E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

পঞ্চগড়ে মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ

২০২৫ মার্চ ১২ ১৪:৫৮:২৮
পঞ্চগড়ে মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ

রহিম আব্দুর রহিম, পঞ্চগড় : ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক আল আমিনের (৩৬) মরদেহ অবশেষে ফেরত দিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাত ৯টায় পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

গত ৮ মার্চ ভোরে পঞ্চগড়ের ভিতরগড় সুইডাঙ্গা সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন আল আমিন। পরে বিএসএফ তার মরদেহ নিয়ে যায়। নিহত আল আমিনের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের জিন্নাতপাড়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার সুরুজ আলীর ছেলে।

বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সূত্রে জানা যায়, নিহত আল আমিনের মরদেহ ফেরত আনার জন্য কূটনৈতিক যোগাযোগ ও পতাকা বৈঠক করা হয়। এর পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ ফেরত দেয় বিএসএফ।

সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে ভারতের রাজগঞ্জ থানার পুলিশ তেঁতুলিয়া থানা পুলিশের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। এ সময় ভারতের রাজগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর অনুপম মজুমদার তেঁতুলিয়া থানার এসআই নরেশ চন্দ্র দাস উপস্থিত ছিলেন। পরে পরিবারের পক্ষে মরদেহ গ্রহণ করে নিহতের বড় ভাই মোস্তফা কামাল। বুধবার সকালে জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

আল আমিনের হত্যাকান্ডে ঘিরে ১০ মার্চ সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটায় বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টের প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি ও বিএসএফের সেক্টর পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে বিজিবি'র ঠাকুরগাঁও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল গোলাম রব্বানী পিএসসি, জি সেক্টর কমান্ডার। বিজিবি ১৮ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনির, নীলফামারী বিজিবি ৫৬ ব্যাটলিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল বদরুদ্দোজা।প্রতিপক্ষ বিএসএফের নেতৃত্ব দেন শিলিগুড়ি সেক্টর কমান্ডার শ্রী পি কে শিং।সীমান্তে বেসামরিক মানুষ হত্যা বন্ধে দু'দেশের সীমান্তে রক্ষীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা, পর্যালোচনা,প্রতিবাদ এবং নিন্দাবাক্য বিনিময় হয়। বৈঠক শেষে ঠাকুরগাঁও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, "সীমান্তের প্রতিটি হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কঠোর প্রতিবাদ করা হয়েছে। কেউ অপরাধ করলে তাকে সীমান্ত আইন লঙ্খন,পাসপোর্ট আইন বহির্ভূত কর্মকান্ড,পাচার বা চোরাচালান অপরাধের অভিযোগে ফৌজদারি মামলা হতে পারে। বেসামরিক মানুষ হত্যা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। 'বিএসএফের এধরনের হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি,তিনি তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, 'সীমান্তে অনুপ্রবেশ, চোরাচালান ও সীমান্ত হত্যা প্রতিরোধকল্পে বিজিবি টহল কার্যক্রমের সাথে সাথে সীমান্তের অধিবাসীদের সীমান্তের আইন মেনে চলার জন্য সচেতন করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।সহসায় সীমান্ত এলাকায় মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হবে।" নিহত আল আমিন গত ৮মার্চ শনিবার রাতে ভারতের ভাটপাড়া গ্রামে প্রবেশ করলে বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।

পঞ্চগড় বিজিবি'র১৮ ব্যাটলিয়নের সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০বছরের ব্যবধানে পঞ্চগড় সীমান্তের আটোয়ারি ও তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাদেশ ভারতের মোট ১৯১টি সীমান্ত পিলার নিঃচিহ্ন হয়েছে নদীর তলদেশ থেকে ড্রিলড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে। নিঃচিহ্ন পিলারগুলোর মধ্যে আটোয়ারি উপজেলার নদীডাঙ্গী ১টি, দারখোর ১৪টি, গিরাগাঁও ১টি, রমজানপাড়া ১০টি, আমতলা ২টি, বোদাপাড়া ২টি, কাকপাড়া ২টি। তেঁতুলিয়া উপজেলার খেঁকীপাড়া ৩টি, বকশীগঞ্জ ১৪টি, লালটুগজ ৩টি, ময়নাগুড়ি ৪টি, বালাচন্ডি ২টি, পাঠানপাড়া ৩টি, শেখগঞ্জ ৭টি, খাটিয়াগজ ৩টি, মন্ডলপাড়া ১৩টি, প্রেমচরণজোত ২৭টি, তেলিপাড়া ২টি, সিদ্দিক নগর ৬টি,ঈদগা বস্তি ২টি, ডাক বাংলা ৮টি, বারঘড়িয়া১টি, সর্দারপাড়া ৩১টি, উত্তর কাশিমগঞ্জ ৩টি, সন্ন্যাসীপাড়া ১০টি, প্রধানপাড়া ১টি, বোগলাহাটি ২টি ও কিত্তনপাড়ায় ১টি।

বিএসএফ, বিজিবি ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, বিগত ৩০ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তের ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটারের (২৫৪৫ মাইল) বিভিন্ন প্রান্তে এই হত্যাকান্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।

বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে প্রায় ২হাজার বেসামরিক মানুষের নিহত হয়েছে। এখনও যা চলছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৫বছরে নিহত সংখ্যা ৮০জন। ২০০১থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১০বছরে নিহত হয়েছে ৬১২ জন। ২০১২থেকে ২০১৬পর্যন্ত নিহত ১৪৬জন২০১৭থেকে ২০২৪ পর্যন্ত নিহত ৭৭৩জন। সম্প্রতি একটি মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টে প্রকাশ হয়েছে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত গত ১৬ বছরে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের গুলিতে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫৮৮ জন বেসামরিক মানুষ মারা গেছে।এসময় আহত হয়েছে ৭৭৩ জন।তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী সীমান্তে সবচেয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে ২০০৯ সালে। সেই বছর বিএসএফের হাতে মোট হতাহতের শিকার হোন ১৭৫ জন বাংলাদেশী। যাদের মধ্যে ৯৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আর ৭৭ জন আহত হয়েছে।এ ছাড়া ২০১০ সালে ৭৪ জন, ২০১১ সালে ৩১ জন, ২০১২ সালে ৩৮ জন, ২০১৩ সালে ২৯ জন, ২০১৪ সালে ৩৫ জন, ২০১৫ সালে ৪৪ জন, ২০১৬ সালে ২৯ জন, ২০১৭ সালে ২৫ জন, ২০১৮ সালে ১১ জন, ২০১৯ সালে ৪১ জন, ২০২০ সালে ৫১ জন, ২০২১ সালে ১৭ জন, ২০২২ সালে ১৮ জন, ২০২৩ সালে ২৮ জন ও ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১৯ জনকে হত্যা করেছে বিএসএফ।এখন যা চলছে।

এসময়ের মধ্যে ভারতের ১৯জন সেনা সদস্য নিহত এবং ৪হাজার ২২৫জন বিএসএফ চোরাকারবারিদের আঘাতে মারাত্মক আহত হবার ঘটনায় ঘটেছে। পঞ্চগড় সীমান্তে সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাকান্ডটি ঘটে ২০০৮সালের ডিসেম্বর। ওই সময় ভারতের বিএসএফের ৩২ব্যাটলিয়নের শ্যামগজের টহলরত মদ্যপপায়ী এক বিএসএফ সদস্য মাতাল অবস্থায় ভোরবিহানে বাংলাদেশের মাঝিপাড়া বিওপি সংলগ্ন ময়নাকুড়ি গ্রামে প্রবেশ করে ঘুমান্ত মানুষের উপর গুলি চালায়, ওইদিন সংশ্লিষ্ট গ্রামের একই পরিবারের ২ শিশুসহ তিনজন নিহত হয়। এই সদস্যের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে ওই বাড়ির মহিলারা বিএসএফের সদস্যকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে, পরে তাকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ভারতের বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়।পরে এই সদস্যেকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়, ভারত সরকার। এই নিয়ে সারা বিশ্বের মানবাধিকার কর্মী সোচ্চার হলে, কয়েক মাস সীমান্ত হত্যা বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে একই কায়দায় বিএসএফ হত্যাকান্ড অব্যাহত রয়েছে।যা নিন্দনীয়, দুঃখজনক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবার মত ঘটনা।এর স্থায়ী অবসান হওয়া দরকার বলে সর্বস্তরের জনমানুষ কামনা করছে।

(এআর/এএস/মার্চ ১২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১২ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test