E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা

সাতক্ষীরায় দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

২০২৫ মার্চ ১৩ ১৯:৩২:২৯
সাতক্ষীরায় দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের হোতা মনিরুল ইসলাম মনি এবং তার প্রধান সহযোগী গাজী ফারহাদকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সাতক্ষীরার নিউমার্কেট মোড়ে বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা ও জেলা ক্লিনিক ওনার্স এসোসিয়েশনের আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা ট্রমা সেন্টারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী নাজমুল আহসান, বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা ও জেলা ক্লিনিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি শাহিনুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সিদ্দীকুর রহমান, প্রচার সম্পাদক নাজমুল ইসলাম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার বহু অপকর্মের হোতা কাজী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে বিভিন্ন ব্যবসায়ি, সাংবাদিক,ধমীয় সংখ্যালঘু ও বিএনপি নেতা কর্মীদের ফাঁদে ফেলে নির্যাতনও নির্যাতন বন্ধ করতে মোটা অংকের টাকা আদায় করেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনি ও তার সহধর্মিনী শাকিলা ইসলাম জুঁই। আওয়ামী লীগ ও মহিলা লীগের পরিচয় বহন করে ওই দম্পতি সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন, কাস্টমস কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারি এবং সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলে মোটা অংকের টাকা আদায় করেছেন। সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে অপহরণ ও অপহরণ পরবর্তী সাংবাদিকদের দৌড় ঝাঁপ সম্পর্কে কাজী মনিরুজ্জামানকে মোবাইলে ও ভিডিও চিত্র দিয়ে সহায়তা করতেন মনি-জুঁই দম্পত্তি। এজন্য ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে ওই দম্পত্তি মোটা অংকের টাকা লুটেছেন।

সাতক্ষীরা সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানকে নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনায় জড়িয়ে সম্মান নষ্ট করার ভয় দেখিয়ে ৮০ হাজার টাকা নেন সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনি। যদিও পরে তার পক্ষে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাঈদ নামের এক পত্রিকা সম্পাদক ওই টাকা শর্ত সাপেক্ষে ফেরৎ দিয়ে মনিরুল ইসলাম মনিকে রক্ষা করেন। গত বছরের ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর রাতারাতি ভোল পাল্টে ফেলেন মনি ও যুঁই। একপর্যায়ে মনিরুল ইসলাম মনি বর্তমানে সাতক্ষীরার কুখ্যাত চাঁদাবাজ সাংবাদিক কালবেলার হাবিবুল বাসার ওরফে গাজী ফরহাদের সঙ্গে সখ্যতা রেখে আশা, খলিল ও ইব্রাহীমসহ কয়েকজনকে নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তোলেন। তাদের অত্যাচার ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে পড়ে সাতক্ষীরার মানুষ।

বাংলাদেশ প্রতিদিন ও কালবেলা পত্রিকার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি হাবিবুল বাসার (গাজী ফারহাদ)কে গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়ে বলেন, জেলা শহরের প্রত্যেকটা ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে এই দুই চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও তাদের সিন্ডিকেট সদস্যরা নিয়মিত চাঁদা নিয়ে আসে। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো শুরু করে। শুধু তাই নয়, জেলার প্রত্যেকটা সরকারী বা বেসরকারী অফিসে গিয়ে এই সিন্ডিকেটটি চাঁদাবাজি করে। যা এই শহরের প্রত্যেকটা মানুষ জানে। রমজানের আগে এই শহরে কাচ্চি ডাইন এ খাবারের চার হাজার টাকা ছাড় দিতে রাজী না হওয়ায় ভোক্তা অধিকারকে দিয়ে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করানোর বিষয়টি সবারই জানা। নারী দিয়ে ব্লাক মেইলিং করে এই সিন্ডিকেটের বাহিনী প্রধান মনিরুল ইসলাম নিরীহ ব্যক্তিদের আর্থিক হয়রানী করে থাকে। গাজী ফরহাদের বিরুদ্ধে শহরের শিমুল ক্লিনিকে চাঁদাবাজি, ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদ এর কাছ থেকে চাঁদা আদায়, তালার শপিং ভ্যালী ফুড এ- প্রডাক্ট এর ব্যবস্তাপক জহর আলী সরদারের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও ৬০ হাজার টাকা আদায়ের ঘটনায় গত বছরের ২ এপ্রিল ওই ব্যবস্থাপক বাদি হয়ে গাজী ফরহাদসহ ৫ জন সাংবাদিকের নামে আমলী আদালতে মামলা করেন।

গত ২০২৩ সালের শেষের দিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী সমস্যায় জড়িয়ে গেলে তার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা মূল্যের রিস্ট ওয়াচ নিয়ে দুই পত্রিকা সম্পাদকের কাছে নিয়ে যায়। এতে দুই পাতার কড়া নিউজ ১০ লাইনে ছাপা হয়। গাজী ফরহাদের বিরুদ্ধে গ্রামের সাধারণ মেয়েদের কলে ফেলে কলমা পড়িয়ে কাতুকুতু দেওয়ার ছবি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার বিরুদ্ধে গত বছরের নভেম্বর মাসে কালিগঞ্জের কুমারখালিতে মালিকানাধীন জমি থেকে মন্দিরের জমিতে বালি তুলতে গেলে এক লাখ টাকা চাঁদাদাবির অভিযোগ করেছেন ওই গ্রামের এক আইনজীবী।

এক সময় গাজী ফরহাদ সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনের মাইক্রোবাসে করে চাঁদাবাজি করে নিজের পরিচিতি বাড়িয়ে তোলেন। গত বছরের জুলাই মাসে বেতনা নদীর বিনেরপোতা নামক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর জেলেদের কাছ থেকে ১০০ কেজি মাছসহ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করায় গাজী ফরহাদসহ তার এক সহযোগীকে গণধোলাই দিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করেন স্থানীয় জনতা। সেনাবাহিনী তাদেরকে সদর থানায় সোপর্দ করে। পরে জ্যেষ্ঠ তিন সাংবাদিকের অনুরোধে ফরহাদও তার সহযোগীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

ঘরের মধ্যে ভাড়ে মা ভবানী হলেও মনিরুল ও গাজী ফরহাদের ব্যবহৃত মটর সাইকেল, গর্জিয়াস অফিসে ছবি তুলে ফটোসেশন কোন জমিদারের পোলা বলে মনে হয়। মনিরুল ও ফরহাদের বিলাসবহুল বাসা ও অফিস ভাড়া ছাড়াও তাদের জীবযাত্রার মান প্রত্যেককের লাখ লাখ টাকা উপার্জন হয় বলে মনে হয়। নিজেকে বড় মাপের বেতনভুক্ত সংবাদ কর্মী পরিচয় দিতে এবার প্রতিটি সুদৃশ্যমান টেবিল ক্যালেন্ডার প্রতিপিছ ৩০০ টাকা মূল্যের দুই শতাধিক ক্যালে-ার বানিয়ে বিভিন্ন অফিস ও বিশিষ্ঠ ব্যক্তিদের হাতে তুলে দিয়েছে গাজী ফরহাদ। তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আয়ের উৎস সম্পর্কে জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে।

গত বছর মোজাফফর গার্ডেনে যেয়ে ব্যবস্থাপকের কাছে দুই লাখ টাকার পাবলিক বিজ্ঞাপন চেয়ে না পাওয়ায় তার প্রতিষ্ঠানের মনগড়া ও আপত্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফরহাদ। একইভাবে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ^জিৎ অধিকারীর কাছে সুবিধা না পেয়ে তার বিরুদ্ধে মনগড়া ও কুরুচিপূর্ণ সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ রয়েছে গাজী ফরহাদের বিরুদ্ধে।

বক্তারা আরো বলেন, এই জেলা শহরে প্রায় তিন শতাধিক সাংবাদিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত। কিন্তু এই মনি-ফারহাদ সিন্ডিকেটের বাইরের কোন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ঢালাও চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই। কখনো পুলিশ কর্মকর্তা আবার কখনো জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তার সঙ্গে কৌশলে ছবি তুলে ফরহাদ নিজেকে সাধারণ মানুষের কাছে প্রভাবশালী বা হিরো হিসেবে প্রতীয়মান করার চেষ্টা করেছেন। তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না। ওদের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে তাকে বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িয়ে ফাসিয়ে দেয়। প্রশাসন ও প্রতিবাদকারিদের চাপে রাখতে বিভিন্ন উপজেলায় সমমনা সাংবাদিকদের কাছে ব্যানার ও টাকা পাঠিয়ে মানববন্ধন করায় ফরহাদ। বাংলাদেশ প্রতিদিনের মনিরুল ইসলাম মনি ও কালবেলা’র হাবিবুল বাশার ফারহাদের জন্য প্রকৃত সাংবাদিকরাও অপমানিত হচ্ছেন। তারা এই মহান পেশাকে কলঙ্কিত করেছে। চাঁদাবাজির কারণে তাদের দুই জনের নামে মামলা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

(আরকে/এসপি/মার্চ ১৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test