E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

বিএনপি ও যুবদল নেতা দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মারধর, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, লুটপাটসহ নানা অভিযোগ

২০২৫ মার্চ ০৮ ২০:১০:০৩
বিএনপি ও যুবদল নেতা দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মারধর, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, লুটপাটসহ নানা অভিযোগ

বরগুনা প্রতিনিধি : একজন ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আপরজন ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক দুই সহোদর ভাই মিলে তাদের অনুসারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বাহিনী। এছাড়াও তাদের পিতা বিএনপির সহযোগী সংগঠনের জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে ইউনিয়ন জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন দুই সহদর ভাই। মামলা বানিজ্য, চাঁদাবাজি, লুটপাট, ছিনতাইসহ তাদের দুই ভাইয়ের  নানা কুকর্মের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তবে অভিযোগের বিষয়ে কথা হলে ড্রেজারে ছিনতাই, লুটপাটের কথা স্বীকার করে মালামাল ফেরত দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত যুবদল সভাপতি।

অভিযুক্ত দুই সহোদর ভাই হলেন সদর উপজেলার ৫ নম্বর আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব শিপা আহমেদ ও ওই একই ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক শিপলু আহমেদ। তাদের পিতা জালাল উদ্দিন বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের আহবায়ক।

একটি লোড ড্রেজারের শ্রমিকদের জিম্মি করে তাদের মালামাল ছিনতাইয়ের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ কারতে গিয়ে দুই সহোদর ভাই দলীয় প্রভাব বিস্তার করে নানা কুকর্মের অভিযোগ সামনে আসে।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার (৭ মার্চ) প্রতিদিনের মত বরগুনা পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে বলু মহল-১ এ বালু কাটছিলো এম বি জারিফ, এমবি জহিরুল এন্টারপ্রাইজ ও এম বি আফরান লোড ড্রেজারের শ্রমিকরা। ওই দিন বিকেলে শিপা ও শিপলু তাদের অনুসারী বাহিনী নিয়ে বালুমহলে গিয়ে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ড্রেজার শ্রমিক নুরে আলম, ইব্রাহিমসহ আরো ৪/৫ পাঁচ জন শ্রমিককে তীরে ধরে নিয়ে আসে। ওই শ্রমিকদের ডাকচিৎকারে স্থানীয় লোকজন নদীর তীরে ছুটে আসে। এসময় স্থানীয়দের সামনেই দেশীয় অস্ত্রের মুখে মোস্তফা নামের এক শ্রমিককে মারধর করে একাধিক শ্রমিকের মোবাইল ফোন, নুরে আলমের ড্রেজার থেকে নগদ টাকা ছিনতাই করে এবং দুইটি ড্রেজারের জ্বালানি তেল লুট করে নিয়ে যায়।

নাম নান প্রকাশের শর্তে স্থানীয় একাধিক এলাকাবাসী আরো জানান, বাবা ও দুই ছেলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তারা ভীত সম্ভ্রান্ত। মারধর ও অহেতুক হয়রানির ভয়ে তাদের তিন বাপ-ছেলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করে কেহ। এসময় গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্য করে স্থানীয়রা বলেন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বিএনপি ও বাবার পরিচয়ে দুই ভাইয়ের সকাল থেকেই শুরু হয় চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলা দেওয়ার কথা বলে হুমকি, হামলা, নির্যাতন সহ সকল অসামাজিক কার্যকলাপ। এছাড়াও আওয়ামীলীগের আমলেও নৌকার মনোনীত প্রার্থী এম মজিবুল হক কিসলুর সাথে মিলে নির্বাচনে সাধারণ মানুষকে মামলা-হামলাসহ মাদক সেবন ও কেনা-বেচাসহ এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।

বাবা জালাল উদ্দিন ও দুই ছেলে শিপা এবং শিপলু সংগঠনের পরিচয়ে চাঁদাবাজি, মারধর, মামলা বানিজ্যসহ নানা অপকর্মের কারনে স্থানীয় বিএনপি'র বদনাম হচ্ছে এবং দলটির উপর আস্থা হাড়িয়ে মুখ ফিরেয়ে নিতে শুরু করেছে স্থানীয় ভোটারগণ এমনটা দাবী করে বাবা ও দুই ছেলে কুকর্ম থেকে মুক্তি পেতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন স্থানীয়রা।

হামলার শিকার ভুক্তভোগী নূরে- আলম, ইব্রাহিম, জহিরুলসহ আরো কয়েকজন ড্রেজার শ্রমিক বলেন, প্রায় সময়ই চাঁদা দ্বাবি সহ বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদান করে আসছিল বিএনপি নেতা শিপা ও শিপলু সহ তার ক্যাডার বাহিনীর লোকজন। এগুলো আমাদের মালিকদের বলেছি। শুক্রবার বিকেলে বালি উত্তলনের সময় হঠাৎ অতর্কিত ভাবে শিপা ও শিপলু তাদের বাহিনী নিয়ে এসে আমাদের আক্রমণ করে। আমরা কোথাও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তারা রামদা দিয়ে মারধর করে মোবাইল ও টাকা নিয়ে যায়। এবং ড্রেজার মালিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বালুমহালে যেন আর না ঢুকে মর্মে নানা হুমকি-ধামকি দেয়। ভয়ে আমরা স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হই।

বালুমহাল-১ এর সরকারি ইজারাকৃত দখলি মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, বরগুনা জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে দরপত্র মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা করে আসছি। বর্তমানে স্থানীয় বিএনপি-যুবদলের নেতাদের বাঁধা ও হুমকি ধামকিতে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মাঝে মাঝে ড্রেজারের শ্রমিকদের মারধর, ছিনতাই ও লুটপাটের শিকার হতে হয়। এসময় অভিযোগের বিষয়ে প্রশাসনের কাছে সঠিক ও উপযুক্ত বিচার দাবী করেন তিনি।

অভিযুক্ত ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মো. শিপা আহমেদ বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমি শুনেছি, আমি ওখানে ছিলাম না। বালুর চরের তীরবর্তী জায়গাটি ভাঙন কবলিত। তাই তাদের বালু কাটতে নিষেধ করা হয়েছে। আমার ছোট ভাইসহ স্থানীয় লোকজন বাঁধা দিয়েছে। তাছাড়া বিষয়টি চেয়ারম্যান জানেন।

অভিযুক্ত ইউপি যুবদলের আহ্বায়ক শিবলু আহমেদ বলেন, আমি গেছিলাম বালুমহালে। কয়টা কানের নিচে দিয়ে মোবাইল-ফোন, টাকা-পয়সা নিছিলাম। পরে ফেরত দিয়ে দিছি।

সদর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক সাজেদুল ইসলাম শিমুল বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম মোল্লার মোবাইলফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আবু জাহের কালবেলাকে বলেন, ঘটনার বিষয়ে ইাজাদার মামলা করবেন, বর্তমানে তিনি থানায় আছেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের এপ্রিল মাসে জেলাপ্রশাসক কার্যালয় হতে টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করে। সরকারি সকল প্রসেস সম্পন্ন করে "বুড়িশ্বর (পায়রা) নদী বালুমহাল-০১ বিধিমালার ১০(৬) অনুসারে বালুমহাল বুঝিয়া পায়। দখল বুঝিয়া দেওয়ার পরে বিধিমালার ১০(৭) অনুসারে ড্রেজিং কাজ শুরু করে আসছেন ইজারাকৃত ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান।

(এএস/এসপি/মার্চ ০৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৯ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test