E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ময়মনসিংহে প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ শীর্ষক প্রশিক্ষণ 

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২৬ ১৮:৪২:৪২
ময়মনসিংহে প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ শীর্ষক প্রশিক্ষণ 

নীহার রঞ্জন কুন্ডু, ময়মনসিংহ : বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) এর উদ্যোগে ময়মনসিংহ সাপলা রিসোর্স সেন্টার মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো ‘প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ।

ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রশিক্ষণটি আয়োজনে সহযোগি সংগঠন হিসেবে সামগ্রিক সহায়তা প্রদান করে 'নিষ্ঠা উন্নয়ন সংঘ'।

প্রশিক্ষণের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং ময়মনসিংহে প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার প্রেক্ষাপট-এর উপর কার্যপত্র উপস্থাপন করেন সিনিয়র সাংবাদিক নিষ্ঠা উন্নয়ন সংঘের নির্বাহী পরিচালক স্বাধীন চৌধুরী। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন বিএনএনআরসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম বজলুর রহমান ও প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর হীরেন পণ্ডিত।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ। তিনি বলেন, প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত সহিংসতার কারণ সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে এবং এর প্রতিকারের জন্য সমাজের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। সবাইকে সাথে নিয়েই এই যুদ্ধ করতে হবে।

প্রশিক্ষণে উপস্থিত বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক দিন মোহাম্মদ দিনু বলেন, আজকের প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের সাথে তাল মিলিয়ে এর অপব্যবহারও বেড়ে চলেছে, এতে বেড়েছে জনহয়রানি। সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিনিয়ত অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই নারী।এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৭৮% এরও বেশি নারী প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নারী প্রধান নাগরিক সমাজ সংগঠনের প্রতিনিধি, নারী নেত্রী, মানবাধিকার সুরক্ষা প্রদানকারীদের ভূমিকা জোরালো করার লক্ষ্যে এই প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়।

প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ছিলো প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ সম্পর্কে নাগরিক সমাজ-সংগঠনের নারী প্রতিনিধি, নারী নেত্রী, মানবাধিকার সুরক্ষা প্রদান সংস্থার নারী প্রতিনিধিদের ধারণা প্রদান এবং সচেতনতা বৃদ্ধি। প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজ-সংগঠনের কর্ম-পরিকল্পনা নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা-এর শিকার বা ভুক্তভোগীদের আইনগত প্রতিকার প্রাপ্তিতে সহায়তা প্রদান।

উন্নয়ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়বে। পাশাপাশি প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার বা ভুক্তভোগীরা আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাসমূহ থেকে প্রতিকার গ্রহণে উৎসাহী হবেন।

প্রশিক্ষণার্থীরা প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার প্রভাব সম্পর্কে অবহিত হন। এই সহিংসতা তুলনায় কম গুরুতর বা কম ক্ষতিকারক হিসেবে বিবেচিত হলেও এর ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, কিন্তু গবেষণায় দেখা যায় যে, এটি নারী ও মেয়েদের স্বাস্থ্য, জীবন এবং ভবিষ্যতের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে, যা নারী ও মেয়েদের নিরাপত্তা এবং সমন্বয়ের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হুমকি সৃষ্টি করে। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা-এর প্রভাবগুলো গুরুতর: স্ট্রেস, উদ্বেগ, বিষন্নতা, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা এবং এমনকি আত্মহত্যার প্রচেষ্টাও রিপোর্ট করা হয়েছে।

প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা থেকে সামলে ওঠা ব্যক্তিরা প্রায়ই কলঙ্কিত ও দোষী সাব্যস্ত হয় এবং তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, যা তাদের সামাজিক জীবনে নানা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যখন নারীরা তাদের পেশাগত জীবনের জন্য অনলাইন স্পেসের উপর নির্ভর করে, তখন প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা তাদের আর্থিক সুযোগ এবং সম্পদের প্রবেশের উপরও গুরুতর প্রভাব ফেলে।

এছাড়াও, প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা অনলাইনে নারীদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ থামিয়ে দেয় এবং জনসাধারণের ও রাজনৈতিক জীবনে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এবং নেতৃত্বের ভূমিকায় তাদের অংশগ্রহণ হ্রাস করে। ফলস্বরূপ, প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা পিতৃতান্ত্রিক ভূমিকা, নিয়ম এবং কাঠামোকে শক্তিশালী করে; জেন্ডার সমতা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

সবশেষে প্রযুক্তির সহায়তায় সংঘটিত জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। সরকার, পেশাজীবী সংগঠন, যুব সংগঠন, টেকনোলজি কোম্পানী, গণমাধ্যম, বিটিআরসি এবং ব্যক্তিপর্যায়ে নিজেদের অবস্থান থেকে এই সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন অংশগ্রহণকারীবৃন্দ।

উল্লেখ্য, বিএনএনআরসি'র কর্মপ্রচেষ্টা হলো গণমাধ্যমের দ্রুত পরিবর্তনশীল বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ-সুবিধাসমূহ বিবেচনায় রেখে গণমাধ্যমের জ্ঞানভিত্তিক ও চলমান ইস্যু তথা উভয় বিষয়ে গণমাধ্যমের উন্নয়ন। বিএনএনআরসি নলেজ-ড্রাইভেন মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট-এর ভূমিকায় আঞ্চলিক, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করে থাকে। এটি জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি ও জাতিসংঘের ইকোনোমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল-এর বিশেষ পরামর্শক মর্যাদাপ্রাপ্ত সংস্থা এবং জাতিসংঘের ডব্লিউএসআইএস পুরস্কার-২০১৬, ২০১৭, ২০১৯, ২০২০,২০২১ এবং ২০২৩-এর বিজয়ী এবং চ্যাম্পিয়ন।

(এনআরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test