E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

ফরিদপুরে ডিবির হাতে গ্রেফতার প্রতারক লিটন কারাগারে

২০২৫ মার্চ ০৬ ১৮:৫৮:৪৩
ফরিদপুরে ডিবির হাতে গ্রেফতার প্রতারক লিটন কারাগারে

রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরে প্রায় ডজনখানেক মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগ কর্মী সিকদার লিটনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ তাকে ফরিদপুরের আদালতে প্রেরণ করলে শুনানি শেষে আসামি লিটনকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত। মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ উপার্জন ও ছাত্র আন্দোলনের একাধিক মামলার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁর বিকাশ হিসাব নম্বরে গত তিনমাসে সাড়ে ২২ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে।

এর আগে গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে ফরিদপুর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়েজ আহম্মেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, সিকদার লিটন পুলিশের তালিকায় একজন চিহ্নিত প্রতারক ও দাগি আসামি। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি নানান ধরনের প্রতারণা করে আসছিলেন। গত ২০ জুলাই যমুনা ফিউচার পার্কের পাশে কুড়িল জোয়ার সাহারা কেন্দ্রীয় মসজিদের গলির মুখে পাকা রাস্তার ওপর গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন মারা যান। এই ঘটনায় শফিকুল ইসলাম নামে একজন মামলা করেন। আদালতের আদেশে ২৫ ফেব্রুয়ারি ভাটারা থানা পুলিশ মামলাটি নথিভূক্ত করে। সেই মামলায় এজাহারনামীয় ২৭ নম্বর আসামি কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সদস্য সিকদার লিটন।

এছাড়া মোহাম্মদপুর থানায় মোছা. নাদিরা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট দুপুরে মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজের সন্নিকটে রাস্তার ওপর জনতার ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে গুরুতর জখম ও হুকুম প্রদানের অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ করেছেন বাদী। মামলায় সিকদার লিটনকে মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা বলে অভিযুক্ত করেছেন বাদী। যেখানে তাকে ১১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সিআর-১২৫/২৫ মামলাটির এজাহার থানায় রুজু করা হয়।

২০২০ সালে এক মামলায় দীর্ঘ চারবছর কারাগারে ছিলেন সিকদার লিটন। এর আগেও বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে থেকেছেন তিনি। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেল থেকে বেরিয়ে এসে মামলা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন প্রতারণামূলক কাজ শুরু করেছেন তিনি।

যার একটি প্রমাণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন গত ৫ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ভাই মো. জাবেদ গুলিবিদ্ধ হন এবং পরবর্তীতে ১৩ আগস্ট ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ বিষয়ে তারা এখন পর্যন্ত কোনো মামলা-মোকাদ্দমার পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ, সিকদার লিটন নিজেকে জাবেদের খালাতো ভাই দাবি করে ঢাকার আদালতে একটি সিআর মামলার আবেদন করে, যা সম্পূর্ণ ও বানোয়াট। কারণ, এই সিকদার লিটন নামের ব্যক্তির সঙ্গে নিহত জাবেদের পরিবারের কোনো রকম আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। এমনকি তাঁকে কোথাও কোনো মামলার আবেদন করার অনুমতি, সম্মতি বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নিও দেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় নিহত জাবেদের ভাই মাইনুদ্দীন মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যা তদন্তাধীন রয়েছে।

সিকদার লিটন মূলত সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, স্বচ্ছল ব্যক্তিদের টার্গেট করে আজগুবি সব মামলা দিয়ে আসছিলো। ফেসবুক পেজে অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রমন করে পোস্ট দেয় প্রতিনিয়ত নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে চাঁদাবাজি করাই তার প্রধান উদ্দেশ্য। আর এসব অপকর্ম ঢাকতে লিটন এখন বিএনপি সমর্থক দাবি করা শুরু করেছে। অথচ, গত দেড় দশক ধরে সিকদার লিটন নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করতেন। এমনকি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের হয়ে ইউনিয়ন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে এলাকায় পোস্টারিং ও প্রচার প্রচারণা চালিয়েছিলেন লিটন।

জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা বলেন, সিকদার লিটনের নামে আলফাডাঙ্গা থানায় চাদাবাজি, প্রতারণাসহ প্রায় এক ডজন মামলা রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন থানায় আরও একাধিক মামলা রয়েছে। গতকাল বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর থেকে তাকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হস্তান্তর করা হয়।

গ্রেপ্তারের বিষয়ে নিশ্চিত করে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-অর-রশিদ বলেন, সিকদার লিটনকে একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাঁরা আলফাডাঙ্গা থানায় হস্তান্তর করলে আজ (বৃহস্পতিবার) তাঁকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

(আরআর/এসপি/মার্চ ০৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৯ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test