E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

রয়েছে ড্রেজার বাণিজ্য জবর দখলসহ চাঁদাবাজির অভিযোগ

আওয়ামী লীগ নেতাদের ঠিকাদারী কাজের তদারকির দায়িত্বে ছাত্রদলের আহবায়ক

২০২৫ মার্চ ০৬ ১৭:১৫:৫৯
আওয়ামী লীগ নেতাদের ঠিকাদারী কাজের তদারকির দায়িত্বে ছাত্রদলের আহবায়ক

আঞ্চলিক প্রতিনধি, বরিশাল : শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের ঠিকাদারী কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সাইদুল ইসলাম রনি। তারই ধারাবাহিকতায় এ ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে সাবেক মন্ত্রী ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর এপিএস শাওনের ঠিকাদারী কাজের তদারকিসহ বেপরোয়া চাঁদাবাজি, ড্রেজার বাণিজ্য ও ঠিকাদারী কাজ জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত সাইদুল ইসলাম রনি নলছিটি উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ও উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়নের তেতুলবাড়িয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ মাস্টারের ছেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি ও ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে রনি তার কতিপয় সহযোগিদের নিয়ে নলছিটি উপজেলা ও রানাপাশা ইউনিয়নে চাঁদাবাজি, দখল ও ড্রেজার বাণিজ্য এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের ঠিকাদারী কাজ সম্পন্ন করার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। দলীয় পদের প্রভাব বিস্তার করে রনি কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না।

অভিযোগ রয়েছে, নিজের আধিপত্য জানান দিতে দলের অসংখ্য ত্যাগী নেতাকর্মীকে হুমকি ধামকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে রনি ও তার সহযোগিরা। স্থানীয় বিএনপির দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারাও বাদ যাচ্ছেন না তাদের চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের কবল থেকে। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে রনি ও তার সহযোগিদের হাতে নানাভাবে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
দক্ষিণ তেতুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা ও বিএনপির ত্যাগী কর্মী হেলাল সিকদার অভিযোগ করেন, সম্প্রতি পারিবারিক কবরস্থানে তিনি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাটের কাজ শুরু করেন। ওইসময় রনি ও তার সহযোগি লিটন, সোহাগ, সজল মোল্লা, কামাল ফকির, হাসিব বিল্লাহ, মনির ডিলার, জুলহাস সিকদারসহ ১০/১৫ জনের একটি দল কবরস্থানে বালু ভরাটে বাঁধা প্রদান করে প্রকাশ্যে চাঁদাদাবি করে। এনিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় বিএনপি কর্মী মাওলানা ফেরদাউস সিকদারের মধ্যস্থতায় রনি ও তার সহযোগিদের চাঁদার টাকা দেয়ার শর্তে কবরস্থানে বালু ফেলতে দেওয়া হয়।

অভিযোগে আরও জানা গেছে, স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর এপিএস শাওনের ঠিকাদারী লাইসেন্সে পাওয়া তেতুলবাড়িয়া বাজার থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত একটি ইউনি ব্লকের রাস্তার কাজের তদারকি করছেন উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সাইদুল ইসলাম রনি। এছাড়াও আমির হোসেন আমুর ভায়রা কিরনের অন্যতম সহযোগি কুলকাঠী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চুর নামে-বেনামে বাগিয়ে নেওয়া সকল ঠিকাদারী কাজ তদারকি করছেন রনি ও তার সহযোগিরা।

উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়কের প্রভাব বিস্তার করে পলাতক বির্তকিত আওয়ামী লীগ নেতাদের ঠিকাদারী কাজের তদারকি করায় খোদ বিএনপি ও তার সকল সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে রনিকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, রনি নিজে লাভবান হতে গিয়ে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করছে। এছাড়া রনির বিরুদ্ধে তেতুলবাড়িয়া এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলীকে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

তবে উল্লেখিত সকল অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে অভিযুক্ত নলছিটি উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সাইদুল ইসলাম রনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে দলের একাংশের লোকজনে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। তিনি আরও বলেন, তেতুলবাড়িয়া বাজার থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত ব্লকের রাস্তার কাজটি দীর্ঘদিন থেকে পরে ছিলো। এলাকাবাসির অনুরোধে ঠিকাদার শাওনের সাথে যোগাযোগ করে কাজটি সম্পন্ন করতে আমি সহযোগিতা করেছি।

আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলীকে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে তিনি (রনি) বলেন, তার কাছ থেকে কোন নগদ টাকা গ্রহণ করা হয়নি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে আমাদের বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছিলো। তারই সূত্রধরে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বশির উদ্দিনের মাধ্যমে বিএনপির কার্যালয়ে চেয়ার এবং টেবিল ক্রয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা ডোনেশন করা হয়েছে।

নলছিটি উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোহাম্মদ সুজন জানান, এলাকায় অনেকেই দলের নাম ভাঙিয়ে ও পদ-পদবী ব্যবহার করে অপকর্ম করছে। আমরা দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তবে কিছু ব্যক্তির জন্য দলের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বিষয়গুলো দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে অবহিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নলছিটি উপজেলা বিএনপির সভাপতি হেলাল খান বলেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে কোথাও কেউ যেন কোনধরনের অপ্রীতিকর ও অস্থিতিশীল কর্মকান্ড না করে। হাইকমান্ডের এ নির্দেশনা কেউ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমার পক্ষ থেকে সুপারিশ করবো।

(টিবি/এসপি/মার্চ ০৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test