E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

সোনারগাঁয়ে দুই ছিনতাইকারীর বাড়িতে এলাকাবাসীর হামলা ভাঙচুর

২০২৫ মার্চ ০৮ ২০:১৯:০৫
সোনারগাঁয়ে দুই ছিনতাইকারীর বাড়িতে এলাকাবাসীর হামলা ভাঙচুর

নির্মল কুমার সাহা, সোনারগাঁ : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জাহিদ ও মেহেদী নামে দুই ছিনতাইকারীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। গত শুক্রবার (৭ মার্চ) দিবাগত রাত ১০ টা ৩০ মিনিটের সময় উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের দমদমা গ্রামে জাকির হোসেন জিকু এবং তার বড় ভাই দমদমা গ্রাম প্রধান সৈয়দ হোসেনের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। 

সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানায়, দমদমা গ্রামের জাকির হোসেন জিকুর বড় ছেলে ও সোনারগাঁ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের ভিপি (ভাইস প্রেসিডেন্ট) দাবিদার জাহিদ এবং তার ছোট ছেলে মেহেদী হাসান, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের দমদমা-কালাদরগা রোডের দমদমা ব্রীজ, দলদার, বড় সাদীপুর, মোগরাপাড়া বাজার রোডের বিশেষখানা, ষোলপাড়া আমতলা, লেবুছড়া, সাহচিল্লাহপুর, কাবিলগঞ্জ, সোনারগাঁ সরকারি কলেজ, মোগরাপাড়া বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে দিন ও রাতের বিভিন্ন সময় জাহিদ ও মেহেদীর ছিনতাই বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের কাছ থেকে ছিনতাই করে সর্বস্ব লুট করে আসছিলো।

এ সমস্ত এলাকায় ভাড়াটিয়া দিন-মজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কারসহ সাথে থাকা সকল মূল্যবান জিনিসপত্র ফিল্মি কায়দায় ছিনিয়ে নেয় জাহিদ-মেহেদী গ্রুপ। প্রতিদিন বিভিন্ন স্পটে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় তারা। ছিনতাইয়ের কবলে পড়া ব্যক্তিরা বেশিরভাগ ভাড়াটিয়া হওয়ায় থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করার সাহস পায়না। তাদের বাসায় স্বজনরা আসলে সতর্কতার সহিত আসতে বলতেন, যাতে জাহিদ/মেহেদির চোখে না পড়ে। প্রতিনিয়ত এ ধরণের ঘটনায় এ সকল এলাকার ভাড়াটিয়ারা অন্যত্র চলে যাওয়ায় স্থানীয় বাড়ির মালিকরাও পড়েছেন বিপাকে। এদিকে স্থানীয়রা থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে এ সকল বিষয়ে অবগত করেন। কিন্তু থানা প্রশাসন এর কোন প্রতিকার না করায় ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে ভুক্তভোগী গ্রামের বাসিন্দারা।

এরই ধারাবহিকতায় শুক্রবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সময় ষোলপাড়া আমতলা এলাকার আরশাদ স্বর্ণকারের বাড়ির ভাড়াটিয়া বরিশাইল্লা শাহিনের এক আত্মীয় বেড়াতে আসে। শাহিনের বাড়িতে তার আত্মীয় যাওয়ার সময় তার কাছ থেকে আমতলা নামক স্থানে ৫ হাজার টাকা ও মোবাইল রেখে তাকে মারধর করে বিদায় দেয় জাহিদ, মেহেদী ও তার বাহিনীর সদস্যরা। ভুক্তভোগী আত্মীয় এ তথ্য শাহিনকে জানালে শাহিন, জাহিদ ও মেহেদীর বাড়িতে গিয়ে তাদের বাবা জাকির হোসেন জিকুকে জানায়। জাকির হোসেন জিকু ছেলেদের শাসন না করে বিচার নিয়ে বাড়ি যাওয়ায় উল্টো শাহিনকে চরথাপ্পর মেরে বিদায় করে দেয়। শাহিন এ কথা তার ষোলপাড়া এলাকায় গিয়ে জানালে ষোলপাড়া মসজিদে তারাবিহ নামাজ শেষে মুসল্লীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং মসজিদের মাইকে এলাকায় ডাকাত পরেছে ঘোষণা দেন।

মাইকের ঘোষণা শুনে দমদমা, কালাদরগাহ (গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ), দলদার, বড় সাদীপুর, ষোলপাড়া আমতলা, বিশেষখানা, লেবুছড়া গ্রামের কমপক্ষে দেড় সহস্রাধিক গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাহিদ ও মেহেদিকে ধরতে তার বাড়িতে যায়। এ সময় তার বাড়ি থেকে তার এক আত্মীয় রাম দা নিয়ে এলাকাবাসীকে মারতে উদ্যত হলে বিক্ষুব্দ এলাকাবাসী জাকিরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। রাম দা নিয়ে তেড়ে আসা ওই আত্মীয় দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে নিরাপদে চলে যায়।

এদিকে, জাকিরের বাড়িতে হামলার পাশাপাশি জাকিরের বড় ভাই দমদমা গ্রামপ্রধান সৈয়দ হোসেন'র বাড়িতেও হামলা করে। কারণ ভাতিজাদের দিনের পর দিন বিভিন্ন অপকর্মের কথা জেনেও বিচার না করায় এবং জাহিদ ও মেহেদীর ছিনতাইয়ের কাজে সৈয়দ হোসেনের দুই ছেলে মাহফুজ ও মাহিন'র সহযোগিতা আছে এমন অভিযোগে সৈয়দ হোসেনের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় উত্তেজিত জনতা জাকিরের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে দমদমা গ্রামের উপস্থিত মুরুব্বিরা বাড়ি-ঘরে নারী ও শিশু রয়েছে জানিয়ে আগুন দেয়া থেকে ক্ষুব্দ ভুক্তভোগীদের বিরত রাখতে সক্ষম হন।
মসজিদের মাইকে গ্রামে ডাকাত হামলার খবর শুনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলরত একটি গাড়ি দমদমা গ্রামে প্রবেশ করে। তারা জাহিদ ও মেহেদীকে ধরার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।

এদিকে, রাত সাড়ে ১২ টার দিকে সাহেব বাড়ি ও গোহাট্টা গ্রামেও ডাকাত এসেছে বলে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা করতে শোনা যায়।

(এনকেএস/এসপি/মার্চ ০৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৯ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test