E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ধর্ষণ মামলা থেকে বাঁচতে অন্তঃসত্ত্বা নারী চিকিৎসকে বিয়ে করেও স্ত্রীর মর্যাদা দিচ্ছেন না চিকিৎসক

২০২৫ মার্চ ০১ ১৭:১৫:৫৭
ধর্ষণ মামলা থেকে বাঁচতে অন্তঃসত্ত্বা নারী চিকিৎসকে বিয়ে করেও স্ত্রীর মর্যাদা দিচ্ছেন না চিকিৎসক

রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ধর্ষণের মামলা থেকে বাঁচতে অন্তঃসত্ত্বা নারী চিকিৎসকে বিয়ে করেও স্ত্রীর মর্যাদা না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন এক সরকারি চিকিৎসক। ফেসবুকে পরিচয় সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে নারী চিকিৎসককে বিয়ে করেও স্ত্রীর মর্যাদা দিচ্ছেন না ফারহান তানভীর (৩৩) নামের এক সরকারি চিকিৎসক। বাধ্য হয়ে ওই চিকিৎসকের বাসার সামনে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে প্লেকার্ড হাতে দাড়িয়ে থেকেও কোন সুরাহা পাননি ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসক।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় newshour24bd নামে একটি ফেসবুক পেজে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা যায়। ভিডিওতে ভুক্তভোগী এক নারী চিকিৎসককে দেখা যায় প্লেকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৫ শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টায় ফরিদপুর জেলা শহরের ঝিলটুলি এলাকার অসিত্ত্ব টাওয়ার এর সামনে প্লেকার্ড হাতে এক নারী চিকিৎসক স্ত্রীর মর্যাদার দাবীতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট একা দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্লেকার্ডটি ডাক্তার ডা. ফারহান তানভীর নামের এক চিকিৎসকের ছবি সম্বলিত, নিচে লেখা ছিলো 'আমার স্বামী আমি আমার ন্যায্য অধিকার চাই স্ত্রী হিসাবে মর্যাদা চাই'।

বিয়ের ৭ দিনের পরেই নারী চিকিৎসকের এমন দাবীর বিষয়ে জানতে কালবেলা ছুটে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে। খোজ নিয়ে যানা যায় ডাক্তার ফারহান তানভীর এর সাথে গত ২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ফেসবুকে পরিচয় হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী চিকিৎসকের। আর সেই সূত্র ধরে তারা দুজন মেসেঞ্জার হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতে থাকে, অতঃপর দীর্ঘ ৫ মাসে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। এরপর বিয়ের আশ্বাস দেয়া হলে ঘটনাটি গড়ায় শারিরীক সম্পর্কে। এরই মধ্যে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারী নিজেদের মধ্যে আরও ভালো সম্পর্ক এবং দুজনকে ভালোভাবে চেনা ও বুঝার জন্য চিকিৎসক এস এম ফারহান তানভীর কক্সবাজার নিয়ে যান ওই নারী চিকিৎসককে। এবং সেখানের একটি হোটেল তিন রাত তিনদিন বিশেষ মুহুর্ত পার করেন দুজনে। এরপর অন্তঃসত্তা হন ওই নারী চিকিৎসক। এরপর ডাক্তার ফারহান তানভীর ১৮ই ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা বাঙালিয়ানা রেস্টুরেন্টে পারিবারিক ভাবে অন্তঃসত্ত্বা ওই নারী চিকিৎসককে বিয়ে করেন।

ডাক্তার এসএম ফারহান তানভীর ফরিদপুর জেলার মধুখালি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এমবিবিএস পাশ করেন। ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলি এলাকার এডভোকেট মো. আক্কাস আলী মিয়ার ছেলে তিনি। তারা ঝিলটুলির অসিত্ত্ব টাওয়ারের লিফটের ৪ তলায় ৫ডি-তে থাকেন।

অপরদিকে ডা. ফারহান তানভীরের স্ত্রী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসকের বাড়ি পাবনার সাথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর গ্রামে। তিনি বগুড়া মেডিকেল থেকে ২০১৮তে এমবিবিএস শেষ করে এখন ঢাকা মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন।

অন্তঃসত্ত্বা ওই নারী চিকিৎসক দাবী করেন এর আগেও তার হাসব্যান্ড ডাক্তার ফারহান তানভীর ফারিন আহমেদ আনিকা নামে অন্য একজন নারী চিকিৎসকে বিয়ে করেন এবং পরবর্তীতে তাকেও কোন এক কারণে ডিভোর্স দেন। আনিকা নামের ওই চিকিৎসকের সাথে ফারহান তানভীরের রেসটুরেন্টে বসা দুইটা ছবিও প্রতিবেদককে দেন ফারহান তানভীরের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ওই নারী চিকিৎসক।

তিনি বিয়ে এবং বিয়ে পরবর্তী সময়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, শহরের টেপাখোলার হোটেল বাঙালিয়ানাতে ১৮ ফেব্রুয়াররী বিকেল ৫টায় আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হলেও তাৎক্ষণিকভাবে ভাবে আমাকে ওই বাড়িতে উঠিয়ে নেননি ফারহান তানভীর এর পরিবার এবং বিয়ে সম্পন্ন হবার ৫ মিনিট পরেই আমাকে ও আমার পরিবারকে হুমকি ধামকি দেয়া শুরু করে আমার হাজব্যান্ড ডাক্তার ফারহান ও তাঁর পরিবার। পরবর্তীতে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গ আমাকে শাসাতে থাকে। এভাবে ঘটনাটি রাত সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত চলতে থাকে এক পর্যায়ে জোরপূর্বক আমাদের একটি সিএনজিতে উঠিয়ে দেয়া হয়। উপায় না পেয়ে আমি ও আমার পরিবার সেখান থেকে চলে আসি। এরপর ফারহান আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে ২০ তারিখ বিকেলে আমি ফারহান এর ঝিলটুলির বাসায় গিয়ে শারিরীক ভাবে নির্যাতনের স্বীকার হই এবং ৯৯৯ এ কল দেয়াতে থানা থেকে একটা টিম গিয়ে আমাকে রেস্কিউ করে নিয়ে আসে। সেদিন আমি রাত ১১ টা পর্যন্ত থানাতে অপেক্ষা করি এবং এর মাঝে হাসপাতাল থেকেও চিকিৎসা নিয়ে আসি। যার ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে এবং থানার সিসি ক্যামেরা চেক করলে সব ঘটনা পাওয়া যাবে।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, এত টাইম অপেক্ষা করার পরেও থানার ওসির সাথে আমি দেখা করতে পারি না। ওসি আমার সাথে দেখা না করে আমার বাবা কে কল দেন। বাবা কে আসতে বলেন থানায় মীমাংসা করার জন্য। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমার বাবা গত ২৫ তারিখ আসেন এবং আমরা থানায় যাই আনুমানিক ২ টার দিকে। ১ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ওসির সাথে আমার বাবা ও মামা দেখা করেন এবং তাদের কে বলেন মীমাংসা করার কথা। তখন ওসি আমার বাবা মামাকে বলেন এই বিষয়ে তিনি আর কোন কথা বলতে ইচ্ছুক না। মামলা করার কথা বলাতেও তিনি মামলা নিতে চান নি। এরপর আমি স্ত্রীর মর্যাদার দাবী করে ডাক্তার ফারহান তানভীর এর বাড়ির সামনে প্লেকার্ড হাতে অবস্থান নেই।

স্ত্রী মর্যাদার দাবীতে প্লে কার্ড হাতে দাঁড়ানো ভুক্তভোগী ওই নারী চিকিৎসক আরও অভিযোগ করে বলেন, ফারহানের পুরো পরিবার বিয়ের আগেই জানতেন আমি অন্তঃসত্ত্বা। তারা ধর্ষন মামলা থেকে বাচার জন্যই বিয়ে নামক এই নাটক এর আশ্রয় নেয় এমনকি আমার বিয়ের কাবিন নামায় জালিয়াতি করেছে তারা। বিয়ের দেন মোহোর ধার্য করা হয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা যার মধ্যে উসল ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার যার কোন টাকা এবং গহনা ছাড়ায় ক্ষমতাবলে জোরপূর্বক কাবিননামাত উসুল দেখানো হয়।

এবিষয়ে ডাক্তার ফারহান তানভীর এর সাথে কথা বলতে মধুখালি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি, হাসপাতাল সূত্রে যানা যায় তিনি তিন দিনের ছুটিতে আছেন। এদিকে ডাক্তার ফারহান তানভীরের দুটি মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে অন্তঃসত্ত্বা নারী চিকিৎসককে পুলিশের আইনি সহায়তা না দেয়া এবং থানায় লিখিত অভিযোগ না নেয়ার প্রসঙ্গে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদ উজ্জামান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই মেয়ে আসে নাই আমার কাছে। আমি বরং তাদের দুই পক্ষের অবিভাবককে ফোন দিয়েছিলাম মীমাংসার জন্য।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহ্‌মুদুল হাসান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাবো। তিনি আরো বলেন তদন্ত করে দেখা হবে বিষয়টি, সতত্যা পেলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিবো।'

(আরআর/এসপি/মার্চ ০১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test