টাকর সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ওই ৪ ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত ৮টি এলাকায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের টেন্ডার হয়েছে। খুব শিঘ্রই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
(পিএস/এসপি/মার্চ ১৩, ২০২৫)
পাঠকের মতামত:
- ‘শেখ হাসিনা আর কখনোই এ দেশে আসতে পারবে না’
- 'আমরা অজেয়, কারণ আমরা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত'
- 'ভোট ডাকাতির নির্বাচন জামায়াতে ইসলামী চায় না'
- রাজস্থলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারী যাত্রী নিহত
- নিজ গ্রামে শিশুটির দাফন, আসামিদের বাড়িতে আগুন
- ‘রাষ্ট্রব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর সেটারই উদাহরণ মাগুরার শিশুটি’
- ছাড়পত্র না থাকায় ভেঙে দেওয়া হলো ইটভাটা, ২ লাখ টাকা জরিমানা
- ঢাবির সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক আর নেই
- ঝালকাঠিতে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন
- পাংশায় ইয়াবাসহ যুবক গ্রেফতার
- রাজস্থলীর অসহায় পরিবারের পাশে কাপ্তাই সেনা জোন
- দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের মুল্যায়ন করতে হবে : শামা ওবায়েদ
- সুবর্ণচরে রফিকুন-নবী ফাউন্ডেশনের কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা
- ঈশ্বরগঞ্জে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে মানববন্ধন অবস্থান কর্মসূচী
- কালিগঞ্জের নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ
- খরস্রোতা তিস্তা এখন মরা খাল, ভাঙনে দুই যুগে লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি
- ভোটার তালিকা রক্ষা করুন, গণতন্ত্র নিশ্চিত করুন দাবিতে নির্বাচন অফিসের মানববন্ধন
- শৈলকুপায় দেবরের হাতে আহত ভাবীর মৃত্যু
- সাতক্ষীরায় দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
- পঞ্চগড়ে পালিত হলো বই উৎসব
- ‘আপনাদের সহযোগিতায় ফরিদপুরে স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে কাজ করতে চাই’
- স্বাধীনতা দিবস ওয়ালটন আন্তর্জাতিক রেটিং দাবা প্রতিযোগিতা শুরু শনিবার
- খাল পুনঃখননে ব্যাপক অনিয়ম-দুনীতির প্রতিবাদে গৌরনদীতে কৃষকদের মানববন্ধন সমাবেশ
- বিকৃত পৌরুষের শিকার আছিয়া, সমাজ কতটা দায়ী?
- রাজবাড়ীতে জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের ওরিয়েন্টশন কর্মশালা
- নির্ভার, তবুও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ইকবাল হোসেন অপু
- কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
- ‘ইন্ডাস্ট্রি নতুনদের পাশে থাকে না’
- কাজী সালিমুল হক কামাল সাবেক এমপির পক্ষে মহম্মদপুরে শীতবস্ত্র বিতরণ
- ভারতে আটক ৯০ বাংলাদেশি জেলে দেশে ফিরবেন সোমবার
- বরিশালের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রিন্টু গ্রেপ্তার
- সিরিয়ায় তুরস্কের বিমান হামলা
- ‘বরেণ্য নারীদের লেখায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ বই প্রকাশ
- যাত্রীবাহি বাসে ডাকাতি ও ২ নারী যাত্রীকে ধর্ষণ, বাসসহ আটক ৩
- পাংশায় ৩৭০ পিস গাঁজার গাছসহ চাষী গ্রেফতার
- বাগেরহাটে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
- দুই নারী কসাই, আলোচনা সর্বত্রই!
- বঙ্গবন্ধু
- লিভার রোগের ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজন সচেতনতা
- বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের সাক্ষ্য নেবে কমিশন
- আওয়ামী লীগ নেতাদের ঠিকাদারী কাজের তদারকির দায়িত্বে ছাত্রদলের আহবায়ক
- জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করতে সরকারকে আল্টিমেটাম
- বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষকের চিকিৎসায় প্রয়োজন ৭৫ লাখ টাকা
- ১০ লাখ টাকা নিয়ে ছেলে ঈশানের সঙ্গে আমিন খানের দ্বন্দ্ব
- অদম্য মেধাবী এক কিশোরের গল্প, ভালো কলেজে ভর্তি নিয়েও সংশয়