E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

কারামুক্ত বিএনপি নেতাদের সংবর্ধনা সভায় ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১১ ১৯:২২:২২
কারামুক্ত বিএনপি নেতাদের সংবর্ধনা সভায় ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : পাবনার ঈশ্বরদী স্টেশনে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাসপ্রাপ্ত ৮ জন বিএনপি নেতা কারামুক্ত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার কারামুক্ত নেতাদের জন্য আয়োজন করা হয় স্মরণকালের রাজকীয় সংবর্ধনা। বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা কমিটির আহব্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর নের্তৃত্বে রাজশাহী কারাগার হতে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে কারামুক্ত নেতাদের নিয়ে আসা হয় আলহাজ্ব হাইস্কুল মাঠে। সেখানে আগে থেকেই হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেত ছিল। সমাবেত নেতা-কর্মীরা কারামুক্ত নেতাদের নিয়ে শোভাযাত্রা করে পুরাতন বাসষ্ট্যান্ডের গণসংবর্ধনাস্থলে নিয়ে আসেন। এসময় ফুলে ফুলে গোটা সড়ক ছেয়ে যায়। নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ভীড়ে শহরের আলহাজ্ব মোড় হতে রেলগেট এবং শহরে বাজার এলাকার চাঁদআলীর মোড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ৫ জন ও সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ৩ জন রাজশাহী ও পাবনা কারগার থেকে নেতারা মুক্তি লাভ করেন।

কারামুক্ত নেতারা হলেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সাবেক পৌরসভার মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি একেএম আক্তারুজ্জামান, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান শাহীন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ভিপি রেজাউল করিম শাহীন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম মোস্তফা শ্যামল ও বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম অটল। বুধবার ঢাকা কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্ত হবেন সাবেক ছাত্রদল নেতা মাহাবুবুর রহমান পলাশ।

গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাবনা বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা কমিটির আহব্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব। বিশেষ অতিথি ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র ও এই মামলার অন্যতম আইনজীবি জামিল আক্তার এলাহী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদী বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মীকে সাড়ে ৫ বছর কারাবন্দি করে রেখেছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। সেদিনের ঘটনায় একটি মানুষও আহত হয়নি। অথচ ৯ জনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল। যা বিচার ব্যবস্থায় পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। অন্যায়ভাবে বিএনপি’র নেতাদের ফাঁসিসহ বিভিন্ন দন্ডের দন্ডিত করা হয়েছিল। যে বিচারক রায় দিয়েছিলেন, তাকে বুক পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে জনতার আদালতে বিচার করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আজ আওয়ামী লীগ মাইনাস হয়েছে। এখনও বিএনপি’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। যারাই ষড়যন্ত্র করবে তারাই মাইনাস হয়ে যাবে। যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন আমরা কারামুক্ত বাবলু ও পিন্টুসহ সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঈশ্বরদীর মাটিতে বিএনপি’র দূর্গ গড়ে তুলবো।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র ও এই মামলার অন্যতম আইনজীবি জামিল আক্তার এলাহী বলেন, আমাদের নয়নের মণি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। তাঁরই প্রচেষ্টায় সাড়ে ৫ বছর অকান্ত পরিশ্রম করে আমরা এদের কারামুক্ত করতে পেরেছি। আজকে আমরা সকলেই তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ।

কারামুক্ত সাবেক মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু মহান আল্লাহপাককে স্মরণ করে বলেন, ঈশ্বরদীবাসীর দোয়ায় আজ ফিরে আসতে পেরেছি। দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে বাবলু আরো বলেন সুযোগ্য উত্তরসূরী তারেক রহমান প্রথম থেকেই এই মামলার দায়িত্ব নিয়ে দেখভাল করেছেন। তাই সকলের উচিত তাঁর নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা। যে কারণে আজ আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছি। নব্বই সালে আমরা যেমন ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, এই সমাবেশ থেকে ঘোষণা দিতে চাই আমরা ঐক্রবদ্ধ হয়েছি এবং ঐক্যবদ্ধ থাকবো। আগামী নির্বাচনে কে নমিনেশন পাবে জানি না। তবে যেই নমিনেশন পাবে আমরা দলের জন্য, দেশের জন্য ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করবো।

পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু বলেন, গতকালের মঞ্চ থেকে ঘোষণা দিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আজ রাজশাহীতে কারামুক্ত নেতাদের আনতে গিয়েছিলাম। নব্বই সাল থেকে গ্রুপিংয়ের রাজনীতি চলছিল। কিন্তু আজ সকল ষড়যন্ত্র ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছি। আমরা সকলেই শহীদ জিয়ার সৈনিক। যত সমস্যই হোক না কেন, আমরা একে অপরে ঐক্যবদ্ধ।

সাবেক সভাপতি একেএম আক্তারুজ্জামান বলেন, আমরা সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুন্দর ঈশ্বরদী গড়তে চাই। আমরা দ্বন্দ্ব চাই না। আমরা হাবিব-বাবলু-পিন্টুর ঐক্য চাই।

উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম শাহীন বলেন, ঈশ্বরদীর বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য স্বৈরাচার হাসিনা মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায় দিয়েছিল। কিন্তু আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করে তারা বিএনপিকে নিশ্চিহ্ণ করতে পারেনি। হাসিনার মতো প্রতিহিংসা পরায়ণ না হওয়ার আহব্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রতিযোগিতা থাকতে পারে কিন্তু আমাদের মধ্যে কোন দ্বিধাবিভক্তি নেই।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপি নেতা ও সাবেক কমিশনার শামসুল আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান শাহীন। সঞ্চালনা করেন কারামুক্ত ইসলাম হোসেন জুুয়েল ও আনোয়ার হোসেন জনি।

প্রসংগত: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উত্তরাঞ্চলে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে ট্রেনে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। ট্রেনটি পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ঢোকার সময় ট্রেনবহর লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এই মামলায় নিম্ন আদালত ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৩ জনকে ১০ বছরের কারাদন্ডের সাজা দেয়। এদের মধ্যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৯ জন ছাড়া বাকি সবাই প্রায় দুই মাস আগে হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান। পরে ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মৃত্যুদন্ডাপ্রাপ্ত ৯ জনসহ ৪৭ জনের খালাসের রায় ঘোষণা করেন। এরপর মৃত্যুদন্ডাপ্রাপ্তদের খালাসের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

(এসকেকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test