E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

ফরিদপুরে কৃষকদলের ১১ নেতাকর্মীর ওপর হামলা, এলাকায় আতঙ্ক কাটেনি

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৪ ১৪:১৩:৩২
ফরিদপুরে কৃষকদলের ১১ নেতাকর্মীর ওপর হামলা, এলাকায় আতঙ্ক কাটেনি

রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরে বাহিরদিয়া নামক স্থানে মহানগর কৃষকদলের ১১ নেতাকর্মীর ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে গত ৪ ফেব্রুয়ারি। ওই ঘটনায় মহাবনগর কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম জহির, ফরিদপুর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কৃষকদলের সভাপতি মো. জাহিদ শেখ (৪৩), স্থানীয় কৃষকদল নেতা মো. জাফর আলী শেখ (৪৮) ও মহানগর কৃষকদল নেতা তানভীর আফসান চয়ন সহ মোট ৬ জন নেতাকর্মী আহত হয়। ওই ঘটনার ১০ দিন পার হলেও এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি এখনও।

ফরিদপুর মহানগর কৃষকদল যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ শেখ (৩৬) এর নেতৃত্বে হওয়া ওই হামলায় তাঁর সাথে আরো যারা অংশ নেওয়ার কথা লিখিতভাবে উল্লেখ করেছেন হামলার শিকার নেতাকর্মীরা, তারা হলেন- ফরিদের ভাই শাহিন শেখ (৩৩) ও জাহিদ শেখ (৪৫) পিতা- মানু শেখ, হিলু শেখ (৫০) পিতা- মৃত দরা শেখ, সর্ব সাং বৈঠাখালি এবং প্রণব পাল (৩৫) পিতা পরান পাল সাং বাহিরদিয়া, ইউপি- মাচ্চর, সর্ব থানা কোতয়ালি, জেলা ফরিদপুর সহ আরও অজ্ঞাতনামা ২০ জন। কৃষকদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা তাৎক্ষণিক উদ্বেগ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বাবুল। পরবর্তীতে তাঁর নির্দেশে ফরিদপুর মহানগর কৃষকদলের দুই নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয় কৃষকদল। যাতে, হামলাকারী মো. ফরিদ শেখকে ফরিদপুর মহানগর কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদসহ দলীয় সকল পদ পদবী থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে দলটি এবং একই সাথে ফরিদ শেখদের হামলার শিকার হওয়া ফরিদপুর মহানগর কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম জহিরের চলমান সাংগঠনিক পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। ওই হামলার ঘটনায় ৩ নং ওয়ার্ড কৃষকদের সভাপতি জাহিদ শেখ ও কৃষকদল নেতা জাফর আলী শেখের শরীরে কোপ লাগলে তাঁরা মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হন।

এ বিষয়ে কৃষকদলনেতা চয়ন ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয় গিয়ে এসপি ও ফরিদপুর কোতয়ালি থানার গিয়ে ওসি বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে তাঁরা সংগঠনটির উপরস্থ নেতাবৃন্দের সাথে কথা বলেছেন, নেতৃবৃন্দ সাংগঠনিকভাবে তা সমাধান করবেন বলে পুলিশকে আশ্বাস দিয়েছেন। এ বিষয়ে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদ উজ্জামান জানান, একই সংগঠনের দুই গ্রুপের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, ওই দলেয় নেতৃবৃন্দ এসব সাংগঠনিকভাবে সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন। এক পক্ষের মামলা নিলে অপরপক্ষের মামলাও নিতে হবে।' ওসি আসাদ আরো জানান, তাঁদের দলীয় সমস্যা তাঁরা নিজেরাই যদি সমাধানের দায়িত্ব নেন, সেক্ষেত্রে পুলিশি ঝামেলাও কমে যায়। তবে ওই ঘটনার বিষয়ে থানায় দেওয়া অভিযোগপত্রগুলো জমা রাখা হয়েছে এবং পুলিশ ওই ঘটনার পর স্থানীয় জনগণ ও উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেছেন। একালাটিতে ওই হামলাকে কেন্দ্র করে আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে পুলিশ বলেও জানান ওসি আসাদ উজ্জামান।

এ বিষয়ে ফরিদপুর মহানগর কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহিরকে ফোন করা হলে তিনি জানান, 'আমি ওই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরপরই আমার নেতা কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল ভাইকে জানিয়েছি। তাঁর প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রয়েছে। তাঁর দিক নির্দেশনায় পথ চলছি। সংগঠন তদন্ত করে যে সিদ্ধান্ত নিবে, সেটিই হবে। তাই ওসব বিষয়ে আমি আর কোন মন্তব্য করতে চাই না।'

এদিকে, নেতাকর্মীদের ওপর হামলার সময় হামলাকারীরা বিভিন্ন ধরনের দেশিও অস্ত্র যেমন- লাঠি, রাম দা, ছ্যান দা, ট্যাটা ও চাপাতি ব্যবহার করেছেন বলে ওই অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন কৃষকদল নেতা চয়ন। হামলার সময় চয়ন ও তাঁর সঙ্গীরা প্রাণভয়ে তাঁদের একটি প্রাইভেটকার ও পাঁচটি মটর সাইকেল ফেলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে দৌড়ে দুরে সরে গেলে, তাঁদের ফেলে রাখা গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভেঙে ফেলেন হামলাকারী ফরিদ শেখ ও তার বাহিনী বলেও উল্লেখ করে চয়ন। তিনি বলেন, ওসবের বেশির ভাগ উদ্ধার করলেও তা ব্যবহারের অযোগ্য করে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ইতিমধ্যে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেও তা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় থানায় ও এসপি অফিসে এসে অভিযোগ করেছেন বলে জানান চয়ন। তবে বিষয়টি সমাধান না হলে আবারও তাঁদের ওপর হামলা হতে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন চয়ন সহ আরো বেশ কিছু নেতাকর্মী। এছাড়া ওই হামলায় একাধিক খবর প্রকাশিত হলেও তা পক্ষপাতমূলক হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন উভয়পক্ষ।

এদিকে, মহানগর কৃষকদল সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহিদের গাড়ি বহরে হামলার কথা শিকার করে ফরিদ শেখ বলেন, 'আসলে একটি মেয়েলি ও মোবাইল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ওই ঘটনার কয়েকদিন আগে আমার দুই কর্মীকে আমার সামনে মারধর করে। পরবর্তীতে সময়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওরা বাহিরদিয়া দিয়ে বাসায় ফেরার সময় আবারও আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে, তখন আমার কয়েক ভাই ও স্থানীয় লোকজন মনে করে আমার ওপর হামলা হয়েছে তাই ওরা লাঠি, রড, বা যে যা হাতের কাছে পেয়েছে তাই দিয়ে আক্রমন করেন। এসময় কয়েক জনের কোপ লাগে।' ওই হামলার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে ফরিদ শেখকে রামদা হাতে নিয়ে আক্রমন করতে দেখা গেছে এবং তার সহযোগীদের কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদ শেখ জানান, 'হ্যাঁ আমার হাতে একটা ছ্যান ছিলো, সেটা আমি কারো কাছেই অস্বীকার করিনি আপনার কাছেও করবো না। বলতে পারেন আমি আত্মরক্ষার জন্যই তা নিয়েছিলাম।' ওই হামলা কি আপনার দুই কর্মীকে মারধরের প্রতিশোধ ছিলো কিনা? -এমন এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদ শেখ মুচকি হেসে তা এরিয়ে গিয়ে আরো জানান, 'আমরা উভয়ই সাংগঠনিকভাবে শাস্তি আওতায় আছি, আশা করছি সর ঠিক হয়ে যাবে।'

(আরআর/এএস/১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১২ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test