E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

গ্রাম পুলিশের পরিবারে দু’দফা হামলা, দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৬ ২১:৪৬:০৫
গ্রাম পুলিশের পরিবারে দু’দফা হামলা, দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : ছেলে জুয়েলের বিরুদ্ধে চুরির অপবাদ দিয়ে কেন্দুয়া উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নের সাধার গ্রামের গ্রাম পুলিশ আক্কাছ মিয়াসহ পরিবারের সদস্যদের উপর দু’দফা সন্ত্রাসী হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

হামলায় গ্রাম পুলিশ আক্কাছ, তার স্ত্রী কল্পনা আক্তার, ছেলে সোহেল, জুয়েল, সোকেল, কন্যা আসমা, সালমা, নাজমা ও শাশুড়ী হাজেরা আক্তারসহ ৯ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলা চালানোর সময় আক্কাছের বাড়ির পাশে একটি মনোহারী দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এতে ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে দাবি করা হচ্ছে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে কেন্দুয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় সাধার গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও এ ঘটনায় রোববার পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। নারী পুরুষসহ পরিবারের সকল সদস্যদের উপর অর্তকিতে হামলা, দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় এলাকার সকল মহলে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।

১৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে ময়মনসিংহের গৌরিপুর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের পল্ডীপাড়া গ্রামের বাবুল মিয়ার বাড়ির প্রাঙ্গনে একটি মনোহারী দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। চুরির সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে প¦ার্শবর্তী কাওড়া গ্রামের দুই যুবককে আটক করে দোকানের মালিক ও অন্যান্য লোকজন। সহনাটি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পল্ডীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নিজামদ্দিন জানান, দুই যুবক জনতার হাতে আটক হওয়ার পর তারা জানায়, চুরির সাথে গ্রাম পুলিশ আক্কাছের ছেলে জুয়েল জড়িত ছিল।

এ ঘটনায় গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে পরদিন সোমবার সকালে গ্রাম পুলিশ আক্কাছের নিকট বিচার প্রার্থী হলে আক্কাছ এ অভিযোগ আমলে না নিয়ে উল্টো তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে। পরে পল্ডীপাড়া গ্রামের লোকজন আক্কাছের আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে কিলঘুষি ও টেনেহিচড়ে লাঞ্চিত করে।

তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার সকালে ইউপি সদস্য নিজামুদ্দিনের চাচা সবুজ মিয়া গ্রাম পুলিশের বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে বাইসাইকেল নিয়ে ভূঞার বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় গ্রাম পুলিশ আক্কাছসহ তার ছেলে মেয়েরা সবুজ মিয়ার উপর হামলা চালায়। হামলায় আহত সবুজ মিয়াকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয় লোকজন।

এ খবর ছড়িয়ে পরলে পল্ডীপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য নিজামদ্দিন সহ তাদের গোষ্টির অর্ধশতাধিক লোক লাঠি ও বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্কাছ ও তার পরিবারের সকল সদস্যের উপর হামলা চালায়। হামলায় আক্কাছ মাথায় গুরুত্বর জখম হয়। এছাড়া স্ত্রী, কন্যা ও ছেলেদেকেও বেধড়ক মারপিট করা হয়।

গ্রাম পুলিশ আক্কাছ অভিযোগ করে বলেন, আমাকে ও আমার ছেলেদের উপর হামলা চালিয়ে গুরুত্বর আহত করেছে। কিন্তু আমার বৃদ্ধা শাশুড়ী, স্ত্রী ও তিন কন্যাকে বেধড়ক মারপিট সহ কন্যাদের শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটনো হয়েছে। আমি গ্রাম পুলিশের চাকুরি করে মানুষের সেবা ও নিরাপত্তা দেই। কিন্তু আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে আমিসহ পরিবারের সকল সদস্যদের উপর যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে এতে আমরা ভীত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। আমার ছেলে কোন দিনই চুরির সাথে জড়িত না। তবে মাঝে মধ্যে সঙ্গী সাথীদের সাথে গাজা সেবন করে।

ইউপি সদস্য নিজামদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, গ্রাম পুলিশ আক্কাছের সাথে আমাদের কোন পূর্ব শত্রুতা নেই। তার ছেলে জুয়েল নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে এবং মাদক ব্যবসাসহ চুরির সাথেও জড়িত। এই অভিযোগ জানানোর পর আক্কাছ যেভাবে উত্তেজিত হয়ে আমাদের গ্রামের ব্যক্তিদের সাথে যে খারাপ আচরণ করেছে সেই জন্য গ্রামের কতিপয় মানুষ তাকে কিলঘুষি মেরেছে এবং টানাহেছড়া করেছে।

পরদিন মঙ্গলবার আমার চাচা কাঠ ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বাইসাইকেল যোগে তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে ভূঞার বাজার যাবার সময় আমার চাচার উপর হামলা চালানো হয়। এতে আমার চাচার একটি পা এবং একটি হাত ভেঙ্গে গেছে। এ ঘটনা জানার পর আমাদের গোষ্টির অর্ধ শতাধিক লোক আক্কাছের পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছে। এতে তার স্ত্রী, ছেলে, কন্যা আহত হয়েছে।

রবিবার দুপুরে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উত্তেজিত লোকজন হামলা চালিয়েছে একথা সত্য। কিন্তু আমি তাদেরকে সামলাতে পারিনি বলে আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

তিনি দাবি করে বলেন, আক্কাছ সহ তার ছেলে মেয়েদের হামলায় তার চাচা সবুজ মিয়া, আব্দুল মালেক, আরশ মিয়া, আবুল হাশেমসহ আরও অনেকেই আহত হয়েছেন। তার নিজেরও একটি আঙ্গুলও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।

এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দুয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ( এসআই) কামাল হোসেন জানান, খবর পেয়ে আমি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। চুরির অভিযোগ তুলে গ্রাম পুলিশের পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালানো হয়েছে, দোকান পাটও ভাংচুর করা হয়েছে সত্য। তবে তাদের হামলায় প্রতিপক্ষেরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এখনও মামলা বা কেউ গ্রেফতার হয়নি।

(এসবিএস/এএস/১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৩ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test